গোয়েন্দা রিপোর্টে তোলপাড় – বরিশালের চার মেয়েকে বিদেশে পাঁচারের চেষ্টা

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ বরিশালে আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের ৪ মেয়েকে বিদেশে পাঁচারের জন্য পায়তারা চালাচ্ছে একটি পাঁচারকারী চক্র। ওই চক্রটি দীর্ঘদিন যাবত খ্রীষ্ট সম্প্রদায়ের ফেলোশিপ শিক্ষার নামে অসহায় পরিবারের কিশোরী কন্যাদের পাঁচার করে আসছে বলে নামপ্রকাশ না করার শর্তে একটি গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছেন।

চার মেয়েকে পাচারের চেষ্টাগোয়েন্দা সূত্র মতে, আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল গ্রামের খ্রীষ্টসম্প্রদায়ের দারিদ্র পরিবারের মৃত সুখেন্দু বাড়ৈ ওরফে ঋতুর ৪ কন্যাকে ফেলোশিপ শিক্ষার নামে দীর্ঘদিন থেকে ঢাকার মিরপুর ও উত্তরা এলাকার ফ্লাট বাড়িতে আটক করে রাখা হয়েছে। তাদের পরিবারের কারো সাথে যোগাযোগ পর্যন্ত করতে দেয়া হচ্ছেনা।

মৃত সুখেন্দু বাড়ৈ ওরফে ঋতুর অসহায় স্ত্রী রিবিকা বাড়ৈ অভিযোগ করেন, তাদের অসহায় পরিবারের সরলতার সুযোগ নিয়ে পাশ্ববর্তী ছবিখারপাড় গ্রামের তপন সরকারের পুত্র ডেভিট সরকার ফেলোশিপ শিক্ষার নামে গত দু’বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে তার চার কন্যা মৌসুমি বাড়ৈ (২২), লাকি বাড়ৈ (২০), কচি বাড়ৈ (১৮) ও পলি বাড়ৈকে (১৬) ঢাকায় নিয়ে যায়। এরইমধ্যে তার বড় কন্যা মৌসুমী বাড়ৈ রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন চাপের মুখে ডেভিট সরকার ভারত থেকে মৌসুমীকে ঢাকায় ফিরিয়ে নিয়ে আসে। কিন্তু রহস্যজনক কারনে বিধবা মায়ের সাথে তার চার কন্যার যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। পিতৃহারা মেয়েদের খোঁজে একাধিকবার রিবিকা বাড়ৈ ঢাকায় গিয়ে ডেভিট সরকারের সাথে যোগাযোগ করলে তাকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ কন্যাদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়। রিবিকা বাড়ৈ অভিযোগ করেন, তার কন্যাদের দিয়ে জোড়পূর্বক অনৈতিক কর্মকান্ড ও মৌসুমীকে ভারতে পাচার করে দেয়া হয়েছিলো। প্রভাবশালী ডেভিট সরকারের হুমকির মুখে অসহায় বিধবা রিবিকা আইনের আশ্রয় নিতে সাহস পাচ্ছেন না।

বৃহস্পতিবার আগৈলঝাড়া থানার ওসি অশোক কুমার নন্দি একটি গোয়েন্দা সংস্থার উদ্বৃতি দিয়ে জানান, ওই সংস্থাটি থানায় ম্যাজেস দিয়ে বলেছেন, উল্লেখিত চার কন্যাকে বিদেশে পাচারের জন্য একটি পাচারকারী চক্র তৎপর হয়ে উঠেছে। তবে সংস্থাটির নজরেই চারকন্যা ও পাচারকারীরা রয়েছেন বলেও ওসি উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন, এ ব্যাপারে এখনো কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নামপ্রকাশ না করার শর্তে ওই গোয়েন্দা সংস্থার বরিশাল অফিসের এক এস.আই জানান, ইতোমধ্যে ওই চার কন্যাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য পাসর্পোট করতে দেয়া হয়েছে। একই সাথে চার বোনের পাসর্পোট করার বিষয়ে সংস্থাটির সন্দেহ হয়। পরে পাসর্পোটের ঠিকানা অনুযায়ী তদন্তে এসে সংস্থাটির কাছে মূল রহস্য বেরিয়ে আসে। এ সংবাদ আগৈলঝাড়ার সর্বত্র ছড়িয়ে পরলে পুরো উপজেলাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এদিকে চার কন্যাকে ফেরত পেতে তার বিধবা মা রিবিকা বাড়ৈ বিভিন্নস্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কন্যাদের ফেরত পেতে তিনি প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

উল্লেখিত অভিযোগের ব্যাপারে অভিযুক্ত ডেভিট সরকারের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার সাথে সাথেই তিনি ফোনের লাইন বিচ্ছিন্ন করে তা বন্ধ করে দেয়।