আবারও অনিশ্চয়তায় খালেদা জিয়ার মহাসমাবেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন ও বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বরিশাল বিভাগীয় সদরে আসন্ন মহাসমাবেশ ঘিরে ফের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয় দফায়ও তারিখ পরিবর্তনের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় এ অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আগামী ১৪ নভেম্বর বেগম জিয়ার নগরীর বেলসপার্ক ময়দানে মহাসমাবেশে ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে। ভারত সফর শেষে দেশে ফেরার পরেই বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার কথা জানা গেছে। এর আগে গত ৯ অক্টোবর এ মহাসমাবেশের কথা থাকলেও জানা-অজানা নানা রাজনৈতিক মেরুকরণের কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। দেশের বিভিন্নস্থানে প্রধান বিরোধী দলের নানা কর্মসূচির মধ্যে বরিশাল মহানগরীতেও গত ৯ অক্টোবর মহাসমাবেশে বেগম খালেদা জিয়ার ভাষণ দেয়ার কথা ছিল। রাজনৈতিক অঙ্গনে কর্মসূচিটির প্রয়োজনীয়তা, গুরুত্ব ও সব শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে যথেষ্ট কৌতুহল থাকলেও নানা কারণে একের পর এক তা পরিবর্তন হতে থাকে।

কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবেই গত ৯ অক্টোবর বরিশালে মহাসমাবেশের কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সময়ের প্রতিকুলতায় রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে আগামী ১৪ নভেম্বর নতুন সময়সূচি নির্ধারণ করা হলেও এ মহাসবাবেশ নিয়ে ফের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সমাবেশের নির্ধারিত দিন হিন্দুদের অন্যতম ধর্মীয় উৎস কালী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া আগামী ৪ নভেম্বর থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশের মত বরিশালেও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (জেএসসি ও জেডিসি) অনুষ্ঠিত হবে। নগরীজুড়ে পরীক্ষার ভেন্যু ছাড়াও বেগম খালেদা জিয়ার জনসভাস্থলের পাশেই বরিশাল মডেল স্কুল ও কলেজ অবস্থিত। সেখানেও জেএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের কেন্দ্র রয়েছে। ফলে ১৪ নভেম্বর ওই স্কুলের পাশের মাঠে মহাসমাবেশ করা সঙ্গত হবে না এমনটাই মনে করছেন দায়িত্বশীল মহল। উপরন্তু জেলা ও মহানগর পুলিশ-প্রশাসন এসময়ে ওই ময়দানে কোন সমাবেশ করার অনুমোদন না দেয়ার বিষয়টিই বেশি যুক্তিসঙ্গত। ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক প্রশাসন শৃঙ্খলা পরিপন্থির কারণ দেখিয়ে আইনসিদ্ধভাবেই পরীক্ষা চলাকালীন নগরীতে মহাসমাবেশের অনুমতি দেবে না বিভিন্ন সূত্র থেকে এটা নিশ্চিত করেই নেতিবাচক হিসেবে কাজ করবে এরকমই মনে করছেন বেশিরভাগ লোকজন। একারণেই ১৪ নভেম্বর বরিশালে বেগম খালেদা জিয়ার মহাসমাবেশ না হওয়ার এটি প্রাথমিক ও অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সাথে বরিশালে দলীয় পুরনো অন্ত কলহের বিষয়টিও রয়েছে।

বরিশাল মহানগর ও জেলা বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কোন্দল কয়েকজনের ব্যক্তি পর্যায়ের রেষারেষি এখানে দলীয় ভাবমূর্তিকে যেমনি ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। তেমনি মাঠ পর্যায়ের নেতা কর্মীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের পরিমাণও বৃদ্ধি করছে।  ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দলের সংগঠনিক শক্তি-সামর্থ। দলীয় কোন্দলে জর্জরিত বরিশাল মহানগর ও জেলা বিএনপির মধ্যে মামলা-হামলা এমনকী খুনোখুনি পর্যন্ত ঘটেছে। জনগণের দাবি নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপি’র নেতৃত্বকে কোন সুস্পষ্ট কার্যকর আদেশসহ সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে ব্যর্থ হয়ছে কোন্দল নিরসনে দলটির হাই কমান্ড। নিরসনে ব্যর্থ দলের চলমান অন্তর্দ্বন্দ্বও এই কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে। বিএমপির পুলিশ কমিশনার সামসুদ্দিন আহম্মেদ জানান, বিএনপি কিংবা ১৮ দলীয় জোট আহুত মহাসমাবেশ নিয়ে এখনো কোনো আলোচনা বা কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।

কেন্দ্রীয় বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. মজিবর রহমান সরোয়ার এমপি বলেন, পরীক্ষা শেষ হবে বেলা ১টায় আর সমাবেশ শুরু হবে বিকেল ৩টায়। পরীক্ষা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ১৫ নভেম্বর কালীপূজার কারণে একটু ভাবতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত মহা সমাবেশ অনুষ্ঠানের তারিখ সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। ভারত সফর শেষে দলের চেয়ারপার্সন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিবেন।