অনুসন্ধানী প্রতিবেদন: মাধ্যমিক উপবৃত্তির লক্ষ লক্ষ টাকা ভাগাভাগির অভিযোগ

শিক্ষক, অভিভাবক ও ছাত্র-ছাত্রীর অভিযোগে জানা গেছে, উপবৃত্তির আওতাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা বৃত্তির টাকা বিতরনের আগেই বিতরন খরচ বাবদ জনপ্রতি ৩০ টাকা হারে আদায় করে নিয়েছেন। টাকা বিতরনকালে বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে স্কুলের পাওনা বেতনের নামে ৩ শত থেকে ৩৫০ টাকা করে কর্তন করে রাখা হয়েছে। এ অভিযোগ উপবৃত্তির আওতাভূক্ত প্রতিটি স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। এছাড়াও উপবৃত্তি বিতরনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সাথে আতাত করে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের টাকা উপস্থিত দেখিয়ে তা উত্তোলন করে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাধিক সহকারী শিক্ষক ও শিক্ষা অফিসের একটি সূত্র জানান, উপবৃত্তির আওতার ৪১ প্রতিষ্ঠানে ৮ থেকে ৯’শ শিক্ষার্থী অনুপুস্থিত রয়েছে। তাদের স্বাক্ষর জাল করে উক্ত টাকা উত্তোলন করে ভাগাভাগি করে আত্মসাত করা হয়েছে।
এছাড়া বরাদ্দ কমের অজুহাতে মেরিট ক্যাটাগিরির শিক্ষার্থীদের গনহারে সাধারন ক্যাটাগিরির বরাদ্ধ প্রদান করে উদ্ধৃত অর্থও ভাগাভাগি করা হয়েছে। উপবৃত্তির নীতিমালা অনুযায়ী মেরিট ক্যাটাগিরিতে ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে ৭৫০ টাকা, ৭ম শ্রেনীতে ৭৮০, ৮ম শ্রেনীতে ৮১০, ৯ম ও ১০ম শ্রেনীতে ১০৫০ টাকা এবং সাধারন ক্যাটাগিরিতে ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে ৩৯০, ৭ম শ্রেনীতে ৪৫০, ৮ম শ্রেনীতে ৫৪০, ৯ম ও ১০ ম শ্রেনীতে ৯’শ টাকা প্রদানের কথা রয়েছে।

উপবৃত্তির টাকা পাওয়া পশ্চিম শাওড়া দাখিল মাদ্রাসার ৮ম শ্রেনীর ছাত্রী শারমিন আক্তার, সালমা খানম, নুশরাত জাহান, আঃ সালাম, সোহেল আহম্মেদসহ অনেকেই অভিযোগ করেন, বিতরন খরচের জন্য পূর্বেই তাদের কাছ থেকে ৩০ টাকা করে নেয়া হয়েছে। এছাড়া তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ২’শ টাকা করে কেটে রাখা হয়। দক্ষিন নাঠৈ দাখিল মাদ্রার ১০ম শ্রেনীর ছাত্রী রহিমা আক্তার, সামিয়া ইসলাম, হালিমা খানমসহ একই ধরনের অভিযোগ করে বলেন, টাকা কম দেয়ার বিষয়ে কিছু বললে, স্যারেরা আমাদেরকে বৃত্তির টাকা বন্ধ করে দেয়ার ভয় দেখায়। এ বিষয়ে মাদ্রাসার সুপারেনটেন্ড মোঃ নুরুল আমিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি টাকা রাখার বিষয়টি পত্রিকায় না লেখার জন্য অনুরোধ করে বলেন, মাদ্রাসাটি অনুমোদন না পাওয়ায় শিক্ষকদের বেতনের জন্য কিছু টাকা রাখা হয়েছে। আল-হেলাল দাখিল মাদ্রাসার ৭ম শ্রেনীর ছাত্রী সাহেরাকে ৩৯০ টাকার পরিবর্তে দেয়া হয়েছে ১৯০ টাকা। একইভাবে ৩৯জন ছাত্রীকে ২ থেকে ৩’শ টাকা করে কম দিয়ে বাকি টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। গৌরনদী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেনীর ছাত্রী আফরিন জাহান মুন্নির মা নাসিমা বেগম অভিযোগ করেন, তার মেয়ের কাছে স্কুলের কোন টাকা পাওনা নেই। তার পরেও তাকে ১হাজার ৫০ টাকার স্থলে মাত্র ৫ শত টাকা দেয়া হয়। একই ভাবে অভিযোগ করেন ৭ম শ্রেনীর ছাত্রী জারিন তাসনিমের বাবা মোঃ ফরিদ সরদার, ৮ম শ্রেনীর ছাত্রী সুমাইয়া ইসলাম অন্তরার বাবা মোঃ অলি সরদারসহ অনেকেই। অভিযোগের ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আতাউর রহমান বলেন, হয়তো ভুল বশত  টাকা রাখা হয়েছে তা ফেরত দেয়া হবে। বার্থী হাই স্কুলের ৭ম শ্রেনীর ছাত্রী আফরোজা আক্তারের পিতা হারুন অর রশিদ জানান, তার মেয়ে আফরোজার টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে দেখেন তার (আফরোজার) উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই স্কুলের জনৈক এক শিক্ষক জানান, গত ১৩ মে উপবৃত্তির টাকা বিতরন করা হয়েছে। ওইদিন ২২ জন শিক্ষার্থী স্কুলে অনুপস্থিত ছিল কিন্তু বিতরন কাজে জড়িত সংশ্লিষ্টরা তা উপস্থিত দেখিয়ে অন্য ছাত্রীদের দিয়ে স্বাক্ষর করে টাকা উত্তোলন করে তা ভাগাভাগি কওে নেয়া হয়েছে। একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে গৌরনদী উপজেলার প্রতিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার প্রধান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরিশাল জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের জনৈক কর্মকর্তা  জানান, সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী উপবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোন বেতন নেয়া যাবে না। উপবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীর বেতনের অংশের টাকা সরকার ভতুর্কি হিসেবে প্রদান করে থাকে। এ বিষয়ে কোয়ালিটি সার্পোট সেকেন্ডারী এডুকেশন সেক্টর ডেভলপমেন্ট প্রজেক্টের সহকারী পরিচালক রাজিব হালদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যদি কেউ গোপনে টাকা রেখে থাকেন তা হলে কি করার আছে। অভিযোগের ব্যাপারে উপবৃত্তি বিতরন কাজের সাথেযুক্ত অগ্রনী ব্যাংক গৌরনদী শাখার ম্যানেজার মোঃ জাহিদুল ইসলাম শেখের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপবৃত্তি বিতরনে অনিয়ম দুর্নীতি রয়েছে এ কথা সত্য। তবে এর সাথে ব্যাংক জড়িত নয়। তিনি আরো বলেন, দুর্নীতির বিষয়টি আমি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ সহিদুল ইসলামকে অবহিত করে তা বন্ধের জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। উল্লেখিত অভিযোগের ব্যাপারে গৌরনদী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ সহিদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি অনিয়ম দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, ছাত্রীদের মাঝে টাকা বিতরনের পরে কি হয় না হয় তার দায় দায়িত্ব আমাদের নয়। টাকা ভাগাভাগির অভিযোগ সঠিক নয়।