পিতার নির্বাচনী পরাজয়ে মেয়রের বিরুদ্ধে ছিনতাই মামলা

ঝালকাঠি সংবাদদাতা ॥ অবশেষে ঝালকাঠি পৌর মেয়র আফজাল হোসেন রানাসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশে ছিনতাই, মারধরের অভিযোগের মামলাটি সদর থানায় নথিভূক্ত করা হয়েছে। পৌর নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী লিয়াকত আলী তালুকদারের পুত্র আমিনুল ইসলাম লিটন তালুকদার মামলাটি দায়ের করেন। মেয়রের বিরুদ্ধে এহেন মিথ্যা অভিযোগে মামলা রেকর্ডের বিষয়টি শহরে জানাজানি হলে এ নিয়ে পৌরবাসি, পৌর পরিষদ ও  কর্মচারীদের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় জেলা আওয়ামীলীগ, ঝালকাঠি নাগরিক ফোরাম. পৌর কর্মচারী ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তীব্র নিন্দা জানিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবী করেছেন।

প্রসংগত: গত ৫ মার্চ উত্তর কিস্তাকাঠি আবাসনের বাসিন্দা শুক্কুর আলীর শিশু পুত্র রানা নিখোঁজ হয়। এ ঘটনার পর রানা বেশ কিছুদিন পর ২৪ এপ্রিল সে ঝালকাঠিতে ফিরে আসে। ঐদিন সকাল ৯টার দিকে পুলিশ তাকে পৌর মেয়রের শশুরালয়ের বাসার ছাঁদ থেকে উদ্বার করে। রানার পিতার দায়েরকৃত মামলায় লিয়াকত আলী তালুকদারের ইটভাটার শ্রমিক ইয়াদ আলী জেল হাজতে রয়েছে।

উদ্বারের পর থানায় সাংবাদিকদের কাছে দেয়া শিশু রানার বক্তব্য: গত ৫ মার্চ আমি ঝালকাঠি লঞ্চঘাট যাই। সেখান থেকে জাহিদ নামে এক যুবক আমাকে ঢাকায় নিয়ে যায়। কিছুদিন থাকার পর আমি ঝালকাঠি ফিরে আসি। লঞ্চঘাট নেমে হাটতে হাটতে পালবাড়ি যাই। ওখানে নানীর সাথে দেখা হয়। তখন আমি দৌঁড়ে পালাতে থাকি। এক সময়ে একটি ফাঁড়িতে ঢুকে পড়ি। ঐ ফাঁড়িতে মেয়রের বাসা কিনা জানিনা।

শিশু রানার মা মরিয়ম বেগমের বক্তব্য: রানাকে নিয়ে লিয়াকত আলী তালুকদার তার ইট ভাটায় এবং ধান কাটার কাজ করাতো। সেখান থেকে গত ৫ মার্চ রানা হারিয়ে যাওয়ায় রানার বাবা বাদী হয়ে অপহরন মামলা দায়ের করে। ঐ মামলায় পুলিশ ইট ভাটার পাহারাদার ইয়াদ আলীকে গ্রেফতার করে। সে এখনো জেল হাজতে আছে। এরপর ২৪ এপ্রিল শিশু রানা ঝালকাঠি ফিরে এলে তাকে নিয়ে মেয়র আফজাল হোসেন ও তার পরিবারকে জড়িয়ে লুকিয়ে রাখার মিথ্যা অভিযোগ প্রমানে ব্যর্থ হয়।

মেয়র আফজাল হোসেন রানা তার প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের জানান, গত ২৪ এপ্রিল শিশুটি ঢাকার লঞ্চ থেকে ঝালকাঠি নেমে পালবাড়ি হয়ে উপজেলা পরিষদের সামনে আসে। এ সময় সেখান থেকে শিশুটিকে ধাওয়া করে কৌশলে আমার শশুরালয়ের বাসার ফাঁড়িতে প্রবেশ করতে বাধ্য করা হয়।

মেয়র প্রশ্ন তোলেন, সঙ্গে সঙ্গে কিভাবে সেখানে আমার নির্বাচনী প্রতিপক্ষ লিয়াকত আলী তালুকদারের ছেলে এই মামলার বাদী লিটন তালুকদার ও তার ভাই মনির তালুকদার সেখানে থানা পুলিশ ও কিছু চিহ্নিত সাংবাদিক নিয়ে উপস্থিত হলো। সেখানে তাদের হট্টগোল শুনে আমিও ঘটনাস্থলে আসি। তখন সেখানে এলাকার কয়েক শত লোক এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন। তখন শিশুটি আমার শশুরের বাসার সামনে একটি নিমর্নাধীন ভবনের সিঁড়ির পাশে বসা ছিল। সেখান থেকে শিশুটিকে ধরে লিটন ও মনির তালুকদার জোড়পূর্বক বলতে বাধ্য করে যে, তাকে শশুরের বাসায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে। এসময় মনির তালুকদারের সাথে আসা থানার এসআই রাসেল কবির এ সাজানো ঘটনা লিপিবদ্ধ করতে চাইলে এবং  শিশুটিকে সেখান থেকে লিটন ও মনির ছিনিয়ে নেয়ার সময় আমি তাতে বাঁধা দেই।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে  সেখানে উপস্থিত লিটন তালুকদার আমিসহ ভাই ও শ্যালকের বিরুদ্ধে এই মিথ্যা মামলা দায়ের করে। এ ঘটনার সময় সেখানে এসআই রাসেলসহ পুলিশ ও এলাকাবাসীর  উপস্থিতিতে আমি ও আমার ভাইসহ ৪ জন যদি বাদীর  টাকা ভর্তি ব্যাগ ছিনতাই করে থাকি তা হলে তখন পুলিশের ভুমিকা কি ছিল এমন প্রশ্নও তোলেন মেয়র। এ ছাড়া বাদী এই মামলায় ঘটনার  সময় সকাল সাড়ে ১০টা উল্ল্যেখ করলেও আমি ঐ সময় পৌরভবনে অবস্থান করছিলাম। আমার সাথে পৌর নির্বাচনে বাদীর পিতা লিয়াকত তালুকদার হেরে যাওয়ার পর থেকে ঈর্ষান্বিত হয়ে তিনি নিজেই ইতি পূর্বে একাধিক মিথ্যা মামলা করেছেন। এতে কিছু করতে না পারায় শিশুটিকে নিয়ে একটি ইস্যু করে এখন তার ছেলেরা এ মিথ্যা ও কাল্পনিক অভিযোগে মামলা সাজিয়েছে।

এ মামলার প্রতিক্রিয়ায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সৈয়দ শামসুল আলম ও ডেপুটি কমান্ডার দুলাল সাহা বলেন, একজন মেয়র হয়ে দিনের বেলায় অর্থ ছিনতাইয়ের বিষয়টি হাস্যকর এবং পরিকল্পিত হওয়ায় আমরা এঘটনার তীব্র নিন্দা ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবী করছি। নবনির্বাচিত মেয়র ঝালকাঠির উন্নয়নে নিজেকে আত্মনিয়োগ করায় ঈর্ষান্বিত হয়ে নির্বাচনে পরাজিত মহল উন্নয়ন কর্মকন্ডকে বাধাগ্রস্থ করার জন্যই এ ধরনের একটি মামলা দায়ের করে হয়রানি করছে।

এদিকে জেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট খান সাইফুল্লাহ্ পনির ও উপ-দপ্তর সম্পাদক তরুন কর্মকার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতিসহ সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে এ মিথ্যা মামলা দায়েরে নিন্দা জানিয়ে মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানিয়েছেন।

এছাড়াও জেলা শিল্প ও বনিক সমিতি, জেলা আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা ঝালকাঠি জেলা শাখা ঝালকাঠি মিডিয়া ক্লাব, আদর্শ সমাজ বাস্তবায়ন পরিষদ, ঝালকাঠি নাগরিক ফোরাম, প্রতীক নাট্য গোষ্ঠী, ঝালকাঠি শিল্পী পরিষদ, লোকনাথ নাট্য গোষ্ঠী, আওয়ামী সাংস্কৃতিক জোট, ঝালকাঠি বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতি, রিকসা শ্রমিক ইউনিয়ন, বেকারী শ্রমিক ইউনিয়ন, মৎসজীবী শ্রমিক ইউনিয়ন, ইলেক্ট্রনিক্স সমিতি, লবন শ্রমিক ইউনিয়ন নিন্দা এবং এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবী জানিয়েছে।