রাজাকার পাকিস্তানি কুলাঙ্গার ত্রিদিব রায়ের ডাম্পিং প্লেস আমার বাংলাদেশ না

ফজলুল বারী : পার্বত্য চট্টগামের আদিবাসী পাহাড়ি ভাইবোনদের জাতিসত্ত্বার স্বাতন্ত্র রক্ষা সহ যৌক্তিক সব দাবিকে সমর্থন করি। এ ব্যাপারে সারাজীবন লিখে আসছি এবং আগামিতেও লিখে যাবো। কিন্তু অযৌক্তিক কোন আবদার শুনবো-মানবো না। এমন একটি অযৌক্তিক আবদার এখন আমাদের সামনে। যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমদের মতো আরেক কুলাঙ্গার বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরোধিতাকারী তৎকালীন চাকমা
রাজা ত্রিদিব রায় সম্প্রতি তার প্রিয় ভূমি পাকিস্তানে মরেছেন। যে কুলাঙ্গার লোকটি বাংলাদেশকে পছন্দ করেনি না, মানেনি বলে মুক্তিযুদ্ধের পরপর পালিয়ে বার্মা-ভারত হয়ে পাকিস্তানে চলে যায়, আমৃত্যু সেখানে থেকে আত্মস্বীকৃত দেশদ্রোহীর বেশে পাকিস্তানের গোলামী করেছে, মরেছেও সেখানে, মৃত্যুর পর তার মৃতদেহ বাংলাদেশে আনার এত মায়াকান্না কেন?

ত্রিদিব রায়ের ছেলে ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় বর্তমান চাকমা রাজা। পার্বত্য চট্টগামের আদিবাসী পাহাড়ি জুম্ম জনগোষ্ঠীর আন্দোলন-সংগ্রাম, অধিকার আদায়ে দেবাশীষ রায় আমাদের কাছে প্রশংসিত একটি নাম-চরিত্র। বাবা’র মৃত্যুতে শোকার্ত ছেলে হিসাবে দেবাশীষ অনেক কিছুই করার চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু তিনি কি আমাদের চেতনা-অনুভূতির সীমানা মাড়িয়ে কিছু করার চেষ্টা করছেন? না করে ফেলেছেন? দেবাশীষ রায় তার ফেসবুকের ওয়ালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী তার বাবা’র মরদেহ দেশে আনার অনুমতি দিয়েছেন! সত্যি কি তাই? তা যদি হয়ে থাকে তাহলে প্রধানমন্ত্রীকে এ সিদ্ধান্ত বদলাতে হবে। আপনি প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে আমাদের প্রশংসা নেবেন, আর আরেক দাগী চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানি ত্রিদিব রায়ের কবরের জায়গা তথা ডাম্পিং প্লেস করতে চাইবেন আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে, এটা আমরা মানবো না। হতে দেবো না।

রাজাকার ত্রিদিব রায়ের লাশ যখন নিয়ে যখন লিখতে বসেছি, তখন আরও কিছু কথা বলি। অবজারভারের মালিক সম্পাদক হামিদুল হকও এমন বড় দাগের এক রাজাকার, বাংলাদেশ বিরোধী ছিল। এরশাদ আমলে ঢাকায় তার মৃত্যুর পর একটা লেখায় লিখেছিলাম, হামিদুল হকের স্বজনরা ঠিক কাজটি করেননি। এমন একজন সাচ্চা পাকিস্তানির কবর যদি পাকিস্তানে হতো, তবে তার আত্মা শান্তি পেতো! আমরা ঢাকায় তখন গুটিকয়েকজন এভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে খোলাখুলি লিখতাম। এখন যারা দেশের অনেক বাঘা সাংবাদিক-রাজনীতিক-টক’শো স্পেশালিস্ট, তাদের অনেকেও সেই লেখাটায় উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন! লন্ডনে এক প্রবাসী বাংলাদেশি বৈঠকে একজন একান্তে এসে বলেন, আপনার লেখা পছন্দ করি, কিন্তু একজন মুসলমান হিসাবে একজন মুসলমানের মৃত্যুর পর হামিদুল হককে নিয়ে আপনার ওই লেখাটা মানতে পারিনি। এই লোকটির মঞ্জিল-সাকিনও পরে পেয়েছি। বিলাতে জামায়াত-যুদ্ধাপরাধীদের খাস চাকরদের তিনি একজন। কাজেই আমাকে এমন একটি বার্তা পৌঁছে দেয়াটা তার বেতনের শর্তের মধ্যে ছিল!
পাকিস্তানি রাজাকার ত্রিদিব রায়ের মৃত্যুর পর আমার অনেক পাহাড়ি বন্ধুকেও ফেসবুকে কান্নাকাটি করতে দেখেছি। অথচ এরা পার্বত্য চট্টগামের আদিবাসী পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর আন্দোলন সংগ্রামের সূত্রেই আমার অথবা আমাদের বন্ধু। এমন একটি বাংলাদেশ বিরোধী চরিত্রের বিদায়ে তাদের কান্নার কারন বুঝিনি। ত্রিদিব রায়তো আর দেবাশীষ রায়ের বাবা’র মতো তাদের বাবা না। পাহাড়ি জুম্ম জনগোষ্ঠীর জন্য মানবেন্দ্র লারমা বা সন্তু লারমাদেরও যে ত্যাগ-তিতীক্ষা আছে, সামন্ত রাজা ত্রিদিব রায়ের তা নেই। উল্টো সেতো একজন আত্মস্বীকৃত দেশদ্রোহী। পাকিস্তানি কুলাঙ্গার! এমন একজন আত্মস্বীকৃত দেশদ্রোহী, পাকিস্তানি কুলাঙ্গারের মৃত্যুতে তাদের বিরহ-কান্নার কারন কি, তাও তাদেরকে আমাদের খোলাসা করে বলতে হবে। ফেসবুকে আমাকে একজন একটি লিঙ্ক পাঠিয়েছেন! পার্বত্য চট্টগামের শান্তি চুক্তি বিরোধী বিশেষ একটি বাহিনীর সৃষ্ট একটি সংগঠন রীতিমতো পেজ খুলে ত্রিদিব রায় ইস্যুতে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোকজনকে ধুয়ে দিচ্ছে! পাকিস্তানি রাজাকার দেশদ্রোহী কুলাঙ্গার ত্রিদিব রায়ের মরদেহ যদি শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নিয়ে এসে শেষকৃত্যের অনুমতি দিয়ে থাকেন, তাহলে এসবের দায়দায়িত্ব তার।

এ সুযোগে শেখ হাসিনার সরকারকে আরও কিছু কথা বলি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় নেতৃ্ত্বইসশুধু আওয়ামী লীগ দেয়নি, এ দলটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূলধারার এখনও সবচেয়ে বড় দল। এখনও যে আমরা পাকি রাষ্ট্রটাকে ঘৃণা করি, ঘৃণা করি ক্রিকেটদল সহ এর সবকিছুকে, পাকিস্তানিদের কাছ থেকে পাওনা হিস্যা আদায় থেকে শুরু করে, জনপ্রিয় অনেক দাবির রূপকারও আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির জন্মের চল্লিশ বছর পর এসে একাত্তরের ঘৃণ্য ঘাতক-দালাল-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর মাধ্যমে নতুন একটি মাইল ফলক সৃষ্টি করেছে আওয়ামী লীগ নামে দলটি। এবার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে অনেক ব্যর্থতা-স্বপ্নভগ্নের মাঝেও এ দলটির বড় সৃষ্টিটি চিহ্নিত হয়ে থাকবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। এবং আমি বারবার যে কথাটি বলি তাহলো, এ দলটি ক্ষমতায় থাকা পর্যন্ত এ বিচারের যতটা হবার ততটা হবে। এ সরকার আগামিতে ক্ষমতায় না ফিরতে পারলে বন্ধ হয়ে যাবে এ বিচার! কারন এ বিচার করার নিয়তে খালেদা জিয়া তাদেরকে নিয়ে আন্দোলন করছেন না। আর সে সরকারই কিনা একাত্তরের দাগী এক যুদ্ধাপরাধীর বাংলাদেশের পবিত্র ভূমিতে শেষকৃত্যের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে! 

আমার এক বন্ধু নির্ঝর চৌধুরী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘রাঙামাটির বুড়িঘাটেই শুয়ে আছেন আমাদের অন্যতম বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আবদুর রউফ। সহযোদ্ধাদের জন্য নিরাপদ পথ তৈরি করে দিতে গিয়ে একাই লড়ে নিজে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিলেন শত্রুর গুলিতে। সেই মাটিতেই বিশেষ মর্যাদায় সমাহিত হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী ৮ নম্বর দালাল ত্রিদিব রায়! শুনেছি, রাঙামাটিতে রীতিমতো নাগরিক শেষকৃত্য কমিটি হয়েছে, গোপনে চলছে বিপুল আয়োজনের প্রস্তুতি। একাত্তরে যে লোকের ইশারায় পাকিস্তানি হানাদাররা শত শত মায়ের বুক খালি করেছে, দেশের পর দেশ ঘুরে যে লোক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে গেছে, সেই কুলাঙ্গারের লাশ যখন শাহজালাল বিমানবন্দরের রানওয়েতে নামবে, বোবা কান্নায় একটু কি কেঁপে উঠবে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এই দুঃখিনী বাংলাদেশ?’

শেখ হাসিনাকে সাফ ভাষায় বলছি, বন্ধ করুন এসব ডাবল স্ট্যান্ডার্টের রাজনীতি। বাংলাদেশকে পাকিস্তানি রাজাকারদের ডাম্পিং প্লেস, ভাগাড়, কবরস্থান বানাবেন না। পারলে যে খুনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে, ফাঁসি অথবা মৃত্যুর পর তাদের কবরও তাদের প্রিয়ভূমি পাকিস্তানে করার ব্যবস্থা করুন। পাকিস্তানি ত্রিদিব রায়কে দিয়ে শুরু হোক সে পর্ব। পাকিস্তানি রাজাকার কুলাঙ্গার ত্রিদিব রায়ের লাশ যাতে বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে, রাঙ্গামাটিতে যাতে নামতে না পারে, সে ব্যাপারে প্রতিরোধ তৈরি করো বাংলাদেশবাসী। কোন ছলচাতুরির মাধ্যমে কেউ যদি সে শেষকৃত্য বা কুলাঙ্গারের কবর রাঙ্গামাটিতে করে, সেটি যেন হয় জাতির ঘৃণার স্তম্ভ, শিয়াল কুকুরের ভাগাড়!

অন্যতম সম্পাদক, এইদেশ নিউজ