বীরশ্রেষ্ঠর গ্রন্থাগারে শোভা পাচ্ছে শীর্ষ দু’যুদ্ধাপরাধীর লেখা বই – আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি

খোকন আহম্মেদ হীরা, রহিমগঞ্জ থেকে ফিরে ॥ দেশ মাতৃকার টানে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরেছিলেন বরিশালের গৌরব ও অহংকার ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর (ইঞ্জিঃ)। দেশ স্বাধীনের ঠিক দু’দিন আগে (১৯৭১ সনের ১৪ ডিসেম্বর) রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জে পাক সেনাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন এর বীর সৈনিক। স্বাধীনতার উত্তাল মুহুর্তে বীরত্বের ভূমিকা পালন করায় তাকে বীরশ্রেষ্ঠর উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তার স্মৃতি সংরক্ষন ও ভবিষ্যত প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে নির্মান করা হয় “বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর (ইঞ্জিঃ) গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর”। ওই গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরে এখন শোভা পাচ্ছে রাজাকারের শিরোমনি দেশের বহুল আলোচিত শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর লেখা একাধিক গ্রন্থাগার ও বই। ফলে প্রতিদিন বীরশ্রেষ্ঠর গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনে আসা দর্শনার্থী ও স্থানীয় সচেতন নাগরিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে বীরশ্রেষ্ঠর পৈত্রিক বাড়ি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের রহিমগঞ্জে নির্মিত গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরের ৪ ও ৫ নং সুকেচে থরে থরে অন্যসব লেখকের বইয়ের পার্শ্বেই সাজানো রয়েছে উল্লেখিত দু’শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর লেখা একাধিক গ্রন্থাগার ও বই। বীরশ্রেষ্ঠর ভগ্নিপতি, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এবং গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরের সাবেক লাইব্রেরীয়ান আসাদুজ্জামানের পিতা মোঃ নুরুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, জেলা পরিষদের মাধ্যমে বীরশ্রেষ্ঠর গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর পরিচালিত হয়ে আসছে। তাদের মাধ্যমেই এ বইগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নে উত্তরন সাংস্কৃতিক সংঘের সাধারন সম্পাদক ও বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী অধ্যাপক আব্দুল হাকিম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নরপশু পাক সেনারা তাদের যেসব দোসরদের কারনে ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরকে নির্মম ভাবে গুলি করে হত্যা করেছে, সেইসব যুদ্ধাপরাধীদের লেখা বই তারই (মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর) গ্রন্থাগার ও জাদুঘরে প্রদর্শন করা হচ্ছে। এটা জাতির জন্য একটি কলংকময় ঘটনা ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

উত্তরন সাংস্কৃতিক সংঘের সভাপতি ও বিশিষ্ট সমাজসেবক কাজী বোরহানুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, ২০০৮ সনের ২১ মে গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরের উদ্বোধন করেন তৎকালীন তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার আব্দুল মালেক। উদ্বোধনের সময়েই জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন ছাড়াই বীরশ্রেষ্ঠর গ্রন্থাগার ও জাদুঘরের উদ্বোধন করা হয়। এতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাসহ সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দরা ক্ষিপ্ত হয়ে অনুষ্ঠান বর্জন করেছিলেন। তিনি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভবিষ্যত প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার জন্যই বীরশ্রেষ্ঠর নামে গ্রন্থাগার ও জাদুঘর নির্মান করা হয়। একজন বীরশ্রেষ্ঠর গ্রন্থাগারে কিভাবে দু’শীর্ষ রাজাকারের লেখা বই এসেছে, তা আবার যত্ন সহকারে রাখা হয়েছে তাহা তদন্ত করা উচিত বলেও তিনি উল্লেখ করেন।