ডেটলাইন ১২ মার্চ – হার্ডলাইনে যেতে চায়না বিএনপি – নেতাকর্মীদের চাঙ্গা ও সরকারকে চাপে রাখাই কৌশল

খোন্দকার কাওছার হোসেন ॥ আপাতত সরকারের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে যেতে চায়না বিএনপি। এমনকি সরকার হার্ডলাইনে গেলেও না। সরকার হার্ড লাইনে গেলে রাজনৈতিক বিভিন্ন কৌশলের খেলা খেলতে পারে বিএনপি। সে কৌশলে সরকারকে ধরাশায়ি করাই তাদের টার্গেট। কৌশলের অংশ হিসেবে আগামী ১২ মার্চ ৪ দল ও সমমনাদের চল চল, ঢাকা চলো কর্মসূচি ও সমাবেশে পরিবর্তন আনতে পারে দলটি। সে ক্ষেত্রে এ কর্মসূচি ২/১ দিন এগিয়ে বা পিছিয়ে যেতে পারে। যেমনটি করেছিল গত ২৯ জানুয়ারির গণমিছিলের কর্মসূচি পরিবর্তন করে ৩০ জানুয়ারি করে। বিএনপি মনে করে, এ প্রক্রিয়ায় বিএনপিই লাভবান হয়েছে। ধরাশায়ি হয়েছে সরকার।

বিএনপি নেতাদের মতে, ১২ মার্চের কর্মসূচি মূলত নেতাকর্মীদের চাঙ্গা ও সরকারকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সরকার পতন এ কর্মসূচির লক্ষ্য নয়। কিন্তু সরকার যদি এ কর্মসূচিতে হার্ড লাইনে যায়, কিংবা রাজনৈতিক সিষ্টাচারের মাত্রা ছাড়িয়ে যায় সেক্ষেত্রে বাধ্য হয়ে তাদের হার্ডলাইনে যেতে হতে পারে। তা নির্ভর করবে সরকারের কর্মকান্ড ও কর্মসূচিতে জনগণের অংশগ্রহনের ওপর।

তাদের মতে, জনগণ যদি ব্যাপক সাড়া দেয়, এবং সরকার যদি মারমুখী হয় তখনই কেবল বিএনপি হার্ডলাইনে যাওয়ার চিন্তা করতে পারে। সেখানেও তারা সচেতন থাকবে তৃতীয় কোন পক্ষ যেন সুযোগ নিতে না পারে। কারণ তারা চায়, সরকার তার মেয়াদ পূর্ণ করুক। যথাসময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের পরিবর্তন হোক। ১/১১ মার্কা কোনো অঘটন আর না ঘটুক। বিএনপির সিনিয়র একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত রোডমার্চ কর্মসূচিতে আপামর জনগণের ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন তারা। এ ছাড়া দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টিপাইমুখে বাঁধ, ভারতকে ট্রানজিটের নামে করিডোর, ঢাকা সিটি করপোরেশন বিভক্তসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বেশিরভাগ জনগণ বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচির সঙ্গে থাকবে।

এ মূল্যায়ন থেকেই চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলের নীতিনির্ধারকদের পাশাপাশি দল সমর্থক বুদ্ধিজীবী, বিভিন্ন পেশীজীবী নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও মতবিনিময় করেছেন। তারা বিএনপি হাইকমান্ডকে এবার কঠোর কর্মসূচি দেয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, মহাজোট সরকার সহজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করতে চাইবে না। রাজধানী ঢাকাকে অচল করে দিয়েই সরকারের কাছ থেকে এ দাবি আদায় করতে হবে।

বিএনপির লক্ষ্যÑআগামী ১২ মার্চ ঢাকায় লাখ লাখ লোকের সমাবেশ ঘটিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করতে সরকারকে বাধ্য করা, সরকারসহ প্রেশার গ্রুপকে দেখানো, দেশবাসী আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে চায়।

দলীয় সূত্রে আরো জানা গেছে, ১২ মার্চের সমাবেশ থেকে খালেদা জিয়া সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, রাজধানীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত পদযাত্রা কিংবা মানববন্ধন, ঢাকার বাইরে ৬টি বিভাগীয় শহরে মহাসমাবেশ, জেলায় জেলায় বিক্ষোভসহ নির্বাচন কমিশন, সচিবালয়, জাতীয় সংসদ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও।

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সম্ভাব্য এসব দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচির রূপরেখা প্রণয়নের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করেছেন। শিগগির দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ইস্যুভিত্তিক এসব আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি চূড়ান্ত হবে।

গত বৃহষ্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের এক সমাবেশে বিএনপি চেয়াপারসন ও ৪ দলীয় জোট নেত্রী খালেদা জিয়া ১২ মার্চের কর্মসূচি সম্পর্কে আগাম ধারণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আগামী ১২ মার্চ ঢাকায় ৪ দলীয় জোটের মহাসমাবেশের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারকে ‘ওয়ার্নিং’ দেয়া হবে।

তিনি বলেন, সরকারকে বলব-এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেয়া কিংবা পাল্টা কর্মসূচি দেয়ার চেষ্টা করবেন না। তা করা হলে আপনারা ভুল করবেন। ওই কর্মসূচি নিয়ে কোনো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সষ্টি হলে তার দায় সরকারকেই বহন করতে হবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভোরের কাগজকে বলেন, ব্যর্থ মহাজোট সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। স্বৈরাচার এরশাদকে নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসতে একতরফা নির্বাচনের নীলনকশা করছে। তবে তাদের এই স্বপ্ন পূরণ হবে না। কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করতে বাধ্য করবে জনগণ।

তিনি বলেন, ১২ মার্চের আমাদের সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। কিন্তু সরকার যদি এ কর্মসূচিতে বাধা দেয়, কিংবা রাজনৈতিক সিষ্টাচারের মাত্রা ছাড়িয়ে যায় সেক্ষেত্রে বাধ্য হয়ে তাদের হার্ডলাইনে যেতে হতে পারে। তা নির্ভর করবে সরকারের কর্মকা-ের ওপর।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আগামী ১২ মার্চ বিএনপির ঢাকা চলো কর্মসূচি বানচালে আওয়ামী লীগের হুমকি যত গর্জে তত বর্ষে না। এ সরকার জনসমর্থন শূণ্য হয়ে পড়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাই মানুষ দেখলেই গুলি করে তারা হত্যা করে। সে জন্যই সরকার বিএনপির গণমছিলে লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুরে গুলি করে মানুষ হত্যা করছে। আগামী ১২ মার্চের ঢাকা চলো কর্মসূচিতে জনগণ সরকারের গত ৩ বছরে দেশের স্বার্থবিরোধী কাজ প্রত্যাখ্যান করবে।

বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, আগামী ১২ মার্চ লাঠি অস্ত্র ছাড়াই শান্তির্পূর্ণ কর্মসূচি হবে। আওয়ামী লীগ যদি বাধা দেয়, তাহলে কিভাবে বাধা প্রতিহত করতে হয় তা আমাদের জানা আছে।