রাক্ষুসি সন্ধ্যা নদীর ভাঙ্গন ক্রমেই ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে

খোকন আহম্মেদ হীরা, বাবুগঞ্জ থেকে ফিরে ॥ বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সন্ধ্যা নদীর ভাঙ্গন ক্রমেই ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। ফলে আতংকিত হয়ে পরেছে নদীর তীরবর্তী সহস্রাধীক পরিবার। ইতোমধ্যে সরিয়ে নেয়া হয়েছে নদীর তীরের অসংখ্য বাড়ি-ঘর ও ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান। গত ২৪ আগস্ট রাতে আকস্মিক ভাবে সন্ধ্যা নদীর বাবুগঞ্জ উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর (রহিমগঞ্জ) লঞ্চ ঘাটের দশটি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান ও একটি মসজিদ নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পর আতংক আরো বেড়ে গেছে।

বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর (সাবেক আগরপুর) ইউনিয়নের সাবেক চেয়াম্যান সরদার খালেদ হোসেন স্বপন জানান, সন্ধ্যা নদীর ভাঙ্গন ভয়াবহ রুপ ধারন করায় গত ২৪ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে আকস্মিক ভাবে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর (রহিমগঞ্জ) লঞ্চ ঘাটের ১০টি দোকান ও একটি মসজিদ ৫ মিনিটের ব্যবধানে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এতে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও পুরো লঞ্চ ঘাট এলাকায় বড় ধরনের ফাঁটল দেখা দেয়ায় হুমকির মুখে রয়েছে লঞ্চ ঘাট এলাকার আরো দশটি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান। ফলে আতংকিত হয়ে ব্যবসায়ীরা লঞ্চ ঘাট থেকে দোকান ঘর ভেঙ্গে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারন সম্পাদক উপেন চন্দ্র মন্ডল জানান, রাক্ষুসী এ সন্ধ্যা নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে গত কয়েক বছরে নিঃস্ব হয়েছেন এ উপজেলার কয়েক হাজার পরিবার। প্রতি বছরই সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রীসহ একাধিক মন্ত্রী, এমপি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শনে এসে শুধু সাধারন মানুষদের কাছে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধের আশ্বাস দিয়েই যাচ্ছেন। কিন্তু এ আশ্বাস শুধু মুখেই থেকে যায় বাস্তবে এর কিছুই হচ্ছেনা।

সূত্রমতে, বাবুগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া আড়িয়াল খাঁ, সুগন্ধা ও সন্ধ্যা নদীর ভাঙ্গনের ফলে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটি ইউনিয়নই নদী ভাঙ্গনের স্বীকার হচ্ছে। বিগত ৮০ দশক থেকে নদী ভাঙ্গনের ফলে উপজেলার মানচিত্র ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার হাজার-হাজার মানুষ নদী ভাঙ্গনের ফলে গৃহহীন হয়ে পরেছে। রাক্ষুসি তিনটি নদী শুধু ঘরবাড়ি কেড়ে নিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি, কেড়ে নিয়েছে এ উপজেলার কয়েক শতাধিক মানুষের প্রান। রাক্ষুসি নদীগুলোর তান্ডবে মীরগঞ্জ বাজার, ফেরিঘাট, বরিশাল বিমান বন্দর, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর (দোয়ারিকা) সেতু, আবুল কালাম ডিগ্রী কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন স্মৃতি যাদুঘর ও পাঠাগার এখন চরম হুমকির মুখে রয়েছে। যেকোন মুহুর্তে এসব সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনাগুলো রাক্ষুসি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।