উম্মে রুম্মান, বরিশাল ॥ প্রায় তিন বছর ধরে দক্ষিণাঞ্চলে সাপে কাটা ও কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় ব্যবহারযোগ্য প্রতিষেধক ভ্যাকসিন সরকারিভাবে সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। যে কারণে এ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ চিকিৎসা কেন্দ্র শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও কুকুরে কামড়ানো ও সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। হাসপাতালের বহির্বিভাগের চিকিৎসকেরা রোগীদের বাইরে থেকে ভ্যাকসিন কিনে ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন। যুগ যুগ ধরে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বরিশাল পৌরসভা ও শেবাচিম হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন পেতো। পৌরসভা থেকে সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তরের পরও এ সেবা অব্যাহত ছিলো। কুকুর ও সাপের কামড়ে আক্রান্ত ব্যক্তি এখনো ভ্যাকসিন পাওয়ার আশায় ছুটে আসেন সিটি কর্পোরেশনে। প্রায় চার বছর ধরে সিটি কর্পোরেশনেও ভ্যাকসিন সুবিধা পাচ্ছে না কেউ। নগর ভবন থেকে ভ্যাকসিন সরবরাহ বন্ধ জানিয়ে তাদের বিদায় করা হয়।
এ ব্যাপারে নগর ভবনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মতিউর রহমান জানান, আগে ঢাকার মহাখালী জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট থেকে পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনকে এ ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হতো। প্রতিটি ভ্যাকসিন ক্রয় করা হতো ৩৫ টাকায়। পৌরসভার তহবিল থেকে তা বিনামূল্যে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দেয়া হতো। গত তিন বছর ধরে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট থেকে ভ্যাকসিন সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ওই ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শুধু কুকুর বা সাপের কামড়ে আক্রান্ত ব্যক্তি মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি হলেই বিনা খরচে এ ভ্যাকসিন ও খাবারের সুবিধা পাবে। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছে, চলতি বছর নিয়ে ৪ বছরে সরকারি ভ্যাকসিন সরবরাহ বন্ধ থাকায় বেসরকারি কোম্পানীগুলো এ ভ্যাকসিন বিক্রি করে একচেটিয়া বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বেসরকারি কোম্পানীর একেকটি ভ্যাকসিন এখন এখানে বিক্রি হচ্ছে ৭’শ থেকে ৮’শ টাকায়। কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত ব্যক্তির কমপক্ষে ৫টি ভ্যাকসিন দিতে হয়। কারো কারো ১৪টি পর্যন্ত ভ্যাকসিন নেয়ার প্রয়োজন হয়। সম্প্রতি নগরীসহ গ্রামগঞ্জে যারা কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সিংহভাগই হতদরিদ্র মানুষ। তাদের পক্ষে এই বিপুল টাকায় ভ্যাকসিন ক্রয় করে চিকিৎসা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আক্রান্তরা জানায়, স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা জেনারেল হাসপাতাল তো দূরের কথা শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও ভ্যাকসিন পাওয়া যায় না। ঔষধের ফার্মেসিগুলোতে ভ্যাকসিন পাওয়া দুষ্কর।
ফার্মেসি মালিকরা জানান, এ ধরনের ভ্যাকসিন ফ্রিজ ভর্তি করে দীর্ঘদিন রাখতে হয়। বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ঔষধের মতো এ ভ্যাকসিন তেমন বিক্রি হয় না। ফলে তারা খুব একটা এসব ভ্যাকসিন মজুদ রাখেন না। আক্রান্ত ব্যক্তিরা বাধ্য হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি ওষুধ কোম্পানীর দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ করে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করেন।
এদিকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন ও গৌরনদী পৌরসভা বেওয়ারিশ কুকুর নিধন কার্যক্রম শুরু করলেও বর্তমানে তা ঝিমিয়ে পড়েছে। রাত বাড়লেই অলিগলি দখল করে নেয় বেওয়ারিশ কুকুর। প্রতিনিয়ত এসব স্থান থেকে কুকুর কামড়ানো রোগী ধর্ণা দিচ্ছে সিটি কর্পোরেশন ও পৌর ভবনে। সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা থেকে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হচ্ছে না। বর্তমানে কুকুরের প্রজননের সময়। এ সময় কুকুর নিধন করা হলে তাদের বংশ বৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। সে অনুযায়ী প্রতিবছর কুকুর নিধনের জন্য এ সময়টাকেই বেছে নেয় সিটি কর্পোরেশন ও পৌর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এ বছর নিধন অভিযান তেমন একটা জোরালোভাবে নেয়া হয়নি।