গৌরনদীতে চাঁদার টাকায় চিকিৎসকদের বনভোজন

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সারাদিন অবস্থান নিয়ে আগত রোগী বিভিন্ন অভিযোগে জানাগেছে, গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডঃ হীরনময় হালদার বনভোজনে যাওয়ার উদ্যোগ গ্রহন করে অর্থ সংগ্রহ করতে ১৫ জানুয়ারী গৌরনদীতে কর্মরত বিভিন্ন ফার্মাসিটিকাল লিমিটেডের বিক্রয় প্রতিনিধিদের নিয়ে তার চেম্বারে বৈঠক করে বনভোজনের বাজেটের ২লক্ষ টাকার অর্ধেক তাদের কাছে দাবি করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, বনভোজনের খরচের অর্ধেক যোগান দেন গৌরনদীতে কর্মরত বিভিন্ন ফার্মাসিটিকাল লিমিটেডের বিক্রয় প্রতিনিধি। ৫০ হাজার টাকা প্রদান করে অবৈধ ভাবে গড়ে ওঠা স্থানীয় প্যাথলজী ও ডায়গনষ্টিক পরিচালকবৃন্দ, বাকি ৫০ হাজার টাকা গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মরত চিকিৎসক, কর্মচারী ও সেবিকারা নিজেদের চাঁদা গ্রহন করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্যাথলজী ও ডায়গনষ্টিক সেন্টারের পরিচালকরা অভিযোগ করেন, চিকিৎসকদের মোটা অংকের কমিশন প্রদান করলে তারা পরীক্ষা নিরিক্ষার জন্য রোগী পাঠান। সে ক্ষেত্রে যদি চিকিৎসকদের দাবী পুরন করা না হয় তা হলে চিকিৎসকরা আমাদের কাছে রোগী পাঠাবে না। আমাদের ব্যবসা লাটে উঠবে। যাদের দিয়ে আয় করব তাদের পেছনে ব্যায় করতে সমস্যা কোথায়। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল পর্যন্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবস্থান নিয়ে দেখা যায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত রোগীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। খাঞ্জাপুরের কমলাপুর গ্রামের সেকেন্দার হোসেন (৪০) উজিরপুরের শোলক গ্রামের শাহ আলম (৬০) নলচিড়া কলাবাড়িয়া গ্রামের মোখলেচ খলিফা, জাহানারা বেগম (৩৫) অভিযোগ করেন, সকাল থেকে এখানে এসেছি কিন্তু হাসপাতালে কোন ডাক্তার নার্স কিংবা কাউকেই পাওয়া যায়নি। হাসপাতালের সকল রুমগুলোই তালাবদ্ধ। রোগীদের সেবার কথা না ভেবে এভাবে হাসপাতাল শুন্য রাখায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

বিকেলে ৫টায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিজ কক্ষে বসে কথা হয় ডঃ জয়নাল আবেদীনের সাথে চিকিৎসক কর্মচারী ও সেবিকা শুন্য থাকা প্রসংঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবাই বনভোজনে গিয়েছে আমার শরীর খারাপ বলে আমি যাইনি। স্বাস্থ্য সহকারী আব্দুস সালাম এ প্রসংঙ্গে বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সবাই বনভোজনে যাওয়ায় এমনিতেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স শুন্য হয়ে পড়েছে। সারাদিনে রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। আমার দ্বারা যেটুকু সম্ভব সেটুক সেবা প্রদানের জন্যই আমি বনভোজনে যাইনি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রোগীরা অভিযোগ করেন সারাদিনে তাদের সেবায় কোন চিকিৎসক ও সেবিকারা ওয়ার্ডে আসেনি। বনভোজনে অংশ নেয়া একাধিক সদস্য জানান, দুটো বড় যাত্রীবাহী বাস, চারটি মাইক্রোবাস নিয়ে প্রায় ২লক্ষ টাকা ব্যয় করে যশোর গিয়ে বিলাস বহুল ভুরিভোজের মাধ্যমে এ বনভোজন করা হয়।

চাঁদা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে বনভোজনের প্রধান উদ্যোক্তা ও গৌরনদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ রবিন্দনাথ গাইন বলেন, নিজস্ব চাঁদায় এ আয়োজন করা হয়। হাসপাতালে সারাদিনে চিকিৎসক, সেবিকা শুন্য থাকায় রোগীদের দুর্ভোগ প্রসংঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুক্রবারের ছুটিতে এ আয়োজন করা হয়। বরিশাল ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন এ এস, আব্দুস সত্তারের কাছে চাঁদা আদায় করে বনভোজনের আয়োজন প্রসংঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাঁদা আদায়ের কথা আমার জানা নাই তবে আমার কাছে অনুমতি চাইলে আমি তাদেরকে কারো কাছ থেকে ডোনেসন না নিয়ে ব্যাক্তি গত খরচে বনভোজনের পরামর্শ দিয়েছি।

সর্বস্বত্বঃ এইচ,এম সুমন