পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন ভুলে যান -প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেছেন, ‘পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন ভুলে যান। আর যে দেশের টাকা খান, সে দেশেই চলে যান।’ প্রধানমন্ত্রী আবারও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, এ দেশের মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই। বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের ঠাঁই হবে না।

আজ বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ১৪ দলের সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে বক্তব্য শুরু করে পৌনে ছয়টার দিকে বক্তব্য শেষ করেন।

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম এলাকার এই জনসভা বুধবার বেলা পৌনে ৩টায় কোরআন ও গীতা পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এর আগে বেলা পৌনে ২টার দিকে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট সভামঞ্চ থেকে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করে। নেতা-কর্মী-সমর্থকদের হর্ষধ্বনির মধ্যে শেখ হাসিনা সভামঞ্চে পৌঁছান বিকাল ৪টায়। মঞ্চে তিনি যেখানে বসেন, তা বুলেটপ্রুফ কাচ দিয়ে ঘেরা। তিনি বক্তব্য শুরু করেছেন বিকাল ৫টা ৭ মিনিটে। প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দিতে শুরু করলে ১৪ দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী করতালি দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান। সমাবেশের মূল মঞ্চ করা হয়েছে বায়তুল মোকারম মসজিদের দক্ষিণ গেটে। মঞ্চের পশ্চিমে ও দক্ষিণে ২০০ গজ এলাকা বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, নিরাপত্তার স্বার্থেই এটা করা হয়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল সম্ভব নয়
আদালতের রায়ে বাতিল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে যদি বিকল্প কোনো প্রস্তাব থাকে তবে জাতীয় সংসদে এসে তা উপস্থাপন করার জন্য বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানান আওয়ামী নেতারা।

লজ্জা হয় না, জনগনের টাকা মেরে খান?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনি ক্ষমতায় এসে কালো টাকা সাদা করেছেন। আপনার মন্ত্রীরা করেছে, ছেলেরা করেছে। বিদ্যুতের টাকা মেরে খেয়েছেন। লজ্জা হয় না, জনগনের টাকা মেরে খান?’

জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরস্কৃত করেছে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই মার্চ মাস আমাদের স্বাধীনতার মাস।’ বিএনপির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান হত্যা, ক্যুর মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। বিএনপির নেত্রী ক্ষমতায় এসে তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরস্কৃত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন, বিএনপি মুক্তিযুদ্ধে পরাজিতদের কাছে মাথা নত করে। এর জন্য তাদের লজ্জা হয় কি না, সে প্রশ্নও তিনি তোলেন।

বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য স্বাধীনতার মাস মার্চকে বেছে নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘মার্চ হলো আমাদের স্বাধীনতার মাস। আর এ মাসেই কি ‍না স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার আলবদরদের বাঁচানোর জন্য বিএনপি নেত্রী ‘চল চল ঢাকা চল’ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন, ‘এত দিন বলেছেন, আমরা নাকি দেশ বিক্রি করি। এখন থলের বিড়াল বের হয়ে গেছে। এত দিন আপনি বিদেশি দালাল খুঁজে বেড়িয়েছেন। পাকিস্তানের আদালতে আইএসআইয়ের প্রধান বলেছেন, ১৯৯১ সালের নির্বাচনের সময় তারা আপনাকে অর্থ দিয়েছিল। আপনি পরাজিত শক্তির দালালি করে, দেশকে জিম্মি করতে চান।’

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “আপনি দেশ চালাতে ক্ষমতায় আসেন নাই, অর্থ সম্পদ লুট করতে এসেছিলেন। আপনাদের ছেলেদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের মামলা হয়েছে, এফবিআইয়ের সদস্যরা এসে সাক্ষি দিয়ে গেছে, এখন কী বলবেন আপনি?”

তিন বছরে ১০ ভাগ দারিদ্র্য কমেছে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গত তিন বছরে দেশের ১০ ভাগ দারিদ্র্য কমেছে। এ সময়ে ৬৮ লাখ ৫১৬ জনের চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে। বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বিএনপি চালের দাম ১০ টাকা থেকে ৪০ টাকা করে গেছে। আমরা জিনিসের দাম কমিয়েছি। গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন বাড়িয়েছি। বাংলাদেশের কোনো এলাকায় খাদ্যসঙ্কট নেই। মানুষকে বিনামূলে খাবার দিয়ে আমরা খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। সারের দাম কমিয়েছি। তিন দফায় সার কৃষকদের কাছে চলে যাচ্ছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সাড়ে চার লাখ মানুষকে চাকরি দিয়েছি। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছি। সমুদ্রসীমানার বিরোধ মীমাংসার জন্য আমরা জাতিসংঘে আমাদের দাবি উপস্থাপন করেছি। ভারতের কাছ থেকে আমরা গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করেছি।

বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে ভারতের পক্ষে অবস্থান নিলেও বিরোধী দলে থাকলে বিপরীত অবস্থান নেয় বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগ প্রধান।

খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘এফবিআই থেকে ঢাকা এসে সাক্ষী দিয়ে গেছে, আপনার ছেলে দুর্নীতি করেছে। চালের দাম ৪০ টাকা করে আপনি গরীবের পেটে লাথি মেরেছিলেন। আমরা চালের দাম কমিয়েছি। চাকুরেদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করেছি। কৃষকরা ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারে। কৃষককে গুলি খেতে হয় না। আপনি কৃষকদের গুলি করে হত্যা করেছিলেন এ কথা দেশের সকলের মনে আছে।’

সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “এরপর বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগ আমলের সব কাজ বন্ধ করে দেবে। আমরা যে ৩ হাজার মেগাওয়াটের মতো অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি, বিনামূল্যে বই বিতরণ করেছি, ডাক্তার-নার্স নিয়োগ দিয়েছে, এগুলোও কি সব বন্ধ করে দেবেন?”

আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের চলমান জনসভার কারণে আজ বুধবার রাজধানীর মতিঝিল ও আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সমাবেশকে ঘিরে পুরো গুলিস্তান এলাকা, পল্টন থেকে গুলিস্তান, গুলিস্তান থেকে মতিঝিলের দিলকুশা, গুলিস্তান থেকে সচিবালয়, গুলিস্তান থেকে মত্স্য ভবন এলাকা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে জনসাধারণ।

ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলো ছাড়াও কুষ্টিয়া, শরীয়তপুর, মাদারীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার হাজার হাজার নেতা-কর্মীরা নানা ধরনের ব্যানার নিয়ে মিছিল করে সমাবেশে আসেন।

বিরোধী দলের বড় জনসভার একদিন পর ঢাকার সমাবেশে বিপুল কর্মী-সমর্থক জড়ো করে নিজেদের শক্তি তুলে ধরতে চাইছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবিতে ১২ মার্চ নয়া পল্টনে খালেদা জিয়ার সমাবেশে ২ লাখ জনসমাগম হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, পদে পদে বাধা উপেক্ষা করেই তাদের ওই সমাবেশ করতে হয়েছে।