ই-সাংবাদিকতা: প্রতিবন্ধকতা কপি পেস্ট -নাজমুল হক

 

সাংবাদিক সমাজের দর্পন। জাতির সঠিক দিক নির্দেশক। একটি সৃজনশীল পেশা হিসাবে সাংবাদিকতা সমাজে স্থান করে নিয়েছে। সকল প্রকার সৃজনশীলতার স্থান এখানে আছে। একজন সাংবাদিক দেশ ও জাতিকে অনেক কিছু দিতে পারেন যদি তার সংবাদগুলো বস্তুনিষ্ঠ হয়। নিরপেক্ষতা, খবরের বস্তুনিষ্ঠতা ও সত্যতা সম্পর্কে যেন কোনো প্রশ্ন না ওঠে সেটা সব সময় একজন সাংবাদিকের মাথায় রাখা আবশ্যক। সংবাদপত্রে পরিবেশিত সংবাদগুলো যেমন একটি জাতিকে দিক নির্দেশনা দিতে পারে, তেমনি পারে ভুলভ্রান্তিতে ভরা সংবাদ পরিবেশন করে ভুল পথে চালো না করতে। সাংবাদিকের কলম যে কতটা শক্তিশালী হতে পারে তা আমাদের স্বাধীনতার সমসাময়িক সময়গুলোতে, কিম্বা নব্বইয়ের দশকের আন্দোলনগুলোতে খুব সহজেই প্রতিয়মান হয়েছে। এমন অনেক উদাহরন দেয়া যাবে যেখানে নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার কারনেই অনেক বড় বড় সমস্যার সমাধান খুব সহজেই  হয়েছে। যে কোন দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ, নির্ভিক ও সৎ সাংবাদিকতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা জাতিকে সামগ্রিক দিক নির্দেশিকার আলোক বার্তিকা হিসাবে কাজ করে।

আমাদের দিনবদলের দেশে দিন দিন ইন্টারনেটের ব্যবহার বিস্তৃত হচ্ছে। বর্তমানকালের পাঠক অনেক বেশী সচেতন। পাঠক এখন ঘটনার সাথে সাথে সংবাদ জানতে চাই। সংবাদ এক শ্রেণীর মানুষের কাছে বিনোদনের খোরাক হয়েছে। সংবাদ এখন শোনার চেয়ে দেখার বিষয় হয়েছে। রাতের টেলিভিশনের সংবাদ না দেখে অনেকে ঘুমাতে যেতে পারে না। সকালের পত্রিকা না পড়ে অফিসে কাজ হয় না। এর সককিছু হয়েছে সাংবাদিকতার কারণে।

বাংলাদেশে সংবাদ এতটায় বিনোদনের খোরাক হয়েছে যে মানুষ অনলাইলে নিউজ পোল্টার অন করে রাখে। অনলাইন সংবাদপত্রগুলো পাঠকের চাহিদা অনেকাংশেই পূরণ করতে সক্ষম। দেশে দিন দিন অনলাইন পাঠকের সংখ্যা বাড়ছে। অনলাইন সংবাদপত্রের পাঠক শুধু শহর কেন্দ্রিক নয় গ্রামেও পৌছেচে। যেখানে পত্রিকা যেতে সন্ধা হয় সেই অঞ্জলের মানুষে মুহুর্তেই সংবাদ পেয়ে যাচ্ছে তার সোনার বাংলাদেশের ঘটে যাওয়া ঘটনার। চোথের পলকেই পাচ্ছে পৃথিবীর উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরুর সব ঘটনা। এ সবই সম্ভব হচ্ছে আধুনিক সাংবাদিকতার ফসল হিসাবে ইলেকট্রনিক সাংবাদিকতার কারলে। অর্থাৎ ই-সাংবাদিকতায় মানুষ আরো বেশি জানতে পারছে। এর মাধ্যমে সাংবাদিকরা বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে ঘরে বসে যোগাযোগ করে রিপোর্ট প্রস্তুত করতে পারছে। কারণ জেলা প্রশাসকের ওয়েবসাইটে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে পদস্থ কর্মকর্তার মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে। যেখানে খুব সহজে নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করে তাৎক্ষণিক রিপোর্ট দেওয়া যায়। এ জন্য ঘটনাস্থলে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না।

বর্তমানে সাংবাদিকরাও এর সুবিধা ভোগ করছে। ভোগ করছে অবাধ স্বাধীনতা। ই-মেইলের মাধ্যমে সংবাদ দ্রুত গন্তব্যে পাঠানো হচ্ছে। পাঠকের জন্য সংবাদ দ্রুত প্রক্রিয়াকরণ করতে হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে বেশি বিড়ম্বনায় পড়ছে পাঠক। সাংবাদিকরা দ্রুত সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে বেশির ভাগ সময় কপি পেইস্টের দিকে ঝুকে পড়েছে। এই হার জেলা পর্যায়ের এক শ্রেণীর সাংবাদিকদের বেশি প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জেলা পর্যায়ে সাংবাদিকদের মধ্যে ছোট ছোট গ্রুপ তৈরি হয়েছে। তারা নিজেদের মধ্যে সংবাদ ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠাচ্ছে একে অন্যেও কাছে। ফলে অনেক সাংবাদিক ভালো সংবাদ কোন রকম যাচাই বাছাই না করে কোন রকম এডিটিং না করে তার সংস্থায় পাঠাচ্ছে। ফলে বিঘিœত হচ্ছে সৃজনশীলতা। তীব্র প্রতিযোগিতার আর সংবাদ এডিটিং না করার কারণে তার প্রতিষ্ঠানে ছাপা হচ্ছে অন্যেও একটি প্রতিষ্ঠানের নাম। অর্থাৎ —– পত্রিকাকে জানায় মন্তব্যটি ৩/৪ টি সংস্থায় ছাপা হওয়ার রেকর্ড প্রতিদিনই ঘটছে। ফলে অসুবিধায় পড়ছে সংবাদের প্রধান লেখক। আর যেসব পাঠক প্রতিনিদ কয়েকটি পত্রিকা বা সংবাদ সংস্থা ভিজিট করে তারা সংবাদিকদের সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করছে। সাংবাদিকদের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে।

অন্যদিকে প্রধান লেখকের কোন ভুল হলে আরো কয়েকজন মাছি মারা কেরানির মত ভুল করে যাবে। ক্ষতিগ্রস্থ হবে দেশ। আমাদের সমাজ ভুল জানবে। এজন্য সাংবাদিকদের আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। বর্তমানে সাংবাদিকদের মধ্যে দুবৃত্তয়ান প্রবেশ করেছে। যার জন্য গোটা সাংবাদিক সমাজ কলুষিত হচ্ছে। কলুষিত হচ্ছে সাংবাদিকতার মত মহান পেশা। যে পেশার মানুষ কলম দিয়ে আমাদের সোনার সবুজ বাংলাদেশ উপহার দিয়েছিল। কিন্তু দুবৃত্তয়ান তাদের কুরে কুরে খাচ্ছে। গুটি কয়েক ব্যক্তির কারণে পেশা আজ পিছন থেকে টানছে। সাংবাদিকরা নির্যাতিত হচ্ছে। নির্মম ভাবে হত্যা করা হচ্ছে। অথচ খুনিরা বার বার পার পেয়ে যাচ্ছে।

সাংবাদিকতার কপি পেস্ট থেকে বেরিয়ে না আসতে পারলে নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুরাল মারার সামিল হবে।

লেখক : নাজমুল হক, রোভার স্কাউট