অভিবাসীদের সহায়তায় কাজ করছে গৌরনদীর সাংবাদিক ফোরাম

মোঃ জামাল উদ্দিন ॥ অভিবাসীদের সহায়তায় দীর্ঘদিন থেকে কাজ করছে ব্র্যাকের নিরাপদ সহয়তা প্রকল্পের গৌরনদীর সাংবাদিক ফোরাম। উক্ত ফোরামের সহয়তায় ইতোমধ্যে আদম ব্যাপারীদের দ্বারা প্রতারিত ১২ জন যুবক-যুবতী তাদের  ১৫ লক্ষাধিক টাকা ফেরত পেয়েছেন। তাদের লেখালেখির কারণে বিদেশ থেকে গৌরনদীর ৫ জন যুবক ও ২ যুবতীর লাশ তাদের পরিবারের কাছে পৌঁছেছে। মৃত ব্যাক্তির লাশের অভিবাসীদের সহায়তায় কাজ করছে গৌরনদীর সাংবাদিক ফোরামদাফন কাফন ও ইন্সুরেন্সের টাকা পেয়েছেন তাদের পরিবার পরিজন।

উপজেলার দিয়াশুর গ্রামের শাহিন হাওলাদার ও একই গ্রামের ইউসুব আলী বেপারী অধিক বেতনের আশায় মালদ্বীপ গিয়েছিল। এরা প্রত্যেকে ধারদেনা করে আদম ব্যাপারীর হাতে তুলে দিয়েছিল নগদ ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। বাটাজোর ইউনিয়নের শৌলকর গ্রামের জালাল বেপারী ৩ মাসের ভ্রমন ভিসায় তাদের মালদ্বীপ পাঠায়। বাংলাদেশ থেকে তাদের সড়ক পথে ভারতে নেয়ার পর তাদের মালদ্বীপ পাঠানো হয় জাহাজে করে। সেখানে গিয়ে বিপাকে পড়েন শাহিন ও ইউসুব। তাদেরকে মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে নেয়া হয়। কাজ কর্ম নেই, পুলিশের ধরপাকড় এড়াতে তারা কিছুদিন পালিয়ে থাকেন। পরবর্তীতে দেশ থেকে বিমানের টিকেটের টাকা পাঠানোর পর তারা দেশে ফিরে আসেন। একইভাবে দিয়াশুর গ্রামের ছালাম তালুকদার চর রমজানপুর গ্রামের বাবুল করিরাজের মাধ্যমে দুবাই গিয়ে প্রতারিত হয়। তারা সম্পর্কে মামাতো ফুফাতো ভাই। চরদিয়াশুর গ্রামের মিলন ঘরামী একই গ্রামের আজাহার সরদারের মাধ্যমে কুয়েত গিয়ে প্রতারনার শিকার হন। ইউসুব, শাহিন, মিলন ও ছালাম প্রতারিত হওয়ার পর তারা টাকা ফেরত পাবার আশায় প্রশাসনসহ বিভিন্ন জায়গায় ধর্না দিয়ে ব্যর্থ হন। অবশেষে গৌরনদীর সাংবাদিক ফোরামের চাপে আদম ব্যাপারী জালাল, আজাহার ও বাবুল তাদের সমূদয় টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হন। গৌরনদীর বাসুদেবপাড়া গ্রামের স্বপন হাওলাদার দুবাই যাওয়ার আশায় কালকিনির উত্তর রমজানপুর গ্রামের দুলাল হাওলাদারের কাছে ২ লাখ টাকা প্রদান করেন। কিন্তু স্বপন প্রতারনার শিকার হন। অবশেষে গৌরনদীর সাংবাদিক ফোরাম তার টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করে।

উপজেলার ধানডোবা গ্রামের মাহিনুর বেগম, হাসমোতারা লিপি, মাসুদা বেগম, মঞ্জুয়ারা বেগম ও চম্পা বেগমকে একইগ্রামের আদম ব্যাপারী হালিম ওমান পাঠিয়েছিলো। এরা সবাই নিতান্ত গরীব ও অসহায়। ওমানে আদম ব্যাপারি হালিমের স্ত্রী আছিয়া থাকেন, সে সুবাদে হালিম তাদেরকে সেখানে পাঠায়। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে হালিম আদায় করেছিল ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। কথাছিল তাদের সকলকে বাসা বাড়িতে অধিক বেতনে চাকুরি দিবে আছিয়া। ওমানে পৌছার পর তারা সেখানে নানাভাবে হয়রানী ও প্রতারনার শিকার হন। কিন্তু আছিয়া তাদের কোন সহায়তা করেনি। কয়েক মাস পর তারা সবাই শূন্য হাতে দেশে ফিরে আসেন।

গৌরনদীর কটকস্থল গ্রামের দিনমজুর রহমান বেপারির স্ত্রী তারা ভানু বেগম পরিবারের আর্থিক সমস্যা লাঘবের জন্য লেবানন গিয়েছিলেন। বাঘমারা গ্রামের ফারুক বেপারি ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাকে লেবানন পাঠায়। কিন্তু তিনি ও প্রতারিত হন। নিরূপায় হয়ে প্রতারিত ৬ রমনী গৌরনদীর সাংবাদিক ফোরামের দ্বারস্থ হন। ফোরামের সহায়তায় আদম ব্যাপারি হালিম ও ফারুক তাদের সকলের টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হন। গৌরনদী সাংবাদিক ফোরাম পাসপোর্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশি হয়রানী বন্ধে কাজ করে আসছে। পাসপোর্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে নানাভাবে হয়রানীর শিকার হচ্ছিলেন গৌরনদীর বহু বিদেশগামী মানুষ। তাদের লেখালেখির কারণে গৌরনদীতে পাসপোর্টের কাজে নিয়োজিত পুলিশের বিশেষ শাখার অভিযুক্ত এএসআই শাহজালাল ও রফিকুল ইসলামকে কয়েক মাস আগে গৌরনদী থেকে প্রতাহার করা হয়। এরপর থেকে পুলিশ হয়রানী বন্ধ হয়েছে।

গৌরনদীর সাংবাদিক ফোরাম, জনশক্তি ব্যুরো ও স্থানীয় ব্র্যাক প্রবাসীদের কল্যানে যৌথভাবে কাজ করছে। এদের সহায়তায় গৌরনদীর বিভিন্ন এলাকার ৭ জন প্রবাসীর লাশ ইতোমধ্যে তাদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। এসব লাশের পরিচয় হলোঃ গৌরনদীর বোরাদী গরঙ্গল গ্রামের ওয়াজেদ আলী আকনের পুত্র দুবাই প্রবাসী শাহেআলম, কলাবাড়ীয়া গ্রামের মোতাহার হাওলাদারের কন্যা গ্রীস প্রবাসী রুমানা, লক্ষনকাঠী গ্রামের হাচান ডাকুয়ার পুত্র মালদ্বীপ প্রবাসী খোকন ডাকুয়া, বার্থীর আজাহার চৌকিদারের স্ত্রী লেবানন প্রবাসী রাবেয়া, বানিয়াশুরী গ্রামের হাসেম সরদারের পুত্র কুয়েত প্রবাসী লিটন, বাদামতলার সাহেব আলী হাওলাদারের পুত্র লিবিয়া প্রবাসী ফরিদ হাওলাদার, মহিষা গ্রামের ফরিদ বেপারীর পুত্র মালয়েশিয়া প্রবাসী রিয়াজ বেপারি। এছাড়া মালয়েশিয়ার জেলখানা থেকে মুক্তিপান সেরাল গ্রামের মিজানুর রহমান। গৌরনদীর সাংবাদিক ফোরাম ব্র্যাকের সহায়তায় ২০ জন বিদেশগামী যুবক-যুবতীদের হাউজ কিপিং, ড্রাইভিং, গার্মেন্টস প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করেছে। তাদের পরামর্শে শতাধিক যুবক-যুবতী ইতোমধ্যে নিরাপদে বিদেশে যেতে সক্ষম হয়েছে। সাংবাদিক ফোরাম দুবাই ও কাতারের ভিসা চেকিং এর ব্যবস্থা করেছে। এজন্য কোন ফি নেয়া হয়না।

গৌরনদী সাংবাদিক ফোরামের বর্তমান সভাপতি মোঃ জামাল উদ্দিন জানান, সরকারের দায় দায়িত্বহীনতা, উদাসীনতা ও কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অর্থলোলুপ মনোবৃত্তির কারণে বিদেশগামী লোকজন নানাভাবে হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। ফলে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে জনশক্তি রফতানী কার্যক্রম।