চোরাই পথে পাচার হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে – ইলিশ যেন সোনার হরিন – ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পরলেও দাম নাগালের বাইরে

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ বাদল দিনের ইলশে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর জোয়ারের পানির সাথে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে নদ-নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়তে শুরু করেছে রূপালী ইলিশ। তার পরেও ক্রেতার মুখে হাসি নেই। রমজান মাসে ইলিশ পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ রপ্তানি সরকারি ভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হলেও প্রতিনিয়ত উপকূল থেকে ট্রাক ভর্তি ইলিশ চোরাই পথে পাচার হচ্ছে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের হাট-বাজারগুলোতে এখনো ইলিশের আকাল চলছে। হাট-বাজারে যাওবা পাওয়া যায় তা যেন ক্রেতাদের নাগালের বাইরে সোনার হরিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঈদের পূর্বে উপকূলীর নদ-নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে চলা ইলিশ জেলেদের জালে ধরা পড়ায় দীর্ঘদিন পরে হলেও মৎস্য পরিবারগুলোতে হাসি ফুটেছে। তাদের অজানা শংকা কিছুটা হলেও দূর হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে একেবারেই ইলিশ শূন্য ছিলো বঙ্গোপসাগর থেকে শুরু করে মেঘনার মোহনা চাঁদপুর পর্যন্ত। ইলিশ ধরা না পড়ায় জেলেদের পাশাপাশি মৎস্য ব্যবসায়ীদের মধ্যেও দুঃশ্চিন্তা বেড়ে গিয়েছিলো। সে সব দুঃশ্চিন্তাকে পিছু ফেলে গত এক সপ্তাহ ধরে মৎস্য ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটতে শুরু করেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে উপকূলের  মৎস্য বন্দরগুলোতে গত এক সপ্তাহ ধরে ইলিশ বোঝাই ট্রলার আসতে শুরু করেছে। জেলেরা জানায়, টানা এক সপ্তাহ সাগরের বিভিন্ন এলাকায় কিছু মাছ ধরা পড়েছে। দীর্ঘ আকালের পর মৌসুমের শেষ ভাগে হলেও মোকামগুলোতে ইলিশ আসতে শুরু করেছে। তবে এসব ইলিশ পশ্চিমবঙ্গে পাচার হয়ে যাওয়ায় দেশি বাজারে দাম কমছে না। ১২’শ গ্রাম ওজনের ইলিশ গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতিমন বিক্রি হয়েছে ৪৫ হাজার টাকায়, এক কেজি সাইজের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা দরে, ৬’শ থেকে ৯’শ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে প্রতি মন ২৯ হাজার টাকায়। ৪’শ থেকে ৫’শ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে প্রতি মন ২০ হাজার টাকায় এবং ৩’শ থেকে ৩৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে প্রতিমণ ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা দরে। প্রকারভেদে এসব ইলিশ মন প্রতি ৩/৪ হাজার টাকা দাম কমলেও যে পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ছে সে তুলনায় দাম কমছে না। খুচরা বাজারে সাড়ে ৬’শ টাকার নিচে এক কেজি ইলিশ মাছ কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না।

আড়তদাররা জানান, মহিপুর, আলিপুর, কুয়াকাটা, পাথরঘাটা, ঢালচর ও মনপুরাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আগে যে পরিমাণ ইলিশ বরিশালের মোকামে আসতো তা এখন আসছে না। আগে এসব মোকামের ইলিশ বরিশাল হয়ে বৈধ পথে ভারতে রপ্তানি হতো। বর্তমানে রপ্তানি বন্ধ থাকায় চোরাই পথে বিভিন্ন মোকাম থেকে ইলিশ চলে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের বাজারে। সরাসরি বঙ্গোপসাগর থেকেও নৌ-পথে ইলিশ পাচার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে বরিশালের মোকামের কদর কমে গেছে। বিপুল সংখ্যক ইলিশ ধরা পড়লেও দাম কমছে না। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে থেকে গেছে জাতীয় মাছের স্বাদ।