আমরা অনেকেই এত উপকারী একটি ফল ডাব সম্পর্কে অনুচ্ছিক। কেউ কেউ ডাবকে অবহেলা করে থাকেন। আবার অনেকে বলেন: ধুর! ডাব খেয়ে কি হবে? চল গিয়ে কোমল পানীয় খাই। কিন্তু এই অবহেলিত ডাবের জলই যে আপনার দেহের রোগের ওষুধ হতে পারে তা কেউ একটিবারের জন্যও ভেবে দেখেন না। ডাবের ভেতরের জল আল্লাহর দেয়া রহমত। সুতরাং এই রহমতকে অবহেলা না করে তা নিজের জীবনে কাজে লাগানোই হলো সত্যিকারের বুদ্ধিমানের পরিচয়।
খাদ্য গুণে ডাবের জলঃ
এখন বৈশাখ মাস। আর এই বৈশাখের প্রচন্ড গরমে আমরা সবাই ক্লান্ত। গরমের চোটে হেলে পড়তে মন চায় আমাদের দেহ। অত্যাধিক গরমের কারণে শরীর ঘেমে গিয়ে বেরিয়ে আসে শরীরের নানান খনিজ লবণ। যাতে দেহ হয়ে যায় পানি শূন্য। তখন পিপাসায় ফেটে যায় বুকটা । যেন মন চায় : আহহহ হাতের কাছে যদি এক গ্লাস ঠান্ডা পানি পেতাম ? উফফ চরম হতো! কিন্তু পানি খেলে তো আমাদের শুধু পিপাসা মেটে। শরীর থেকে যে সব লবণ বের হওয়ার কারণে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে সেই লবণ তো আর পূরণ হলো না। এই সমস্যা দূর করার জন্য আমাদের খাদ্য তালিকায় থাকে নানান ধরনের ফলের শরবত , কোমল পানীয় , ডাবের ডল আরো কত কি! অনেকে এই গরমে কিছুটা আরাম পেতে প্রচুর পরিমাণে সফটড্রিকংস পান করেন। কিন্তু কোমল পানীয় নাম হলেও তা কিন্তু আসলেই কোমল না। শরীরের জন্য মারাত্তক ক্ষতিকর। যদি শরীরের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রাখেন তাহলে গলার পিপাসা আর শরীরকে সতেজ রাখতে ডাবের পানির কোন তুলনা নেই।কারণ ডাবের পানি শুধুমাত্র পানীয় হিসেবেই সীমাবদ্ধ নয়, এটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে লবণ ও নানারকম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। যা অনেক জটিল রোগ নিরামক হিসেবেও কাজ করে। আর এ সম্পর্কেই নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
রোগ নিরাময়ে ডাবের জলঃ
- গরমে হাইড্রেশনের সমস্যায় ডাবের জল কার্যকারী ভূমিকা পালন করে।
- ডাবের জল কলেরা প্রতিরোধ বা উপশমে কাজ করে।
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
- ব্যায়ামের পর ডাবের জল পান করলে শরীরের ফ্লইডের ভারসাম্য বজায় রাখে।
- ঘামাচি, ত্বক পুড়ে গেলে বা র্যাশের সমস্যায় ডাবের জল লাগালে আরাম পাবেন।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখতে সহায়তা করে।
- ব্লাড সার্কুলেশন ভালো করতে ডাবের জল উপকারী।
- ডাবের জল গ্রোথ বাড়াতে সাহায্য করে।
- বদহজম দূর করে।
- কোলাইটিস, গ্যাসট্রিক, আলসার, ডিসেন্ট্রি ও পাইলসের সমস্যায় কাজে দেয়।
- ঘন ঘন বমি হলে ডাবের জল ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- ডাবের জলে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। যা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী।
- কিডনীতে পাথর সমস্যায় দূর করতে ঔষুধ হিসেবে কাজ করে।
ডাবের জল আর কোমল পানীয় এর মধ্যে পার্থক্যঃ
- ডাবের জলে সোডিয়াম রয়েছে ২৫ গ্রাম। এনার্জি ড্রিকংসে যার পরিমাণ ২০০ গ্রাম। বেশি সোডিয়াম শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর।
- সুগারের দিক থেকেও ডাবের জল খুবই উপকারী। কেননা ডাবের জলে সুগার আছে মাত্র ৫ গ্রাম। কিন্তু কোমল পানীয়তে সুগারের মাত্রা ১০-২৫ । যা আমাদের জন্য ক্ষতিকর।
- ডাবের জলে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম রয়েছে । যা আমাদের হার্টের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কোমল পানীয়তে যা নেই।
- কোমল পানীয়তে ক্লোরাইড ৩৯ গ্রাম। ডাবের জলে এর পরিমাণ ১১৭ গ্রাম। যার ফলে ডাবের জল আমাদের শরীরের ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স বজায় রাখতে সাহায্য করে।