নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক: দেবী দুর্গা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেবী দুর্গা বিশ্বমাতৃরূপিণী শক্তিরূপে পূজ্য। হিন্দু ধর্মের শীর্ষস্থানীয় পূজানুষ্ঠান দেবী দুর্গাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়। তিনি স্নেহময়ী মাতৃরূপে পূজারীর নিকট আরাধ্য। বঞ্চিত ও নির্যাতিত ভক্তের তিনি আশ্রয় ও বিপদনাশিনী। স্নেহময়ী মাতা হিসেবে আবার অসুরবিনাশী রুদ্রমূর্তি নিয়ে তিনি একাধারে আবির্ভূত হন। সমাজে নারীকে অবলা, দুর্বলা ও অসহায়রূপে গণ্য করার রেওয়াজ লক্ষণীয়। বাস্তবে দুর্গানারীও স্বীয় মেধা, দক্ষতা ও প্রচেষ্টায় নিজের শীর্ষস্থানীয় অবস্থান তুলে ধরতে পারেন। তার বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে। বিশ্বব্যাপী নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রতিভূ হিসেবে উল্লেখযোগ্যরা হলেন-শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী, মিসেস মার্গারেট থেচার, অ্যাঞ্জলা মার্কেল, জুলিয়া গিলার্ড, প্রতিভা পাতিল, সোনিয়া গান্ধী, জয়ললিতা, মমতা ব্যানার্জী, অম্বিকা সোনি, মায়াবতী, শেখ হাসিনা, কমলা প্রসাদ, অ্যালেনজনসন সিরলিজ, শ্রীমাভো বন্দর নায়েক, গোল্ডা মায়ার, ফার্নান্দেজ ডি কির্চনার, ডালিয়া গ্রেবাউস্কাইতে, তার্জা হেলোনেন, চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা, বেনজীর ভুট্টো, কোরজন অ্যাকুইনো, হিলারি ক্লিনটন, লরা চিনচিলা, জোহান্না সিগারডার ডট্রিব প্রমুখ।

সাহিত্য ক্ষেত্রে নোবেল জয়ী নারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন-সেলসা লেগার লফ, গ্রাসিয়া দেলেদ্দা, সিগ্রিড উন্ডসেট, পার্ল এস বাক, গ্যাব্রিয়েলা সিপ্তাল, নেলী স্যাক্স, নাডিন গার্ডিসার, টনি মরিসন, এলফ্রিডা ইলেকনিক, ডরিস লেসিং ও হার্টা মুলার প্রমুখ। শান্তিতে নোবেল জয়ীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন-বার্থা ভন সাটনার, জেন এডামস, এমিলি গ্রিন বলচ, বেটি উইলিয়ামস, মাইরিড কোরিগান, মাদার তেরেসা, আলভা মিরডাল, অং সান সুকি, রিগোবার্তা মেঞ্চু তুম, জোডি উইলিয়ামস, শিরিন এবাদি, ওয়াঙ্গারি মাথাই প্রমুখ। এ ছাড়া বিজ্ঞান ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য নোবেলজয়ী নারীরা হলেন-মেরী ক্যুরী, মারিয়া গোপার্ট-মেয়ার, আইরিন ক্যুরী, ডরোথি হজকিন, আডা ইয়োনাথ, গার্টি কোরী, রেজালীন ইয়ালো, বারবারা ম্যাকক্লিন্টক, রিতা লেভি, মন্তাল চিনি, গারট্রেড এলিয়ন, ক্রিস্টিয়েন নুস্লিন ফোলহার্ড, লিন্ডা বাক, ফ্যান্সোয়াস পরে সিনুসি এলিজাবেথ ব্ল্যাকবার্ন ও ক্যারল গ্রাইডার প্রমুখ। জীবন সংগ্রামে বিজয়ী এসব নারী আত্মশক্তি ও প্রতিভার বলে শীর্ষস্থানীয় হয়েছেন। আমাদের দেশে এসব নারী দুর্বল ও পশ্চাৎপদ নারী সমাজের প্রেরণা হতে পারেন। দুর্গাপূজার মধ্যে রয়েছে নারীশক্তির মূর্ত প্রকাশ। নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টি বর্তমানে বহুল আলোচিত। অথচ এ ক্ষমতায়নের প্রতীক হিসেবে দেবী দুর্গা বিশ্বব্যাপী বহুকাল ধরে পূজ্য ও আরাধ্য। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে মহাসঙ্কটময় মুহূর্তে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। দেবরাজ ইন্দ্র দুর্বাসা মুনির অভিশাপ থেকে মুক্তির জন্য দেবী দুর্গার আরাধনা করেছেন। সীতাকে উদ্ধার করার জন্য রামচন্দ্র শারদীয় দুর্গোৎসবের আয়োজন করেছিলেন।

পার্থিব জীবনে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও আর্থ-রাজনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী দেবী দুর্গার পূজা বহুল প্রচলিত। শারদীয় দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু বাঙালির সংস্কৃতি নয়। এটি সর্বজনীন মানবমুক্তির গোপনরূপে চিহ্নিত। ধর্মীয় সংস্কৃতির আড়ালে তা রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতার প্রতীক ও আলেখ্য। যুগে যুগে অন্যায়, অত্যাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে দেবী দুর্গার প্রেরণা কার্যকর রয়েছে। নারীর আর্থ-সামাজিক, পারিবারিক-সাংস্কৃতিক ক্ষমতায়নে দেবী দুর্গার বহুমুখী ক্ষমতা প্রেরণা জুগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব নারীসমাজে। বাংলাদেশে নারীমুক্তি, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী জাগরণ ও নারী উন্নয়নে আধ্যাত্মিক মহাশক্তি হিসেবে দেবী দুর্গার মর্ত্যলোকের মানবীয় ভূমিকা নারীসমাজের অশেষ প্রেরণা, দুর্জয় শক্তি ও বিকাশ সুখী নারী প্রতিভার আদর্শ ও দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। দেবী দুর্গার এ আদর্শ ও প্রেরণায় বিশ্বের নারীসমাজ আত্মমুক্তি, আত্মউন্নয়ন ও আত্মবিকাশের মাধ্যমে নারীর শক্তি ও ক্ষমতায়নকে প্রসারিত করুক এ প্রার্থনাই করি এবারের শারদীয় দুর্গোৎসবে।