বরিশালে জীবন বীমার ২৫ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বরিশালে জীবন বীমা কর্পোরেশনের ২৫ লক্ষ টাকা আত্মসাতের তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। কর্পোরেশনের অভ্যন্তরীণ অডিটেও ওই টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু পাঁচ কর্মচারীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে, জীবন বীমার ম্যানেজার তপন কুমার চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে। সিআইডি টাকা আত্মসাতের তদন্ত শুরু করার মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে তপন কুমারকে খুলনার ম্যানেজার হিসেবে বদলি করা হয়েছে। গত ৯ অক্টোবর তপন কুমার নতুন ম্যানেজার গৌতম কুমারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে খুলনায় চলে গেছেন।

বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায় সিআইডির জিডি অনুসন্ধান করে জানা গেছে, ২০১১-২০১২ অর্থ বছরে জীবন বীমা কর্পোরেশনের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ে ৮৫টির বেশি ল্যাপস বীমার (তামাদি বীমা) টাকা কাগজে কলমে জমা দেখিয়ে তা গ্রাহকদের নামে একাউন্ট খুলে উত্তোলন করে আত্মসাত করা হয়েছে। যারা বীমার কিস্তি না দিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন এবং অন্যত্র বদলি হয়ে গেছেন বা কোন কারণে পলিসির টাকা জমা দেননি তাদের হিসাব নম্বরকে বেঁছে নিয়েই ম্যানেজার (ইনচার্জ) ও তার সহযোগীরা এ টাকা আত্মসাত করেন। লেজার বইয়ের বদলে চলতি বছর বীমার সকল পলিসি ডিজিটাল পদ্ধতিতে করার লক্ষ্যে আলাদা কম্পিউটার সফটওয়ারে তোলার পর বিপুল পরিমাণ টাকার ঘাটতি দেখা দেয়। কর্পোরেশনের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে তিন মাস আগে অডিট টিম পাঠানো হয় বরিশালে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ম্যানেজার (গ্র“প শাখা) আব্বাস উদ্দিন, ডেপুটি ম্যানেজার (আইটি বিশেষজ্ঞ) ও ডেপুটি ম্যানেজার (অডিট শাখা) তদন্ত করে ২৫ লক্ষ টাকা আত্মসাত করার প্রমাণ পান। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ম্যানেজার (ইনচার্জ) অরুন কুমার চক্রবর্তী পাঁচজনকে সাসপেন্ড করেন। এদেরমধ্যে নিম্নমান সহকারী মিজানুর রহমান ও ডেভেলপমেন্ট অফিসার মনিরুজ্জামান ৮২টি চেক গ্রহণ করেছেন বলে ম্যানেজার অরুন কুমার জানান। এতগুলো চেক কর্পোরেশনের কর্মচারীদ্বয়ের হাতে তুলে দেয়ার ব্যাপারে এবং চেক গ্রহিতাদের ছবি মিলিয়ে দেখা হয়েছিল কি না তার কোন উত্তর দেননি অরুন কুমার। বিষয়টি গোপন সূত্রে জানতে পেরে সিআইডির ইন্সপেক্টর সেলিম শাহনেওয়াজ গত ২৪ সেপ্টেম্বর কোতয়ালী মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করে তদন্ত শুরু করেন। তিনি অডিটে আসা কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে ২৫ লক্ষ টাকা আত্মসাতের তথ্য পান। কিন্তু ম্যানেজার (ইনচার্জ) অরুন কুমার তাকে তদন্তকালে কোন নথিপত্রতো দূরের কথা তথ্য দিতেও অপরাগতা প্রকাশ করেন। সিআইডি থেকে একাধিকবার সরকারি টাকা উদ্ধারে তাকে মামলা করতে বলা হলেও তিনি মামলা করতে রাজি হননি। নিরুপায় হয়ে সিআইডি ইন্সপেক্টর বিষয়টি লিখিতভাবে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (অপরাধ বরিশাল)-এর মাধ্যমে অতিরিক্ত আইজিপি (সিআইডি)-কে অবহিত করার পাশাপাশি পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে দিক নির্দেশনা চান। সিআইডির উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ম্যানেজার অরুন কুমারকে মামলা করতে বলেন। কিন্তু তিনি মামলা না করে এক সপ্তাহ মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে তড়িঘড়ি করে গত ৯ অক্টোবর বদলি হয়ে খুলনায় চলে যান। একদিন খুলনার আঞ্চলিক ম্যানেজার গৌতম কুমার এখানে এসে যোগদান করেন। নতুন ম্যানেজার গৌতম কুমার বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি, কিন্তু বিস্তারিত কিছু বলতে পারবো না।’ গত ৭ মে এখানে যোগদান করেছিলেন অরুন কুমার। ছয় মাস পার হতে না হতেই তার এ বদলি রহস্যজনক বলে জানিয়েছেন কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

সিআইডির ইন্সপেক্টর সেলিম শাহনেওয়াজ জানান, ম্যানেজার অরুন কুমার চক্রবর্তীর দপ্তরে একাধিক নথি দেখার জন্য গেলেও তিনি তেমন কোন তথ্য দেননি। একাধিকবার তাকে সিআইডি কার্যালয়ে তলব করা হলেও তিনি আসনেনি। সরকারি টাকা উদ্ধারে তিনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোন সহযোগীতাই করেননি বলে পরিদর্শক সেলিম শাহনেওয়াজ উল্লেখ করেন। এ ব্যাপারে সিআইডির পুলিশ সুপার (অপরাধ বরিশাল) এম মাহবুব আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সরকারি টাকা উদ্ধারে সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের আন্তরিকতা দরকার। বিধিঅনুযায়ী এসব ঘটনায় সাধারণত বীমা কর্তৃপক্ষ মামলা করে টাকা আদায় করেন। কিন্তু বীমা কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা যেহেতু সিআইডিকে সহযোগীতা করছে না সেহেতু বিষয়টি দুদককে জানানো ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। এসব দুর্নীতি ও সরকারি টাকা আত্মসাতকারীদের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা করার এখতিয়ার রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।