সাংবাদিক আতাউস সামাদ

বিশিষ্ট সাংবাদিক আতাউস সামাদ ৭৪ বছর বয়সে আমাদের মাঝ থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন। তার কর্ম ও খ্যাতির সীমানা ছিল বিস্তৃত। গভীর শ্রদ্ধায় আমরা এই কীর্তিমানকে স্মরণ করার পাশাপাশি শোক প্রকাশ করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান। পঞ্চাশের দশকে সচিত্র সন্ধানী পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন আতাউস সামাদ। এরপর কর্মজীবনে তিনি সংবাদ, পাকিস্তান অবজারভার, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা ও বিবিসিতে দীর্ঘকাল কাজ করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ যুগান্তকারী সব আন্দোলন তিনি রিপোর্টার হিসেবে কাভার করেছেন। তিনি ছিলেন ইতিহাসের এক উজ্জ্বল সাক্ষী। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বস্তুনিষ্ঠ ও সাহসী সাংবাদিকতার কারণে তাকে কারাবরণ পর্যন্ত করতে হয়েছে। জীবনের শেষ পর্যায় পর্যন্ত তিনি সাংবাদিকদের রুটি-রুজির অধিকার প্রতিষ্ঠা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার আন্দোলনে মাঠে থেকে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। সর্বশেষ দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদক ছিলেন তিনি। এছাড়া বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করেছেন আতাউস সামাদ। দীর্ঘ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। তার অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী বাংলাদেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ‘এখন’ নামের একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায়ও সম্পাদনা করেছেন তিনি। তবে বিবিসির আতাউস সামাদ হিসেবেই তিনি সমধিক পরিচিত ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরেই আতাউস সামাদ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদযন্ত্র ও কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ২৩ সেপ্টেম্বর তাকে রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বড় ধরনের দুটো অস্ত্রোপচারের পর তাকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়েছিল। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ হলে ২৬ সেপ্টেম্বর রাত ৯টা ২৫ মিনিটে তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নেয়া হয়। অবসান হয় এক বর্ণাঢ্য অধ্যায়ের। আতাউস সামাদের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াসহ দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। দেশের সাংবাদিকতা জগতে তার ভূমিকা ছিল অন্যতম পথিকৃতের। সুদীর্ঘ ৫৫ বছরের সাংবাদিকতার জীবনে তার নিষ্ঠা, মেধা, একাগ্রতা এবং পেশার প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার তাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও খ্যাতিমান করেছিল। বরেণ্য এই সাংবাদিক ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে দেশের সাংবাদিকতা ও বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গনে উজ্জ্বল ও বর্ণাঢ্য অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটলো। সৎ নিষ্ঠাবান সাহসী সাংবাদিক হিসেবে আতাউস সামাদ এ দেশের সংবাদ জগতে একজন অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে থাকবেন। সকল দল-মতের ঊর্ধ্বে একটা সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা ছিল তার। বর্তমান সময়ে এ দেশে যার তুলনা বিরল। প্রত্যুপন্নমতি, মেধাবী এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এ সাংবাদিক ব্যক্তিত্বের চিরপ্রস্থান যে শূন্যতা সৃষ্টি করেছে, তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। তার প্রতি আমি সহ আলোকিত সময় পরিবারের সকল নেতৃবৃন্দরা গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।