গৌরনদীর স্কুলছাত্র সাজ্জাদ হত্যা মামলা – জাতীয় সংসদের উপ-সচিবসহ আট পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ জাতীয় সংসদের উপ-সচিব পদে কর্মরত তৎকালীন বরিশাল জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্র্রেট মোঃ মুনিম হাসানসহ দু’পুলিশ পরিদর্শক (ওসি), তিন উপ-পরিদর্শক (এসআই), দু’সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই), গোয়েন্দা পুলিশের এক উর্দ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৪২ জন স্বাক্ষীর বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। বরিশালের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচার এ.কে.এম সলিম উল্লাহ গৌরনদীর স্কুলছাত্র সাজ্জাদ হোসেন (১৪) হত্যা মামলায় স্বাক্ষ্য প্রদান না করায় ৪২ জনের বিরুদ্ধে গত বুধবার এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

বিচারক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশে উল্লেখ করেন, আগামী ২ অক্টোবর ধার্য্য তারিখে স্বাক্ষীদের আদালতে উপস্থিত করার জন্য মাদারীপুর জেলার পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেয়া হয়। একইসঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আদেশের অনুলিপি মহা-পুলিশ পরিদর্শক বরাবরে প্রেরণের নির্দেশ দেয়া হয়। পরোয়ানা জারিকৃত উল্লেখযোগ্য স্বাক্ষীরা হলেন, বরিশাল জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্র্রেট জাতীয় সংসদের উপ-সচিব পদে কর্মরত মোঃ মুনিম হাসান, সিআইডি পুলিশের রাসায়নিক পরীক্ষক আঃ আউয়াল, গৌরনদী থানার তৎকালীন দুই ওসি আঃ মান্নান ও হুমায়ুন কবির, মামলার দু’তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই আলতাফ হোসেন, হুমায়ুন কবির, স্বাক্ষী একই থানার এসআই সোলায়মান, এএসআই কায়সার হামিদ, এএসআই আবু মুসা, কনস্টবল মোঃ সিদ্দিক।

জাতীয় সংসদে উপ-সচিব পদে কর্মরত বরিশাল জেলা প্রশাসনের তৎকালীন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ মুনিম হাসান বলেন, দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত থাকায় মামলায় স্বাক্ষী দেয়া সম্ভব হয়নি। শুনেছি গৌরনদীর স্কুলছাত্র সাজ্জাদ (১৪) হত্যা মামলায় আমার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। পরোয়ানা পেলে আদালতে স্বাক্ষি দিতে হাজির হবো। বরিশাল আদালতের পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) এ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন কাবুল জানান, গৌরনদীর মেদাকুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেনীর ছাত্র সাজ্জাদ হোসেনের তার সহপাঠী মৌসুমী আক্তারের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এতে মৌসুমীর চাচাতো ভাই ইমতিয়াজ আহম্মেদ শাওন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। হত্যাকান্ডের দু’মাস আগে মৌসুমীর জীবন থেকে সাজ্জাদকে সড়ে যাওয়ার জন্য শাওন হুমকি দেয়। এরজের ধরে ২০০৬ সনের ১৯ নবেম্বর প্রতিপক্ষরা সাজ্জাদকে পিটিয়ে হত্যা করে। এমনকি লাশ পুলিশ কিংবা তার পরিবারের সদস্যরা সনাক্ত না করতে পারে সেজন্য সাজ্জাদের মুখমন্ডলে এসিড দিয়ে ঝলসে দেয়া হয়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা মিন্টু মিয়া ২২ নবেম্বর অজ্ঞাতনামা আসামি করে গৌরনদী থানায় মামলা দায়ের করেন।

তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০০৭ সনের ২৪ আগস্ট শাওন, সৈয়দ কামরুল ইসলাম, নুরুজ্জামান ও রাজ্জাককে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০০৭ সনের ২৫ আক্টোবর ওই চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ৪৫ জন স্বাক্ষীর বিরুদ্ধে সমন জারি করেন আদালত। পরে সমন পেয়ে তিন জন আদালতে উপস্থিত হয়ে স্বাক্ষ্য দেন। তবে পাঁচ বছরে বাকি ৪২ জন স্বাক্ষীকে আদালতে স্বাক্ষ্য দানের জন্য একাধিকবার সমন দেওয়া হলেও তারা হাজির হননি। এর প্রেক্ষিতে গত বুধবার (৫ সেপ্টেম্বর) আদালত স্বাক্ষীদের বিরুদ্ধে উল্লেখিত নির্দেশ দেন।