শাহীন হাসান ও রাইসুল ইসলাম অভি, বরিশাল ॥ বরিশাল সদর রোডের জেলখানার মোড় থেকে কাকলী সিনেমা হলের মোড় পর্যন্ত হাজার-হাজার জনতার উপস্থিতিতে বরিশালে বিএনপি-জামাত সহ সমমনা দলগুলোর গনমিছিল কর্মসূচি পালিত হয়েছে গতকাল। তবে অভ্যন্তরীন ক্রোন্দলের কারনে জমায়াত-বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর গন-মিছিলে যোগ দেয়নি এখানকার জেলা বিএনপির কামাল পন্থীরা। উপস্থিত জামাত ইসলামি ছাত্র ইউনিয়ন (সিপিবি) সেলিম গ্রুপ ও সমমনা দলগুলোর অনেক নেতৃবৃন্দ বিষয়টি অনাকাঙ্খিত বলে মন্তব্য করেছেন।
জেলা বিএনপির সভাপতি আহসান হাবিব কামালের নেতৃত্বে কামাল পন্থীরা পৃথক গন-মিছিল পালন করেছে বিকেল পৌনে ৪টায়। মিছিল পূর্ব সমাবেশে জামায়াত নেতা নিজামীর ছবি প্রদর্শন করায় জাহিদ নামের ১ শিবির কর্মীকে আটক করেছে কোতয়ালি থানা পুলিশ। এ ছাড়া বিকেল পৌনে ৪টায় আয়োজিত কামাল পন্থীদের গনমিছিল থেকে একটি এলজিডি ও ১রাউন্ডগুলি সহ র্যাব সদস্যরা কামালপন্থী ১ ছাত্র দল ক্যাডারকে আটক করেছে। নগরীর কসাই বাড়ি এলাকার আটককৃত এই ছাত্রদল ক্যাডারের নাম কসাই রনি। র্যাবের মেজর রাশেদুজ্জামান তাকে আটক করে।
পৃথক কর্মসূচির বিষয়ে বরিশাল মহানগরী জমাত ইসলামের আমীল এ্যাড মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল বলেন, পৃথক কর্মসূচির বিষয়ে আসলে আমি কোন মন্তব্য করতে পারব না। এটা বিএনপির অভ্যন্তরীন বিষয়।
টেলিসংলাপে এ্যাড মজিবর রহমান সরোয়ার এ বিষয়ে জানান, যেহেতু এক এক করে সবকিছুই চার দলীয় জোট ও সমমনা দলগুলোর সমন্বয়ে হচ্ছে অতএব কামাল পন্থীরাও আসবে। হয়ত তা সময় সাপেক্ষ। কারন তারাও যেহেতু প্রকৃত অর্থে বেএনপি মনা। দলের বাইরে তাদের অন্যকোন পরিচয় নেই। তাছাড়া সাংসদ সরোয়ার কামাল পন্থীদের উদ্দেশ্য করে আরো বলেন, দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকরে নির্বাচন করায় এক সময় আহসান হাবিব কামালকে বহিস্কার করা হয়েছিল। প্রথম থেকেই কামাল পন্থীরা পৃথকভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করছে। যা দলের জন্য প্রভাব বিস্তার করে মন্তব্য করে সরোয়ার বলেন, আশাকরি খুব শীঘ্রই বরিশাল বিএনপি এক শিবিরে একত্রিত হবে। ইতিমধ্যে আপনি জানেন বিএনপি নেতা এবায়দুল হক চান, মহসিন মন্টু সহ একাধিক বিদ্রোহীরা তাদের ভূল বুঝতে পেরে আমাদের সাথে একত্রে দলের প্রত্যেক কর্মকান্ডে স্বক্রিয় ভূমিকা রাখছে। তবে গতকালের গন-মিছিলে সাংসদ মজিবর রহমান সরোয়ার একত্রে কর্মসূচি পালনের জন্য কামাল পন্থীদের আমন্ত্রন দেননি বলিয়ে জানিয়েছেন এই প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের উত্তরে।
ওদিকে বিএনপির গন মিছিলটি নগরীতে বরিশাল-৫ সদর আসনের সাংসদ মজিবর রহমান সরোয়ার ও মহানগর জামাতের আমীর এ্যড মোয়াজ্জেম হোসেন হেলালের নেতৃত্বে হাজার-হাজার লোক নিয়ে গীর্জা মহল্লা, চক-বাজার, স্বরোড, নাজিরের পোল হয়ে অশ্বিনী কুমার টাউন হল চত্বরে এসে জমাত হয়।
এদিকে সমাবেশে বক্তব্য শেষ করে গনমিছিলে যোগ দেননি হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জের এমপি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ, উত্তর জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক নূরে আলম রাজু, রাহাত সহ তার বাহিনীর ১৫/২০জন। কিন্তু গন-মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষীন শেষে টাউন হল চত্ত্বরে ফিরলে এমপি ফরহাদ ও তার বাহিনীর কয়েক সদস্যের ভাবখানা ছিল মিছিলে অংশগ্রহনের ন্যায়। মিছিল শেষের পরপরই সোমবার পুলিশের গুলিতে নিহত ৪জনের রুহের মাগফিরাত কামনা করে গন মোনাজাত করা হয়। গন-মিছিল সকাল ১০টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শুরু হয় সাড়ে ১০টায়। ১১টা ১৩ মিনিটে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভ সমাবেশে সাংসদ মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, শেখ হাসিনা ভয় পেয়ে গনমিছিলকে বাধা দেয়ার চেষ্টায় প্রশাষনকে দিয়ে ১৪৪ ধারা জারি করিয়েছে। ১৪৪ ধারা জারি করে জনগনকে দাবিয়ে রাখা যাবে না মন্তব্যে করে সরোয়ার বলেন, ক্ষমতায় আসার পূর্বে বলেছিলেন ১০ টাকায় চাল খাওয়াবেন, ঘরে-ঘরে ১জনকে চাকুরি দেয়ার ব্যাবস্থা করবেন। কোথায় সেই ১০টাকার চাল, কোথায় ঘরে ঘরে চাকুরি? দেশের মানুষকে সীমান্তের কাটা তারে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তিস্তার চুক্তি, পানি চুক্তি না করে টিপাইমুখ বাধ দিয়ে দেশকে মরুভূমি করতে চাইছে সরকার। সরোয়ার স্পষ্ট হুশিয়ারি উচ্চারন করে বলেন, নির্দলীয় তত্ত্ববধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন এদেশের মাটিতে হবে না। কারফিউ জারি করে সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেনা। তারা নিজেদের পতন আসন্ন করেছেন উল্লেখ করে আরও বলেন, খালেদার নেতেৃত্বে সমস্ত ষড়যন্ত্রের দাত ভাঙ্গা জবাব দিতে হবে।
জামাতের আমীর মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়টি নিজে মিমাংসা করেছেন। তদুপরি পিতার আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকার রানৈতিক প্রতিদ্ধন্ডিদের হত্যার ষড়যন্ত্রে মেতেছে। দেশের মানুষ তা হতে দেবে না। নিরব দূর্ভিক্ষ থেকে মুক্তিপেতে ১২ মার্চ পালিত হবে মহা সমাবেশে। এতে যোগ দিতে বিএনপি-জামাত ও সমমনা দেলগুলোর প্রতি আহবান জানিয়ে হেলাল বলেন, অনেক বড় স্বৈরাচাররা দেশে টিকে থাকতে পারে নাই। অতএব আপনার টিকে থাকার দিনও শেষ। নির্দলীয় তত্ত্ববধায়ক সরাকারের অধিনে আগামি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবীতে এবং দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি, টিপাইমুখ বাধ ও গুম হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত গনমিছিলের সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাংসদ মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ, বাকেরগঞ্জ এমপি আবুল হোসেন খান, হিজলার সাবেক এমপি মোশাররফ হোসেন মঙ্গু, উত্তর জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, জমায়াত ইসলামীর পশ্চিম জেলা আমীর অধ্যপক হাবীবুর রহমান, জেলা বিএনপির কামরুজ্জামান ফারুক, জেলা জামাতের আমীর অধ্যাপক আব্দুজ জাব্বার, মহানগর বিএনপি সাধারন সম্পাদক কামরুজ্জামান শাহীন, সাবেক বিএনপি নেতা এবায়দুল হক চান, এ্যড আলী হায়দার বাবুল প্রমূখ। সকাল সাড়ে ১০টায় সমাবেশের শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তেলোয়াত করেন হাফেজ ছানাউল্লাহ।