গ্রামীণ মেলার ঐতিহ্যবাহী পুতুল নাচ কালের স্বাক্ষী

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ মেলার ঐতিহ্যবাহী পুতুল নাচ। অতীতে গ্রাম বাংলার নানা উৎসব উপলক্ষ্যে বিভিন্নস্থানে বসানো হতো গ্রামীণ মেলা। আর এসব মেলার বিনোদনের অন্যতম মাত্রা ছিলো পুতুল নাচ। শহরের জীবনের হাতছানিতে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ায় ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজকাল গ্রাম বাংলায় আগের মতো আর গ্রামীণ মেলা বসেনা। তবে মাঝে মধ্যে দু’একটি স্থানে গ্রামীণ মেলা বসলেও সেসব মেলায় দেখা মেলেনা ঐতিহ্যবাহী পুতুল নাচের।

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার চাঁদশী গ্রামের প্রেমানন্দ ঘরামী (৪৫) বলেন, সেই আট-নয় বছর বয়সে বাবার সাথে চাঁদশী মেলায় গিয়ে পুতুল নাচ দেখা শুরু করেছি। প্রতিবছর মেলা আসলেই ঐতিহ্যাবাহী চাঁদশী মেলায় পুতুল নাচ বসানো হতো। আর বাবার কাছে বায়না থাকতো আমাদের স্ব-পরিবারকে পুতুল নাচ দেখাতে হবে। মাত্র কয়েক বছর পূর্বেও গ্রামের মানুষেরা মেলায় গিয়ে পুতুল নাচ দেখে খুব মজা পেত। ছোট ছোট পুতুলের নৃত্যের মধ্যদিয়ে বিনোদনের পাশাপাশি তুলে ধরা হত দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য। তিনি আরো বলেন, এক শ্রেণীর মানুষ বিভিন্ন মেলায় পুতুল নাচের অনুমতি নিয়ে জীবন্ত নারীর অশ্লীল নৃত্য ও নগ্নদেহ প্রদর্শন করে এ শিল্পের ধ্বংস ডেকে এনেছে। এসব ব্যক্তিদের কারনে প্রকৃত পুতুল নাচ দেখানোর মানুষদেরকেও বিভিন্ন মেলায় প্রশাসনের কাছ থেকে পুতুল নাচের অনুমতি নিতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। যে কারনে বাধ্য হয়েই মেলা কমিটির নেতৃবৃন্দরা গত ৩/৪ বছর থেকে মেলায় পুতুল নাচ আনা বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে এক সময় পুতুল নাচ গল্প কাহিনী হয়ে দাঁড়াবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

গৌরনদী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সহকারি কমান্ডার আব্দুল হক ঘরামী বলেন, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে পুতুল নাচের পরিচালকেরা ক্ষুদ্র পরিসরে পুতুলের মাধ্যমে তুলে ধরতেন মুক্তিযুদ্ধের নানা ঘটনা। এছাড়া পুতুল নাচে ভানুমতির কাহিনী ও বিভিন্ন শিশুতোষ দৃশ্য দেখানো হতো পুতুলের মাধ্যমে। কালের আবর্তে নানা প্রতিকূলতায় আজ সেই পুতুল নাচ হারিয়ে যেতে বসেছে।

এ বিলুপ্ত প্রায় ঐতিহ্যবাহী বিনোদন মাধ্যমকে আজও যারা টিকিয়ে রাখার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন দি-আজাদ পুতুল নাচের স্বত্তাধীকারি মোঃ মোশারফ হোসেন। দীর্ঘদিন পর বরিশালের গড়িয়ারপাড় আনন্দ মেলায় দেখা মিলেছে এ ঐতিহ্যবাহী পুতুল নাচের। দি-আজাদ পুতুল নাচের মালিক মোশারফ হোসেন বলেন, প্রায় ৩০ বছর পূর্বে বাবার কাছ থেকে পুতুল নাচ দেখানো শিখেছি। সেই থেকে অদ্যবর্ধি এ পুতুল নাচ দেখানোর পেশাকে আকরে ধরে রেখেছি। আর এ পুতুল নাচের আয়ের মাধ্যমেই দলের ১০ জন সদস্যসহ আমার পরিবার পরিজনকে নিয়ে বেঁচে আছি। পুতুল নাচের অনুমতি নিয়ে জীবন্ত নারীর অশ্ল¬ীল নৃত্য ও নগ্নদেহ প্রদর্শনের সত্যতা স্বীকার করে মোশারফ হোসেন বলেন, এক শ্রেণীর মানুষের রুচি বোধের কারনেই ঐতিহ্যবাহী পুতুল নাচের শিল্পকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। যে কারনে অনেকেই বাধ্য হয়ে পুতুল নাচ দেখানোর পেশাকে ছেড়ে দিচ্ছেন।