বরিশালের আড়িয়াল খাঁ নদীতে পুলিশ পাহারায় মা ইলিশ শিকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রশাসন যখন মা ইলিশ রক্ষায় কঠোর নজরদারি করছেন, ঠিক সেই মুহুর্তে পুলিশ পাহারায় নদীতে চলছে ইলিশ শিকারের মহাউৎসব। ঘটনাটি বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহমান আড়িয়াল খাঁ নদীর। গত দু’দিন যাবত ২০/২৫ জন জেলে দিয়ে মা ইলিশ শিকার করছে উপজেলার সরিকল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের কতিপয় পুলিশ সদস্যরা।

এলাকাবাসী, জেলে ও স্থানীয় পুলিশ প্রসাশনের সাথে আলাপকরে জানা গেছে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত ১১ দিন নদীতে ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকারের মৎস্য বিভাগ। এ সময়ে মা ইলিশ ডিম ছেড়ে থাকে। প্রজনন মৌসুম হওয়ায় গভীর সমুদ্র থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ মিঠা পানিতে ছুটে আসে। ফলে জেলেরা জাল ফেললে এতে ডিমওয়ালা প্রচুর মাছ ধরা পড়ে। তাই দেশের ইলিশ তথা মৎস্য সম্পদ রক্ষার পাশাপাশি মাছের বংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার এ সময় ১১ দিন নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছে।

মুলাদী উপজেলার চরলক্ষীপুর খালাসীরচর গ্রামের মৎস্যজীবি জহির হাওলাদার, শামীম বেপারী, নন্দীর বাজার গ্রামের সবুজ হাওলাদার, চরকালেখাঁ গ্রামের মিজানুর রহমান অভিযোগ করেন, গৌরনদী উপজেলার সরিকল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক মাহাবুবুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গত রবি ও সোমবার রাতভর পাহারায় থেকে আড়িয়াল খাঁ নদীর গৌরনদী উপজেলার মিয়ারচর থেকে মোল্ল¬ারহাট পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার নদী এলাকায় স্থানীয় ২০/২৫ জন জেলেকে নিয়ে অবাধে মা ইলিশ শিকারের মহাউৎসবে মেতে উঠেছেন। হোসনাবাদ গ্রামের গনি বয়াতী, সরোয়ার আলমসহ একাধিক ব্যক্তিরা জানান, এসব মাছ স্থানীয় আড়ৎতে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে সচেতন মহলের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

গৌরনদী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রনব কুমার বিশ্বাস ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গতকাল মঙ্গলবার সকালে আমি ব্যক্তিগত কাজে হোসনাবাদ বাজারে গেলে স্থানীয়রা আমার কাছে উল্লেখিত বিষয়ে অভিযোগ করেন। তাৎক্ষনিক অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। অভিযোগ অস্বীকার করে সরিকল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘এ সব পত্রিকায় লিখে কি লাভ। একপর্যায়ে তিনি বলেন, সোমবার রাতে অবশ্য আমি নদীর পাড়ে গিয়েছিলাম’। গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালাম বলেন, এ ব্যাপারে আমি একাধিক অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
   
ইলিশ কেনার অপরাধে তিনজনের জরিমানা : ইলিশ মাছ ধরা, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ ও বহন নিষিদ্ধ থাকা সত্বেও ইলিশ ক্রয়ের অভিযোগে সোমবার রাতে ভ্রাম্যমান আদালত তিনজনের কাছ থেকে জরিমানার টাকা আদায় করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে বরিশালের সদর উপজেলার চরবাড়িয়া গ্রামের গাজীর খেয়াঘাট এলাকায়।

জানা গেছে, সোমবার রাতে বেসরকারী সংস্থা আশা’র তালতলী ব্রাঞ্চের ব্যবস্থাপক নুুরুল ইসলাম, বরগুনার তুষখালী গ্রামের সেকান্দার আলীর পুত্র খোরশেদ আলম, সদর উপজেলার চরবাড়ীয়া ইউনিয়নের দনিলামছরি গ্রামের খালেক ফকিরের পুত্র নান্নু ফকির তিনজনে ৪৫ কেজি ইলিশ মাছ ক্রয় করেন। ইলিশ মাছ ক্রয়-বিক্রয়ের খবর পেয়ে কাউনিয়া থানা ও মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই তিনজনকে আটক করে। পরে তাদের  ভ্রাম্যমান আদালতে সোর্পদ করা হয়। ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী হাকিম মোঃ কামরুজ্জামান ইলিশ মাছ কেনার অপরাধে ওই তিনজনকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। পরবর্তীতে জরিমানার টাকা দিয়ে তারা মুক্তি পান। একই সাথে ক্রয়কৃত ৪৫ কেজি ইলিশ স্থানীয় এতিমখানায় বিতরন করা হয়েছে।