বরিশালের ১৬ উপজেলায় নেই কোন ফায়ার স্টেশন

এইচ. এম সুমন ॥ বরিশাল বিভাগের ৪০টি উপজেলার মধ্যে নদী বেষ্টিত ১৬টি উপজেলায় নেই কোনো ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। ফলে দুর্গম এলাকাগুলোতে অগ্নিকান্ডের সময় বড় বড় বাজার পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া ভূক্তভোগীদের আর কোন উপায় থাকে না। এ সব এলাকার মানুষ একদিকে যেমন ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সহায়তা পায় না তেমনি অগ্নি দূঘর্টনায় আহত ব্যক্তিদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠাতে পারের না। আর যেসব স্থানে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন রয়েছে এর ১৮টিতে নেই কোন এ্যাম্বুলেন্স। এ্যাম্বুলেন্স ছাড়াই চলছে এ বিভাগের ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কার্যক্রম।

জানা গেছে, এ বিভাগের ৪০টি উপজেলার মধ্যে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন রয়েছে মাত্র ২৪টিতে। আর এরমধ্যে এ্যাম্বুলেন্স রয়েছে মাত্র ছয়টিতে। ১৮টি দমকল স্টেশনে নেই কোন এম্বুলেন্স। অধিকাংশ উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন না থাকায় অগ্নিকান্ডের সময় তারা তাকিয়ে থাকেন অন্য উপজেলা বা জেলা সদরের ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের দিকে। আবার যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকার কারনে উপজেলা সদরের ফায়ার সার্ভিস ইউনিট যেতে পারে অগ্নিকান্ডের ঘটনাস্থলে। এ রকমই একটি উপজেলা মেহেন্দিগঞ্জ। এ উপজেলার মোট ১৩টি ইউনিয়নের সব ক’টি নদী বেষ্ঠিত এবং উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন। তাই উপজেলা সদরে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থাকলেও তা পাতারহাট ও উলানিয়া বন্দরের বাইরে কোথাও অগ্নিকান্ডের ঘটনায় যাতায়াত করতে পারে না। সেখানকার দমকল ইউনিট স্থাপন হয়েছিল বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে।

উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের এ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করেন শুরু থেকেই ভিআইপিরা। যে ২৪ টি উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন রয়েছে তার মধ্যে ভোলা সদর, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন উপজেলার দমকল ইউনিট সর্বত্র যাতায়াত করতে পারে। পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া, মঠবাড়িয়া, কাউখালী, স্বরুপকাঠীসহ বেকুটিয়া নদীর পূর্ব তীরের উপজেলা সদরে আগুন লাগার পর স্থানীয় দমকল ইউনিটকে সহায়তার জন্য অতিরিক্ত ইউনিট যুুক্ত করতে হয় বরিশাল থেকে। পিরোজপুর থেকে নদী পারাপারের কারনে খুব সহজে দমকল ইউনিট আসতে পারে না। বরগুনার বিচ্ছিন্ন বামনা, বেতাগীর একই অবস্থা। এ দু’টি উপজেলায় নেই কোন ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। দেশের সর্ব দক্ষিনের উপজেলা কলাপাড়া, গলাচিপা, রাঙ্গাবালিতে নেই কোন ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন। এরমধ্যে গলাচিপা , রাঙ্গাবালি ও মনপুরার অবস্থা ভয়াবহ। এ উপজেলা তিনটি দ্বীপের মত বিশাল নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন। এ তিন উপজেলা সদরে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলেও তা নির্বাপনের কোন ব্যবস্থা নেই। আগুন লাগলে শুধু আল্লাহর নাম ডাকা ছাড়া স্থানীয়দের কোন উপায় নেই।

অপরদিকে গৌরনদী, বানারীপাড়া, উজিরপুর, ভোলার বোরহানউদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন, ঝালকাঠীর নলছিটি, কাঠালিয়া, পিরোজপুরের নাজিরপুর,  কাউখালী, ভান্ডারিয়া, মঠবাড়িয়া এবং পটুয়খালীর বাউফল সহ ১৮ টি উপজেলার ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থাকলেও কোনো এ্যাম্বুলেন্স নেই। ফলে ওইসব স্থানে উদ্ধারকাজে নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে।  অতিসম্প্রতি বাউফলের কালাইয়া বন্দরে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের সময় আহতদের নিয়ে একই অবস্থায় পরতে হয় ব্যবসায়ীদের।

বরিশাল ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক এম লুৎফর রহমান জানান, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় আগামী দু’মাসের মধ্যে নতুন ফায়ার স্টেশন উদ্বোধন করা হবে। তাছাড়া সরকার বরিশাল বিভাগের হিজলা, মুলাদী, গলাচিপা, দশমিনা, বামনা, বেতাগী ও মনপুরা উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। তবে এ্যাম্বুলেন্সের ব্যাপারে তেমন কোন ইতিবাচক খবর দিতে পারেননি এখানকার কর্মকর্তারা।

স্টাফ রিপোর্টার, গৌরনদী ডটকম