সুইজারল্যান্ডে ময়লা-আবর্জনা প্রদর্শনী – জুরিখ ট্রেন ষ্টেশনে প্রতিদিন দেড় টন ময়লা-আবর্জনা জমা হলে ও জনসাধারনের চোখে তা পরেনা

আকন আজাদ, জুরিখ (সুইজারল্যান্ড) থেকে ॥ সুইজারল্যান্ডের জুরিখ ট্রেন ষ্টেশনে গত ২৮ ফেব্র“য়ারি সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গীকে সমাপ্ত হয়েছে ময়লা আবর্জনা প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর আয়োজক হচ্ছে জুরিখ ট্রেন ষ্টেশন কর্তৃপক্ষ। এ প্রদর্শনীতে দেশী-বিদেশী হাজার হাজার মানুষ ভীড় জমায়। এ যেন অন্য রকমের আয়োজন। এদেশের বিভিন্ন সংবাদপত্র, ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়াসহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমগুলোতে সে দৃশ্য ফলাও করে প্রকাশ ও প্রচার করা হয়। জুরিখ ট্রেন ষ্টেশনে দৈনিক গড়ে দেড় টনের মতো ময়লা-আবর্জনা জমা হলে ও তা জনসাধারনের চোখে পরেনি। ষ্টেশন কর্তৃপক্ষ সবার অজান্তেই ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে ফেলেছে। যে কারনে ট্রেন ষ্টেশন সব সময় ছিলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। জনসাধারনকে দেখানোর জন্য ট্রেন ষ্টেশনের মধ্যে ৩ দিনের (৩ টন ৬’শ কেজি) ময়লা আবর্জনা বস্তা ভর্তি করে স্তুপ আকারে জমা করা হয়েছিলো। সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে ব্যস্ততম জুরিখ ট্রেন ষ্টেশনের যাত্রীরা এখান থেকে বিভিন্নস্থানে যাতায়াতের সময় ষ্টেশনের ডাষ্টবিনে হালকা ধরনের ময়লা ফেলে রাখেন। কিন্তু দৈনিক এতো ময়লা জমা হয় তা হয়তো ভাবেন না কেউ। ময়লা-আবর্জনার প্রদর্শণী দেখতে এসে অবাক হন সে দেশের নাগরিকেরা। অনেকেই মন্তব্য করে বলেন, এতো ময়লা, কিন্তু যায় কোথায়? সবচেয়ে আর্শ্চায্যের ঘটনা হলো ২০১১ সনে ওই ষ্টেশনে শুধুমাত্র পুরাতন কাগজ জমা হয়েছিল ৫ হাজার ৭’শ ৩০ মে.টন। এদেশের কোন নাগরিকই রাস্তা, পথ-ঘাটে ময়লা-আবর্জনা ফেলেন না। তারা ময়লা ফেলেন ডাষ্টবিনে। এমনকি ছোট শিশুরাও চকলেট খেয়ে কাছাকাছি কোন ডাষ্টবিন না পেলে খোসাটি পকেটে জমা রাখে। পরে তা ডাষ্টবিনে ফেলে দেয়া হয়। সুইজারল্যান্ডের ব্যস্ততম ও পুরাতন শহর হচ্ছে জুরিখ। ১ হাজার ৭’শ ২৯ বর্গ কিলোমিটার আয়াতনের জুরিখ শহরের লোকসংখ্যা হচ্ছে ১৩ লক্ষ ৯০ হাজার ১২৪ জন। এরমধ্যে প্রায় ২৫% লোক বিভিন্ন দেশের নাগরিক, বাকি ৭৫% স্থানীয়। এখানকার প্রধান ভাষা হচ্ছে জার্মানী। জুরিখ শহরের ৯৭.২০% লোক বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত বাকি ২.৮০% লোক বেকার। তবে শতভাগ লোকই শিক্ষিত। এরা দেশ ও জাতির কল্যানে সর্বদা লিপ্ত। তারা দেশকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করেন। তাদের দেশেরন্যায় আমাদের বাংলাদেশের শহর-বন্দর, রাস্তা-ঘাট ময়লা-আবর্জনা মুক্ত করতে হলে সরকারের পাশাপাশি সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে এ দেশটি আমাদের সকলের।

-লেখক সুইজ্যারল্যান্ডের নাগরিক। বাংলাদেশের বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার কটকস্থল গ্রামে তার জন্ম।