সংবাদ প্রকাশের পর অবশেষে গৌরনদীতে দুই পুলিশ অফিসারকে ক্লোজ

আফরোজা আক্তার কলি, গৌরনদী ॥ বরিশাল পুলিশের বিশেষ শাখায় (ডিএসবি) গৌরনদীতে কর্মরত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. রফিকুল ইসলাম ও (এএসআই) মো. শাহজালালের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহনের অভিযোগের প্রক্ষিতে গত রবিবার দৈনিক বিল্পবী বাংলাদেশে “ঘুষ না দিলে রিপোর্ট হয় না!” শিরনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা পেয়ে বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার গত মঙ্গলবার ওই পুলিশ অফিসারকে লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। তাদের পরিবতে গৌরনদীতে  উপপরিদর্শক (এসআই) মোশারফ হোসেনকে বদলি করা হয়েছে।

ভূক্তভোগী, সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিদেশগামী পাসপোর্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রত্যাশী আবেদনকারীকে নাম ঠিকানা সঠিক আছে কিনা, তার বিরুদ্ধে কোন মামলা আছে কিনা এ সংক্রান্ত পুলিশ রিপোর্ট সংগ্রহ করতে হয়। বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মানুষকে পুলিশ রিপোর্ট সংগ্রহ করতে গিয়ে হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাসপোর্ট পাওয়ার আবেদনকারীর দেয়া তথ্য তদন্ত পূর্বক রিপোর্ট প্রদান কাজে নিয়োজিত বরিশাল পুলিশের বিশেষ শাখায় (ডিএসবি) গৌরনদীতে কর্মরত সহকারী উপপরিদর্শক(এএসআই) মো. রফিকুল ইসলাম ও (এএসআই) মো. শাহজালাল প্রতিটি রিপোর্টের জন্য  পাঁচশত টাকা থেকে এক হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয়।  দাবিকৃত অর্থ পরিশোধ করা না হলে পুলিশ  রিপোর্ট প্রদানে নানান তাল বাহানাসহ রিপোর্ট প্রদান বিলম্বিত করে হয়রানী করা হয়। এমনকি মিথ্যা বিরুপ রিপোর্ট প্রদান করা হয়।

ভূক্তভোগী উপজেলার গেরাকুল গ্রামের ঝর্না বেগম, দিয়াশুর গ্রামের মো. খায়রুল ইসলাম, ভূরঘাটা গ্রামের মো. সোবাহানসহ অনেকেই  অভিযোগ করেন, দাবিকৃত অর্থ দিতে ব্যার্থ হলে সন্ত্রাসী, জঙ্গী, মামলার আসামি কিংবা রাষ্টদ্রোহী কাজে জড়িত ঘটনার সাথে জড়িয়ে বিরুপ রিপোর্ট প্রদান করা হয়।  তারা আরো জানান, উৎকোচ নেয়ার বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। পুলিশ রিপোর্টের জন্য  কর্মকর্তাদের (ডিএসবি) রেট ছিল দুইশ  টাকা বর্তমানে  এক হাজার টাকা। ধনী গরীবের তারতম্য ভেদে ও মিথ্যা অজুহাতে ঘুষের রেট ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার পর্যন্ত আদায় করা হয়।

গৌরনদীর গেরাকুল গ্রামের মৃত মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব সরদারের কন্যা গার্মেন্টস কর্মী ঝর্না অভিয়োগ করেন, পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য তিনি বরিশাল পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করেন। তদন্ত রিপোর্ট প্রদানের জন্য এএসআই শাহজালাল তার কাছে এক হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে বিরূপ রিপোর্ট প্রদান করার হুমকি দেন। পরে তিনি তাকে এক হাজার টাকা পরিশোধ করেন।

একই অভিযোগ করলেন কালকিনি উপজেলার দক্ষিন রমজানপুর গ্রামের আহসান হাবিব সিকদারের স্ত্রী গার্মেন্টস কর্মী ফরিদ বেগম।

গৌরনদী উপজেলার দিয়াশুর গ্রামের মো. খলিলুর রহমানের পুত্র ও গৌরনদী থানা মাদ্রাসার ছাত্র মো. খায়রুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, রিপোর্ট প্রদানের নামে আমার কাছে এক হাজার টাকা দাবি করা হয়। না দেয়ায় আমাকে জঙ্গীবাদের সাথে জড়ানোর ভয় দেখায়। পরে  টাকা পরিশোধ করতে আমি বাধ্য হয়েছি।  

ইল্লা গ্রামের  তুজুম সরদারের পুত্র সাদ্দাম সরদার অভিযোগ করে বলেন, জন্ম নিবন্ধনে আমার বয়স কম দেয়া হয়েছে। এ জন্য রিপোর্ট দেয়া হবে না। বরং মিথ্যা তথ্য দেয়ার জন্য আমার বিরুদ্ধে থানায় মামলা দেয়া হবে। এ ধরনের ভয় দেখিয়ে এএসআই রফিকুল ইসলাম আমার কাছ থেকে দুই হাজার দুই শত টাকা দাবি করে পরে এক হাজার দুইশত টাকা পরিশোধ করতে হয়। ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হয়রানী অভিযোগ করেন, ইল্লা গ্রামের হারুন সরদারের  পুত্র ইলিয়াস,  ভুরঘাটা গ্রামের বেল্লাল বয়াতির পুত্র সুমন বয়াতি, ভুরঘাটা বাজারের ব্যবসায়ী  সোবাহান মৃধা, কাসেমাবাদ গ্রামের শামীম সরদার, বাটাজোর ইউনিয়নের দক্ষিন পশ্চিম পাড়া গ্রামের বাচ্চু গোমস্তা, ছালমা আক্তার, গৌরনদী বন্দরের ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম। এ সংক্রান্ত সংবাদ গত রবিবার স্থানীয় বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। বরিশাল পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক (ডিআইও-১) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, রবিবার দৈনিক বিল্পবী বাংলাদেশে সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. রফিকুল ইসলাম ও (এএসআই) মো. শাহজালালের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহনের অভিযোগের বিষয় সংবাদ প্রকাশিত হয়।  প্রাথমিক তদন্তে সংবাদের সত্যতা মিলেছে। বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার দেবদাস ভট্রার্চায্যের নিদের্শে গত মঙ্গলবার ওই দুই পুলিশ অফিসারকে লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। গৌরনদীতে  উপপরিদর্শক (এসআই) মোশারফ হোসেনকে বদলি করা হয়েছে।