শীতে তুষার আবৃত সুইজারল্যান্ড যেন শিল্পীর আকা ছবি

আকন আজাদ, জুরিখ (সুইজারল্যান্ড) থেকে ॥ এটি গল্প নয় সত্য। প্রচন্ড শীতের প্রকোপে সুইজারল্যান্ডের সমস্ত পুকুর ও জলাশয় গূলো এখন বরফে পরিনত হয়েছে। মনে হচ্ছে খেলার মাঠ। এখন ও অনবরত তুষার পড়ছে। এ কারনে আনন্দে মেতে ওঠেছে বিভিন্ন বয়সের হাজার হাজার মানুষ। কনকনে শীতে তারা তুষার ও বরফের মধ্যে ছুটাছুটি শুরু করছে। কেউবা ইস্কি খেলায় (আইস স্কিং) ঘন্টায় ৫০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করছে। তুষার ও বরফ নিয়ে রকমারী খেলায় এখন ব্যস্ত সবাই। ক্যামেরায় ছবি তুলতে ব্যস্ত কেউ কেউ। নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাষ করা যায়না, এখানে কতটা তুষার পড়ছে এবং কিভাবে তা জমে বরফে পরিনত হচ্ছে।

সুইজারল্যান্ডের এই সময়টার তাপমাত্রা হিমাংকের ১৫ ডিগ্রী নীচে। বাহিরটাকে ডিপ ফ্রিজ মনে হয়। সুইজ নাগরিকদের অপেক্ষায় থাকতে হয় কখন শীত আসবে এবং তুষার পড়তে শুরু করবে। তাদের জন্য শীত মৌসূম নিয়ে অনাবিল আনন্দ। এ সময় ছেলে বুড়ো কেউ ঘরে বসে থাকতে চাননা। কাজের ফাকে তুষার ও বরফ নিয়ে তারা খেলাধুলা করে সময় কাটান। পাহাড় পর্বত মাঠ -ঘাট সবকিছুই এখন তুষার আবৃত। মনে হয় এগুলো তুষারের তৈরী পাহাড় পর্বত। গাছপালা গুলো সবুজ রং হারিয়ে ফেলেছে। গাছ গুলোর দিকে তাকালে মনে হবে সাদা ফুলে আবৃত কোন শিল্পীর তুলিতে আকা ছবি। লোকজনের বসবাসের ঘর-বাড়ী, অফিস আদালত গুলো তুষারে ঢেকে গেছে। মাঝে মধ্যে একবারেই ঢেকে যায়, রাস্তাঘাট থাকে তুষার আবৃত। কখনো কখনো যান-বাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। তবে রাস্তাঘাট পরিষ্কারের কাজে নিয়োজিত কর্মীরা সর্বদা তৎপর থাকার কারনে লোকজনদের তেমন সমস্যায় পড়তে হয়না।

শীত মৌসূমে এখানকার বাহিরের ক্ষেত খামারে কোন চাষাবাদ হয়না। শুধু মাত্র ইনডোর পদ্ধতিতে শাক সবজি ও কিছু ফলমুলের চাষাবাদ হয়। তবে তা খুবই ব্যয় বহুল। আমি (ছবিতে) যেখানে  দাড়িয়ে আছি এটি একটি গভীর পুকুর। আমি আমার ২ কন্যাকে নিয়ে দাড়িয়ে আছি পুকুরটির ঠিক মাঝখানে। তবে চেনার জো নেই, এটি পুকুর না খেলার মাঠ। পুকুরটির নাম ক্যাৎছেন জি। প্রায় ৩ কিলোমিটার লম্বা ৫০০মিটার প্রস্থের এই পুকুরটি সুইজারল্যান্ডের প্রচীন শহর জুরিখের উত্তর পশ্চিম পার্শে অবস্থিত। এর পাশের শহরের নাম রেগেনস ডওরফ। পুকুরটির গভীরতা প্রায় ৫ মিটার হলে ও উপরি ভাগের ২ মিটার পানি জমে বরফ হয়ে গেছে। নভেম্বর মাসের শুরুতেই পুকুরের পানি জমতে শুরু করে। জানুয়ারীর শেষ দিকে উপরি ভাগ পুরো বরফ হয়।

মার্চের শেষদিকে পূনরায় বরফ গলতে শুরু করে। পানি স্বাভাবিক হয় এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে। তবে মজার কথা হলো পুকুরের উপরিভাগ বরফ হলেও নিচের পানি থাকে স্বাভাবিক, একারনে একটি মাছ ও মারা যায়না। লোকজন বরফ খুড়ে বড়শী দিয়ে পুকুর থেকে বড় বড় মাছ ধরে মজা পায়। তবে শীতের তীব্রতা যতই বাড়ুক না কেন এদেশের মানুষের কাজ কর্ম কিন্তু থেমে নেই। তাদের বাড়ীঘর, অফিস আদালত, কলকারখানা সহ সবখানেই রয়েছে শীত নিবারনের উন্নত  ব্যবস্থা। এমন কি যান বাহন গুলোতে ও রয়েছে হিটিং পদ্ধতি। যে কারনে এখানকার লোকজনকে শীতে  কষ্ট পেতে হয়না। তারা দ্রুততা ও সুনামের সাথে এগিয়ে চলছে। সর্বদা স্রেষ্ঠত্ব প্রমান করতে পেরেছে ইউরোপের কুইন বলে খ্যাত এ দেশটির মানুষ।