আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে আগৈলঝাড়ায় ঢাক তৈরীর কারিগররা এখন মহাব্যস্ত

অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া ॥ আর মাত্র কয়েকদিন পরেই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ও সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। এ উপলক্ষে ঢাক বাজানো বাদ্যকার ও বিভিন্ন মিউজিক পার্টি থেকে অর্ডার নেয়া ঢাক সঠিক সময়ে সরবরাহ করার জন্য ঢাক তৈরীর কারিগর ও শ্রমিকরা এখন দিনরাত মহাব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। শারদীয় দুর্গাপূজার উৎসবের প্রধান আকর্ষণই হচ্ছে ঢাক। পূজার সময় সন্ধ্যা গড়ানোর সাথে সাথেই ঢাকের বাদ্যে মুখরিত হয়ে ওঠে পূজামন্ডপের আশপাশের এলাকা। সন্ধ্যা শেষে মধ্যরাতে ঢাকের শব্দ শুনলেই বোঝা যায় মন্ডপের সামনে এখন ধর্মীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। তাই ঢাকের শব্দ শুনেই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অনুষ্ঠানপ্রেমীরা দল বেঁধে মন্দির আঙ্গিনায় ছুটে যান। এছাড়া হিন্দু সম্প্রদায়ের বারোমাসের প্রায় মাসেই প্রতিটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও বিয়েবাড়িতে ঢাক-ঢোল আর বাঁশির শব্দ এবং ঢুলীদের কোমর ঢোলানো নাচই হচ্ছে অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ।

কবে কখন কিভাবে কেইবা প্রথম এই ঢাকের বাদ্যের প্রচলন ঘটিয়েছে তা সঠিক করে কেউ বলতে না পারলেও প্রাচীনকাল থেকেই এ ঢাক বাদ্যের প্রথা চলে আসছে। এক কথায় ঢাকের বাদ্য ছাড়া দুর্গাপূজার অনুষ্ঠানসহ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কোন অনুষ্ঠানই জমেনা। এছাড়াও অতীতের জমিদারদের পাইক পেয়াদারা ঢাক পিটিয়ে প্রজাদের মাঝে জমিদারদের হুকুম জারী কিংবা নিমন্ত্রণ করত। যুগ যুগ ধরে ঢাক তৈরি করে ও ঢাক বাজিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। বর্তমান আধুনিকতার যুগেও প্রাচীনকালের ঢাকের প্রথাকে আজও বিলুপ্তি ঘটাতে পারেনি। বিশেষ করে দুর্গাপূজা ঘনিয়ে এলেই ঢাকের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই ঢাক তৈরীর কারিগর ও শ্রমিকেরা এই সময়টা মহাব্যস্ততার মধ্যে কাটাচ্ছেন।

বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরের ঢাক তৈরীর কারিগর শ্যামল দাস বলেন, বংশপরস্পরায় দীর্ঘ ৩০বছর ধরে আমি এ পেশায় নিয়োজিত আছি। আমার জন্মস্থান মানিকগঞ্জে। তিনি আরও জানান, তার পূর্বপুরুষ ঢাকসহ অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র তৈরীর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। তিনি পরিবার ছাড়াও চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থেকে একাজ আরও ভালভাবে রপ্ত করেছেন। তার শ্বশুড় আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরে দীর্ঘদিন ধরে এ কাজ করেছেন। শ্যামল দাস গত ২০বছর ধরে আগৈলঝাড়ায় স্থায়ী দোকান দিয়ে এ কাজ করে যাচ্ছেন। একটি ঢাক তৈরীতে কিরকম খরচ পরে জানতে চাইলে তিনি জানান, একটি মাঝারি ঢাক তৈরীতে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ হয়। আর সেটি বিক্রি করছেন ৭ থেকে ৮ হাজার টাকায়। হিন্দু অধ্যুষিত আগৈলঝাড়ায় বারোমাসই তিনি এ কাজ করছেন। তবে দুর্গাপূজা উপলক্ষে ইতোমধ্যে তার কাছে নতুন ঢাক তৈরি ও মেরামতের অনেক অর্ডার এসেছে। এবছর এ উপজেলায় বরিশাল বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশী ১৪২টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। শ্যামল দাস ঢাকসহ অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র তৈরী ও মেরামত করে বর্তমানে আগৈলঝাড়ায় তার পাঁচ সদস্যের সংসারে সকলকে নিয়ে বেশ সাচ্ছন্দেই বসবাস করছেন।