অদৃশ্য সর্পদংশনে যুবকের মৃত্যু – অসুস্থ্য অর্ধশতাধিক গ্রাম জুড়ে আতঙ্ক

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ গৌরনদী উপজেলার সীমান্তবর্তী কালকিনি উপজেলার রমজানপুর ইউনিয়নের উত্তর চরআইড়কান্দি গ্রামে অদৃশ্য সর্পদংশনে ফয়সাল সরদার (১৮) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে আরো অর্ধশতাধিক মানুষ। ফলে পুরো গ্রাম জুড়ে চরম আতঙ্ক দেখা  দিয়েছে। গত দু’সপ্তাহ ধরে উক্ত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। এরইমধ্যে প্রাণের ভয়ে বসতভিটে ছেড়ে পালাচ্ছেন গ্রামবাসী। এনিয়ে কতিপয় ওঝাঁ ফিকিরের নামে বাণিজ্যে নেমেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অদৃশ্য সর্পদংশনে যুবকের মৃত্যু - অসুস্থ্য অর্ধশতাধিক গ্রাম জুড়ে আতঙ্কপ্রত্যক্ষদর্শী ও ভূক্তভোগীরা জানায়, গত দু’সপ্তাহ পূর্বে উত্তর চরআইড়কান্দি গ্রামের বাবুল সরদারের পুত্র ফয়সাল সরদারের পায়ে চরম ব্যাথার সৃষ্টি হয়। পর্যায়ক্রমে ওই ব্যাথা তার সারাশরীরে ছড়িয়ে পড়ে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর পরই ওই গ্রামের কিরন তালুকদার, শারমিন বেগম, রুমা বেগম, ইকবাল হোসেন, রায়হান সিকদার, জিয়াসমিন, বকুল বেগম, খাদিজা বেগম, মুক্তা বেগম, সোহানা আক্তার, লতিফ হোসেনসহ অর্ধশতাধিক গ্রামবাসী পর্যায়ক্রমে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। স্থানীয় ওঝাঁরা তাদের বিষ নামিয়ে দিলে তারা সুস্থ্য হয়ে ওঠে। ভূক্তভোগী ইকবাল হোসেন বলেন ‘হঠাৎ করে আমার পায়ে জ্বালাপোড়া অনুভব করি। পরে ব্যাথা সারা শরীরে ছড়িয়ে পরে। তবে ওঝা বিষ নামানোর পরে সুস্থ্য হয়ে উঠি। আমাকে আছরা সাপে কামড় দিয়েছে, সাপ দেখা যায়না, তবে কামড়ের বিষ অনুভব করা যায়’। তারমত ভূক্তভোগী অসংখ্য ব্যক্তিরা একই কথা বলেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আটজনের একটি ওঝাঁড় দল উঠানে একটি কলাগাছ গেড়ে ঢোল বাদ্য বাঁজিয়ে রাহিমা বেগম নামের এক গৃহবধুর বিষ নামাচ্ছেন। অদৃশ্য আছরা সাপ তাকে পায়ে কামর দিয়েছে। বিষ নামানোর আগে আটটি নতুন লুঙ্গি ও গামছা এবং একটি পিতলের কলস নিয়েছে ওঝাঁড়া। এছাড়াও নগদ ২১ হাজার টাকা দেয়ার চুক্তি রয়েছে তাদের সাথে। অন্যদিকে আগাম ফিকিরের জন্য দেয়া হচ্ছে পাটের দড়ি, সরিশার তৈল ও ইদুরের গর্তের মাটি পড়া।

স্থানীয় বাসিন্দা নকিবুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে অদৃশ্য সর্প দংশনের আতঙ্কে আমাদের গ্রামের অনেকেই ঘর বাড়ি ফেলে রেখে দূরের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। এ ব্যাপারে ওঝাঁ সর্দার মোঃ আলী আকবার ফকির বলেন ‘এটি আছরা সাপের কাজ, তাদের দেখা যায়না তবে কামড় অনুভব করা যায়। আছরা সাপের এ গ্রামটিকে পছন্দ হয়েছে তাই এখানের লোকজন আক্রান্ত হচ্ছেন। ফয়সালও একই কারনে মারা গেছে। তিনি আরো জানান, ফিকিরের জন্য কিছু হাদিয়া নেয়া হয়, তবে পুরো গ্রামে বন্ধনা দেয়া হবে যাতে আর আছরা সাপ ঢুকতে না পারে।’