উজিরপুরে উগ্রতাঁরা মন্দিরটি হতে পারে দর্শনার্থীদের জন্য একটি আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্র

মিজানুর রহমান মিজান, উজিরপুর ॥ বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার শিকারপুরের তারাবাড়িতে শ্রীশ্রী উগ্রতাঁরা মন্দির হিন্দু ধর্মের ৫১ পীঠের  এশিয়া মহাদেশের অন্যতম নাসিকা পীঠস্থান। তাঁরা মন্দিরের কারনেই এখানের নামকর করা হয়েছে তারাবাড়ি। সরকারী সাহায্য ও অনুদান পেলে হতে পারে এটি একটি পর্যটকদের আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্র। এটি পাক-ভারত উপমহাদেশের সমগ্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি পবিত্র সু-প্রাচীন মন্দির ও তীর্থস্থান।

জানাগেছ দ্বাপর যুগে দক্ষরাজার যজ্ঞস্থল থেকে এর উৎপত্তি। কথিত আছে ইহা সুগন্ধা নদীর উত্তর পাড়ে জনৈক গদাধর চক্রবর্তী স্বপ্নে প্রাপ্ত মূর্তি তিনি স্বপ্নে আদিষ্ট হইলেন যে,‘‘নদীর তীরে আমি আছি আমাকে নিয়ে পূজা কর’’। আতঃপর তিনি সেই মূর্তিটি তুলিয়া যথারীতি পূজা করিতে থাকেন। সেই দিন থেকেই এখানে পূজার্চনা, নিয়মিত সন্ধ্যায় সন্ধ্যারতী দৈনিক রান্না ভোগ হয়ে থাকে। অভিবক্ত বাংলায় শিব চতুর্দশীতে অতিরিক্ত লোকের সমাগমের কারনে ভারতীয় গূর্খা সৈন্য দিয়ে শৃঙ্খলা বিধান করা হইত। তখন কলিকাতা থেকে ষ্টিমার যোগে বহু দর্শনার্থী এখানে আসিতেন। শিব রাত্রীতে প্রায় সপ্তাহ ব্যাপী মেলা বসত। অতি প্রাচীন মন্দিরটি আর্থিক সমস্যার কারনে এর অবয়ব কাঠামো বৃদ্দি করতে পারছে না মন্দির কমিটি। উগ্রতাঁরা ট্রাষ্ট কমিটির সভাপতি ডাঃ পিযুষ কান্তির একক অনুদানে কিছুটা সংস্কার কাজ করা হয়েছে। তাঁরা মায়ের পূঁজা, শিবপূঁজা,কালীপূঁজা, শীতলা পূঁজা, বার্ষিক দূর্গাপূঁজা অনুষ্ঠিত হয়। মন্দিরের নিজস্ব জমিতে দুইটি ঘাটলা বাঁধানো দীঘি আছে। মন্দির অঙ্গনটি সুউচ্চ দেয়াল দ্বারা সংরক্ষিত। সম্মুখ গেটটি দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করে। ফলে এখানে সরকারি-বেসরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীগন এখানে আসেন প্রতিনিয়ত। ভারত সহ দেশ বিদেশ থেকে প্রতিদিনই সেবাশ্রম, রামকৃন মিশন, সীতাকুন্ড আশ্রমের সাধু সন্যাসীদের আগমন ঘটে তারা রাত্রি যাপন ও করেন। কিন্তু তাদের থাকার জন্য কোন স্থায়ী ঘর নেই এখানে। অনেক কষ্ট কওে রাত্রি যাপন করতে হয় তাদের। তাই দর্শনার্থী ও আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। সেক্ষেত্রে দশনার্থীদের থাকার জন্য একটি সাধু নিবাস স্থাপন করা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পরেছে। উগ্রতাঁরা মন্দির ট্রাষ্ট কমিটির সহ-সভাপতি জানিয়েছেন মন্দির অঙ্গনে একটি সাধু নিবাস নির্মানের জন্য কমিটির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী বরাবর অনেক বার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে কিন্তু কোন কাজ হয়নি। তিনি আরো জানান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে উজিরপুরের নির্বাচনী জনসভায় যাওয়ার সময় মন্দির অঙ্গনে গাড়ী থামাইলে স্থানীয় উপস্থিত মন্দির কমিটির লোকজনদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলেন ‘‘আমি ক্ষমতায় গেলে মন্দিরের উন্নয়নের প্রতি দৃষ্টি দিব’’। কিন্তু দুইবার ক্ষমতায় আসলেও তার সে প্রতিশ্রুতি আজও বাস্তবায়ন হয়নি। মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে এটি দ্রুত সংস্কার ও সরকারিভাবে একটি সাধু নিবাস স্থাপন অথবা আর্থিক সাহায্যের জোর দাবি জানান। তা হলেই প্রাচীন এ জায়গাটি হতে পারে একটি আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্র। তারাবাড়িতে সড়ক ও নৌ দুই পথেই স্বল্প খরচে যাতায়াত করা যায় বরিশাল থেকে এসে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ইচলাদী বাসষ্ঠান্ডে নেমে রিকসা যোগে তারাবাড়ি যাওয়া যায় আবার দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সড়ক পথে ইচলাদী বাসষ্ঠান্ডে নেমে রিকসা যোগে তারাবাড়ি যাওয়া যাবে। নৌ পথে লঞ্চ কিংবা ষ্টীমার যোগে শিকারপুর লঞ্চঘাট নেমে রিকসা যোগে তারাবাড়ি আসা যাবে।