গৌরনদীতে বার্ড ফ্লুসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে অর্ধ লক্ষ মুরগী ॥ বন্ধ হয়ে গেছে শতাধিক খামার

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ বরিশালের গৌরনদী ও কালকিনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সালমুনাসেস ও বার্ড ফ্লুসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে গত এক মাসের ব্যবধানে ২৫টি খামারের ৫০ হাজার মুরগী মারা গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে শতাধিক পোল্টি খামার। ফলে দিশেহারা হয়ে পরেছেন পোল্টি খামারীরা। অনেকেই ভয়ে এখন খামারে বাচ্চা তুলছেন না। নিরুপায় হয়ে কেউ কেউ শূণ্য খামারের জমিসহ ঘর বিক্রি করার চেষ্ঠা করছেন। গত এক মাস ধরে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। পোল্টি খামারীদের অভিযোগ স্থানীয় প্রাণী সম্পদ বিভাগ থেকে তারা কোন সহযোগীতাই পাচ্ছেন না।

গৌরনদী পোল্টি ফার্ম মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তার উত্তর বিজয়পুর গ্রামের খামারে গত এক দশদিন আগে এ রোগ দেখা দেয়। এরই মধ্যে তার খামারের আড়াই হাজার মুরগী মারা গেছে। একই গ্রামের রুহুল আমীন সরদারের খামারে মারা গেছে এক হাজার মুরগী। ওই গ্রামের মনিরুজ্জামানের খামারে মারা গেছে দেড় হাজার মুরগী। শাওড়া গ্রামের শওকত হোসেন মাষ্টারের খামারের দুই হাজার মুরগী, দিয়াশুর গ্রামের মোশারফ হাওলাদারের খামারের এক হাজার মুরগী, ধুরিয়াইল গ্রামের সেন্টু সিকদারের খামারের দুই হাজার, হাজিপাড়া গ্রামের জহির হোসেনের খামারের তের’শ, হরিসেনা গ্রামের রিপন তালুকদারের খামারের এক হাজার, টরকী এলাকার জহিরুল ইসলামের খামারের এক হাজার, কালকিনি উপজেলার হামেদখারহাট গ্রামের মাওলানা ফারুক হোসেনের খামারের তিন হাজার, একই গ্রামের এমদাদ হোসেনের খামারের দুই হাজার মুরগী মারা গেছে। অন্যসব খামারের মুরগী আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে সমূদয় মুরগী নামে মাত্র দামে বিক্রি করে দিয়েছেন। গত এক মাসের ব্যবধানে গৌরনদীর দু’শতাধিক খামারের মধ্যে প্রায় অর্ধেকের বেশি খামার বন্ধ হয়ে গেছে। এক মাস আগ থেকে এসব এলাকায় বার্ড ফ্লুসহ নানারোগ দেখা দেয়। খামারীদের অভিযোগ, প্রয়োজন মুহুর্তে গৌরনদী উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগে এসে তারা কোন ধরনের সহায়তা পায়নি। গত বছরও একই রোগে খামারীরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন।

খবর নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন থেকে গৌরনদী প্রাণী সম্পদ বিভাগে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ও ভেটেনারী সার্জনের পদটি শূণ্য রয়েছে। এছাড়া পশু চিকিৎসা সহকারী, টিকাদানকারী, প্রজননকারী দীর্ঘদিন থেকে প্রশিক্ষনে থাকার কারনে অফিস সহকারী ও পিয়ন ছাড়া অফিসে কাউকেই পাওয়া যায়না। যে কারনে এখান থেকে খামারীরা কোন চিকিৎসা সহায়তা পাচ্ছেন না। খামারীরা আরো অভিযোগ করেন, খামারে স্প্রের মাধ্যমে পরিস্কার করার জন্য ভিরকন এস পাউডার প্রয়োজন, যা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ে চরম সংকট রয়েছে। তবে হাসপাতালের অফিস সহকারী নাজমুল হক জানান, ভিরকন এস পাউডার যা ছিলো তা খামারীদের মাঝে বিতরন করা হয়েছে। বর্তমানে সরবরাহ বন্ধ থাকায় খামারীদের চাহিদা থাকা সত্বেও দেয়া যাচ্ছে না।

উপজেলার কাছেমাবাদ গ্রামের পোল্টি ফিড ব্যবসায়ী মোঃ হাবিবুল হক বলেন, আমি বিভিন্ন এনজিও থেকে ৩২ লক্ষ টাকা ঋণ উত্তোলন করে ব্যবসা শুরু করেছি। বর্তমানে উপজেলার সর্বত্র পোল্টি খামারে সালমুনাসেস ও বার্ড ফ্লুসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়ার পর খামারগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে এখন আমার পথে বসার উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে। গৌরনদী পোল্টি ফার্ম মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পর পর দু’বছর তার খামারের মুরগী মরে যাওয়ায় তিনি কমপক্ষে অর্ধকোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। উপায়অন্তুর না পেয়ে তিনি তার উত্তর বিজয়পুর গ্রামের খামারের জমিসহ শূণ্য ঘর বিক্রির জন্য প্রাণপন চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন।