১২ বছর মালয়েশিয়ার জেলখানায় বন্দি – “বুঝেছিলাম উনি আর বাইচ্চা নাই”

মোঃ জামাল উদ্দিন ॥ “বুঝে ছিলাম উনি (স্বামী) আর বাইচ্চা নাই”। তার পরেও ওনার রেখে যাওয়া একমাত্র অবলম্বন এক মাস ১০ দিন বয়সের কন্যা সুমাকে বুকে আগলে ধরে দীর্ঘ একটি যুগ পার করেছি। অতিসম্প্রতি জানতে পেরেছি, উনি বাইচ্চা আছেন। আর মালেশিয়ার জেলখানায় আটক রয়েছেন। এ কথা শুনে কিছুটা হলেও স্বত্তি পেয়েছি। ১২ বছর মালয়েশিয়ার জেলখানায় বন্দি - “বুঝেছিলাম উনি আর বাইচ্চা নাই”এ্যাহন ওনারে মুক্তি করতে হলে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগীতা ছাড়া মোগো আর কোন উপায় নাই। আবেগআপ্লুত হয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলছিলেন দীর্ঘ ১২ বছর মালয়েশিয়ার জেলখানায় বন্দি বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার পূর্ব সুজনকাঠী গ্রামের মোসলেম আলী মোল্লার পুত্র মিজানুর রহমান মোল্লার (৪২) স্ত্রী সামচুন নাহার।

গৌরনদী প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে হতভাগ্য মিজানের স্ত্রী সামচুন নাহার জানান, পরিবারের অভাব অনটনের কথা চিন্তা করে এক মাস ১০ দিন বয়সের কন্যা সুমাসহ তাদের রেখে ১৯৯৪ সনে তার স্বামী চাকুরি নিয়ে মালয়েশিয়ায় যান। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও মিজান দেশে না ফিরে সেখানেই রয়ে যান। পুলিশের ভয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে মিজান কাজ করতো রাজধানী কুয়ালালামপুরের একটি কারখানায়। ৭ বছর যাবত পরিবারের সাথে মিজানের যোগাযোগ ছিল। ওই সময় চিঠিপত্র দিতেন ও টাকা পাঠাতেন নিয়মিত ভাবে। কিন্ত ২০০১ সনের প্রথমার্ধ্যে হঠাৎ করে তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এ কারনে তার পরিবারের সদস্যরা ভেবেছিলেন মিজান আর বেঁচে নেই। অতিসম্প্রতি রাজশাহী জেলা শহরের বেল্লাল হোসেন নামের একজন মালয়েশিয়া প্রবাসীর কাছ থেকে তারা জানতে পারেন, অবৈধ বসবাসের অভিযোগে ২০০১ সনের প্রথমার্ধ্যে মালয়েশিয়ার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাভোগ করছেন মিজান। দীর্ঘদিন যাবত নানা অত্যাচার নির্যাতনসহ মালয়েশিয়ার জেলখানায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন মিজান।

এদিকে দীর্ঘ ১৮ বছর যাবত একমাত্র কন্যা সুমাকে বুকে নিয়ে স্বামীর আসার অপেক্ষায় পথপানে চেয়ে আছেন সামচুন নাহার। মিজানের রেখে যাওয়া কন্যা সুমার বয়স এখন আঠারো। সে আগৈলঝাড়া সদরের শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। সুমা বড় হয়ে শুধু বাবার ছবিই দেখেছে আর মায়ের মুখে শুনেছে বাবার গল্প। সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে মা-মেয়ের চোখ বেয়ে শুধুই অশ্র“ ঝড়ছিলো। সূত্রমতে, মিজানের অবর্তমানে নিরুপায় হয়ে সামচুন নাহার কন্যা সুমাকে নিয়ে তার বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন। সুমার চাচারা একসময় সুমার লেখাপড়ার জন্য কিছুটা খরচ বহন করলেও দীর্ঘদিন যাবত তাদের কোন খোঁজ খবর পর্যন্ত নিচ্ছেননা। ফলে তাদের বড়ই দুর্দিন চলছে। স্বামী ও একমাত্র কন্যা সন্তান সুমার কষ্টের কথা বলতে বলতে মাঝে মধ্যে মুর্ছা যান অসহয় সামচুন নাহার। মিজানের মুক্তির জন্য সামচুন নাহার ও তার মেয়ে সুমা বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।