শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষিত

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আগৈলঝাড়া উপজেলার আলোশিখা রাজিহার সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র মারিয়া ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার নামের একটি নতুন প্রকল্প হাতে নেন। ওই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন উপলক্ষে দাতা সংস্থা নেদারল্যান্ডের এসকে ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জে স্পিয়ারের গতকাল শুক্রবার সকাল ১১ টায় থানা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার দুরত্বে রাজিহারে আসেন। তাকে অভ্যার্থনা জানাতে বরিশাল, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার ৪০টি প্রি-ক্যাডেট স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সকাল থেকে টানা ৪ ঘন্টা রাস্তার দু’পার্শ্বে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।
জল্লা প্রি-ক্যাডেট স্কুলের ছাত্র অভিভাবক হায়দার আলী জানান, জে স্পিয়ারের আগমন উপলক্ষে ৪০টি প্রি-ক্যাডেট স্কুলের সহস্রাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থীদের গতকাল শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে ১১টা পর্যন্ত রাস্তার দু’পার্শ্বে লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। সাতলা প্রি-ক্যাডেট স্কুলের ছাত্রী অভিভাবক রোকসনা বেগম অভিযোগ করেন, এনজিও আলোশিখা রাজিহারের উদ্যোগে এসব প্রি-ক্যাডেটের শিক্ষার্থীদের টিফিন (নাস্তা) দেয়ার সুযোগ নিয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের দিয়ে শিক্ষার্থীদের হাজির করতে বাধ্য করেন। তিনি আরো বলেন, সেই ভোরে ১২ কিলোমিটার দুর থেকে সাড়ে ছয়টার সময় ৬ বছরের কন্যাকে নিয়ে আসি কিন্তু অতিথি আসেন বেলা ১১টার পরে। কর্তৃপক্ষের এই কালচার পরিহার করা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সূত্রমতে, অতিথি জে স্পিয়ারের সকাল ৯টায় আসার কথা থাকলেও এনজিও কর্তৃপক্ষ সকাল সাতটার মধ্যেই তাকে অভ্যার্থনা জানাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রাচীন লোকগাঁথা অনুযায়ী স্বপ্নের ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে রাজিহার ব্রিজের নিকট শিক্ষার্থীদের দাঁড় করিয়ে রাখেন। বেলা ১১ টার দিকে অতিথিকে বরন করা হয়।

দীর্ঘ ৪ ঘন্টা শীত ও রোদকে উপেক্ষা করে লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা গোপালগঞ্জ জেলার জহরেরকান্দি, ভূতেরবাড়ি, নৈয়ারবাড়ি, মাদারীপুরের কালকিনি, ডাসার, বরিশালের উজিরপুর, সাতলা, হারতা, জল্লা, কুড়ুলিয়াসহ ৪০টি প্রি-ক্যাডেট স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা ক্ষুধা ও পানি পিপাসায় কাতরাতে দেখা গেছে। এসময় অনেক শিক্ষার্থী ক্লান্তিতে রাস্তার ওপর বসে পরে আবার কেউবা মায়ের কোলে ঘুমিয়ে পরে।

নামপ্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রি-ক্যাডেট স্কুলের অধ্যক্ষ জানান, এই ৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের এনজিও আলোশিখা রাজিহার সপ্তাহে নিয়মিত একদিন বিনামূল্যে টিফিন (নাস্তা) সরবরাহ করে থাকে। ফলে এনজিও’র কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভোর থেকে লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।

এ ব্যাপারে আলোশিখা রাজিহারের নির্বাহী পরিচালক মৃদুল হালদার বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরাই নিজেদের উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের নিয়ে এসেছেন। অভ্যার্থনার বিষয়টির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের বহিঃভূত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। আমাদের এসব প্রি-ক্যাডেট স্কুল অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আওতায় পরে না। সপ্তাহে একদিন শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে খাবার দেয়ার কথা তিনি স্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর বিশ্বাস বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে শিশুদের কেউ লাইনে দাঁড় করিয়ে অভ্যার্থনার আয়োজন করলে তদন্ত পূর্বক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।