রাজাপুরের বিষখালী নদীর আকস্মীক ভাঙ্গনে ১৪টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতঘর নদীগর্ভে বিলীন

আহমেদ আবু জাফর, ঝালকাঠি ॥ বিষখালী নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার এ পর্যন্ত বহু গ্রাম এবং প্রায় দেড় হাজার বিঘা আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিগত সরকার গুলো ভাঙ্গনরোধের প্রতিশ্র“তি দিয়ে আসলেও ভাঙ্গনকবলিত এলাকার সর্বহারা মানুষগুলো বাস্তবে কোন কিছুই পায়নি। তাই প্রতিনিয়ত ভেঙ্গেই যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। গত শনি ও রোববার এ দু’দিন ধরে বিষখালি নদী তীরবর্তী মঠবাড়ি ইউনিয়নের বাদুরতলাহাট, মানকি-সুন্দর ও নাপিতেরহাট এলাকায় পূর্ণিমার জোঁয়ারে আকস্মিক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এতে বাদুরতলা হাটের ১১টি, নাপিতেরহাট এলাকার ২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মানকি সুন্দরের ১টি বসতঘর এবং গাছপালা ধবসে নদীতে ভেঙ্গে পড়ছে।

এলাকাবাসি সূত্রে জানাগেছে, বাদুরতলা হাটের ফেরদৌস হাওলাদারের চায়ের দোকান, পান্না তালুকদারের পানের দোকান, সোনা মিয়ার মুদি দোকান, জামাল হাওলাদারের মুদি দোকান, আবু সাঈদ খলিফার মুদি দোকান, আনসার হাওলাদারের মিষ্টি দোকান, গেীরাঙ্গ সাহার দোকান। এ সময় আরও ৩-৪টি ঘর নিরাপদ স্থানে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়াও একটি স্ব-মিলেরও অধিকাংশ ভেঙ্গে গেছে। এ ভাঙ্গনের ঘটনায় আতঙ্কিত এবং দিশেহারা হয়ে পড়েছে শতশত পরিবার। ঘরবাড়ি সরিয়ে নেয়ারও সময় পাচ্ছেনা অনেকে। ভাঙ্গনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসন এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বিষখালীর ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থরা জানান, গত শনিবার থেকে আকস্মিক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। আমরা হঠাৎ এ ভাঙ্গনে হতভম্ব হয়ে পরি। দিকবিদিক ছুটোছুটি করতে থাকি। বিশেষ করে শিশু ও মহিলারা বেশী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে রেখে আসার আগেই নদীতে ভেঙ্গে পড়ে দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গাছপালা। রাতে এ ভাঙ্গনের তীব্রতা আরো বেশী হওয়ায় কেহউ ঘরে ঘুমাতে পারছেনা।

মানকি গ্রামের বিষখালীর ভাঙ্গনে নিঃস্ব রুস্তুম আলী (৭৫), হোসেন আলী হাওলাদার (৬০), গোল চেহারা বেগম (৯০) জানান, আমাগো জমি ছিল নদীর মাঝে। বাড়িঘর জমিজমা সব বিষখালি নদীতে লইয়া গেছে। এহন মোরা অন্যের জমিতে থাহি। এই গ্রামের অনেকেই সর্বহারা হইয়া ভিক্ষা বদলা দিয়া খায়। ক্ষতিগ্রস্তরা আরো জানান, মানকি গ্রামের আগে সুন্দর গ্রাম বিষখালী গাঙ্গে ভাইঙ্গা প্রায় ৩শ বিঘা জমি শেষ হইছে। হেই পরিবার গুলাও এহন সর্বহারা। নির্বাচন আইলেই খালি ভাঙ্গন ঠেহাইবে এই কথা কইয়া মোগো ভোড নেয়। ভোডের পর আর এমপি মন্ত্রী কেউরেই দেহিনা।

এলাকাবাসীর দাবী ভাঙ্গনরোধে এমপি বিএইচ হারুন শুনছি নাকি কি করবে। কিন্তু তার সরকার ক্ষমতায় আসার ৩ বছর হলো এখন পর্যন্ত কিছুই দেখছি না। এমনকি এ ভাঙ্গন রোধে দ্রুত কোন কার্যকরি ব্যবস্থা না নিলে যে কোন মূহুর্তে কয়েক মাইলের বাড়িঘর আবাদি জমি নদীতে ধবসে পড়বে। এ ছাড়াও উপজেলার সুন্দর, বাদুরতলা, চল্লিশ কাহনিয়া, নাপিতেরহাট ও উত্তর পালট গ্রামের প্রায় ৫ শত পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে রয়েছে।

বর্তমানে বাদুরতলা লঞ্চঘাটটি ভেঙ্গে যাওয়া লঞ্চ তীরে ভিড়তে পারছেনা। এদিকে গত শনিবার রাতে আকস্মিক ভাঙ্গনের খবর পেয়ে ইউএনও মুহাম্মদ মুনীরুজজামান ভূঁঞা ভাঙ্গন কবলিত বাদুরতলা বাজার পরিদর্শন করেছে। ব্যাপারে ইউএনও বলেন, আমি আকস্মিক ভাঙ্গনকুল পরিদর্শন করেছি। ইতিমধ্যেই বিষখালীর ভাঙ্গনে বাদুরতলা বাজারের একাংশ ভেঙ্গে গেছে। তবে দ্রুত ভাঙ্গনরোধ এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি ক্ষতিগ্রস্তদেরকে সর্বাত্মক সহযোগীতার আশ্বাস প্রদান করেছেন।