পালরদী নদীর দু’পাড় দখলের মহোৎসব

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গৌরনদী পৌর শহরের গৌরনদী বন্দর, চরগাধাতলী, টরকীরচর, নতুন টরকী, উপজেলার পিঙ্গলাকাঠি, হোসনাবাদ, কয়ারিয়া, পার্শ্ববর্তী কালকিনি উপজেলার কালকিনি বন্দর, চরপাঙ্গাসিয়া, ঠেঙ্গামারা, শিকারমঙ্গল বাজার, চরবিভাগদি এলাকার ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া শত বছরের ঐতিহ্যবাহি আড়িয়াল খার শাখা পালরদী নদী প্রবাহিত রয়েছে। ইতোমধ্যে নদীর পাড়ের এসব বন্দর ও হাট-বাজার এলাকায় নদীর দু’তীর ভরাট করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বসত ঘর, দোকানপাট, কল-কারখানা গড়ে তুলে নদীর বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে ফেলেছে।

অভিযোগ রয়েছে, দখল প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিএনপি ও আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতাসহ এলাকার প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা জড়িত রয়েছেন। তারা গৌরনদী বন্দর, চরগাধাতলী, টরকীরচর, নতুন টরকী, পিঙ্গলাকাঠী, হোসনাবাদ, কয়ারিয়া, কালকিনি বন্দর, চরপাঙ্গাসিয়া এলাকায় পালরদী নদীর দু’তীর ও নদীর মধ্যবর্তীস্থান দখল করে মিল-কলকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মান করেছে। তারা পাকা ভবন নির্মান করে ডাল মিল, রাইস মিল, স’মিল, অয়েল মিল, পাকা-আধাপাকা দোকান ঘর নির্মান করেছেন। পালরদী নদীর পশ্চিম তীরে গৌরনদী বন্দর, টরকীরচর, কালকিনি বন্দর ও পূর্ব তীরে নতুন টরকীরহাট অবস্থিত।
টরকীরচর এলাকায় পালরদী নদীর তীর ও নদীর মধ্যে বিস্তীর্ন এলাকা দখল করে পৌর যুবদলের সভাপতি শরীফ মোঃ জাকির হোসেন নির্মান করেছে শরীফ স্ব’মিল, পৌর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সহসভাপতি শাহ আলম গড়ে তুলেছেন খান স্ব-মিল, আওয়ামীলীগ নেতা রাজ্জাক হাওলাদার গড়েছেন বিসমিল্ল¬¬াহ অয়েল মিল। প্রভাবশালী ব্যাবসায়ী খালেক মুন্সি পাকা ভবন নির্মান করে গড়ে তুলেছেন ডাল মিল। ইব্রাহিম চৌকিদার, বিএনপি নেতা দুলাল রায় দুলু, ফজলু মেম্বর, রহমান ফকিরসহ অর্ধশতাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি গড়ে তুলেছেন শতাধিক অবৈধ স্থাপনা। গৌরনদী বন্দর এলাকায় রুহুল আমিন, হাকিম হাওলাদার, মোতালেব মাষ্টার, লাল মিয়া হাওলাদার, সহিদ হাওলাদারসহ দু’শতাধিক দখলদার পাকা আধাপাকা স্থাপনা নির্মান করেছেন।

কালকিনি উপজেলার নতুন টরকীরহাট, পাঙ্গাসিয়া বাজার, ঠেঙ্গামারা বাজার, গৌরনদী উপজেলার পিঙ্গলাকাঠী বাজার, হোসনাবাদ বাজার এলাকার নদীর তীর দখল করে প্রভাবশালীরা আড়াই শতাধিক স্থাপনা গড়ে তুলেছে।

নদীর তীরবর্তী চরআইরকান্দি গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি আবুল কাসেম, আব্দুল ওহাব, হাবিব ফকির, চরপালরদী গ্রামের আঃ মজিদসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, শত বছরের পুরনো ঐহিত্যবাহি আড়িয়াল খাঁ শাখা পালরদী নদীতে এককালে বড় ধরণের বার্জ, ষ্টিমার, লঞ্চ চলাচল করতো। সে সুবাধে এ নদী দিয়ে টরকী-গৌরনদী-ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে প্রতিদিন ছয়টি লঞ্চ চলাচল করতো। কলকাতা থেকেও সরাসরি গৌরনদীতে ষ্টীমার আসা যাওয়া করতো। যে কারনেই নদীর তীরবর্তী পিঙ্গলাকাঠী, গৌরনদী বন্দর, বরিশালের উত্তরের সর্ববৃহৎ টরকী বন্দর জমজমাট ব্যবসায়ী বন্দর হিসেবে সর্বস্তরে পরিচিত ছিল। এ ছাড়াও কালকিনি, ঝুড়গাঁও বন্দর ও এ নদীর তীরে অবস্থিত। তারা আরো জানান, এ নদীতে বড় বড় বার্জ ও ছোট ছোট লঞ্চে প্রতিদিন হাজার হাজার ব্যবসায়ী জনসাধারণ চলাচলসহ আমদানী করত বিভিন্ন ধরণের পণ্যসামগ্রী। লঞ্চ চলাচলের সুবাদে এসব পণ্যসামগ্রী কম খরচে পরিবহন করে সুলভ মুল্যে পাইকারী বিক্রি করা হতো। যার ফলেই একসময় দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকার এসে গৌরনদীর টরকী বন্দর দিয়ে মালামাল ক্রয় করতেন। কালের বির্বতনে ষ্টীমার ও বার্জ চলাচল বন্ধ হয়ে গেলেও এখনো প্রতিদিন ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ রুটে লঞ্চ চলাচল করছে। এরইমধ্যে স্থানীয় প্রভাবশালী কর্তৃক নদী ও নদীর দু’পাড় দখল করে মিল, কারখানাসহ বাড়ি-ঘর নির্মান করায় ক্রমেই নদীর আয়তন ছোট হয়ে যাচ্ছে। দখল প্রক্রিয়া এভাবে চলতে থাকলে একদিন হয়তো ঐতিহ্যবাহি পালরদী নদী দিয়ে আর কোনদিন লঞ্চ চলাচল করতে পারবে না। তারা জরুরি ভিত্তিতে নদীর তীর দখল মুক্ত করার লক্ষে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ঐহিত্যবাহি পালরদী নদীর দু’তীর দখলের ব্যাপারে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাঈদ মাহাবুব খানের কাছে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, নদীর তীরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য আপাতত সরকারি কোন নির্দেশ নেই। তবে উচ্ছেদের জন্য কয়েকটি মামলা জেলা প্রশাসকের কার্যলয়ে বিচারাধীন রয়েছে। আদেশ পেলেই তা উচ্ছেদ করা হবে। বাকি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের অনুমতি চেয়ে শীঘ্রই আবেদন করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।


বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ পালরদী শব্দটি উচ্চারন হবে- পালোরদী। কিন্তু অনেকেই এই শব্দটিকে আমরা- পাল রদী হিসাবে মনে করি।