কলাগাছের শহীদ মিনার!

রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায়-তাইতো তোমায় স্মরন করি বিনম্র চিত্তে গভীর শ্রদ্ধায়”। ১৯৫২ সালের সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক, বিশিষ্ট আইনজীবি, রাজনৈতিক গবেষক ও ভাষা সৈনিক এডভোকেট কাজী গোলাম মাহবুবের স্মৃতি বিজরিত জন্মস্থান বরিশালের গৌরনদী পৌর এলাকার লাখেরাজ কসবা গ্রাম। ওইগ্রামসহ ভাষা সৈনিকের সমাধীস্থল কিংবা পাশ্ববর্তী মহল্লার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটিতেও নেই কোন স্থায়ী শহীদ মিনার। এছাড়াও লাখেরাজ কসবা গ্রামের পাশ্ববর্তী নীখখোলা নামকস্থানে গত ছয় বছর পূর্বে ভাষা সৈনিকের পারিবারিক উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে ‘ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব স্মৃতি পাঠাগার’। পাঠাগারের সম্মুখেও আজো নির্মিত হয়নি কোন শহীদ মিনার। এবছর কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার নির্মান করার উদ্যোগ নিয়েছে পাঠাগারের সহযোগী ইনচার্জ দিদারুল ইসলাম। এলাকাবাসি ভাষা সৈনিকের জন্মস্থানসহ স্মৃতি পাঠাগারের সম্মুখে স্থায়ী ভাবে শহীদ মিনার নির্মানের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। 

সূত্রমতে, বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের পাশ্ববর্তী গৌরনদী পৌর এলাকার নীলখোলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানে পারিবারিক উদ্যোগে ভাষা সৈনিকের পৈত্রিক স¤পত্তিতে ২০০৬ সালের ১৪ ফেব্র“য়ারি “ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব স্মৃতি পাঠাগার” ও তার মায়ের নামে “আছিয়া চ্যারিটেবল ক্লিনিক”-এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। স্মৃতি পাঠাগার ও ক্লিনিকের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন ভাষা সৈনিকের পুত্র কাজী মামুন হাসান। দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি ভবনের একটি কক্ষে পাঠাগার ও অপর একটিতে ক্লিনিকের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ক্লিনিকের সহযোগী ইনচার্জ দিদারুল ইসলাম জানান, সপ্তাহে তিনদিন বরিশাল ও গৌরনদী হাসপাতালের বিশেষ্ণ চিকিৎসকেরা বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্লিনিকে আসা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। সপ্তাহের শনি ও রবিবার বরিশাল ও বুধবার গৌরনদী হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বিকেল চারটা থেকে সাতটা পর্যন্ত ওই ক্লিনিকে আসা প্রায় দুই থেকে আড়াই’শ রোগীদের চিকিৎসা সেবা ও ক্লিনিকের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ঔষধ সরবরাহ করে থাকেন। শুরু থেকেই ক্লিনিক ও পাঠাগারে হারুন-অর রশিদ ও দিদারুল ইসলাম নামের দু’জন ষ্টাফ নিয়োগ রয়েছেন। তাদের বেতনাদিসহ সকল ব্যয়ভার ভাষা সৈনিকের পুত্র ডাঃ কাজী মাহমুদুল হাসান চঞ্চলই বহন করছেন। পাঠাগারে রাষ্ট্রভাষার ওপর সহস্রাধীক বই, ভাষা সৈনিকের ভাস্কর্য ও ভাষা সৈনিকের বিশেষ মুহুর্তের কিছু ছবি রয়েছে। ভাষা সৈনিকের প্রতি এলাকাবাসির অনেক আবেগ, শ্রদ্ধা আর বুকভরা ভালবাসা নিয়ে দৃষ্টি নন্দন ও বইপত্রে সমৃদ্ধ পাঠাগারটিতে প্রতিদিন শত শত স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা এসে ভাষার ওপর জ্ঞান চর্চা করছেন। ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব ফাউন্ডেশনের গৌরনদীর সাধারন সম্পাদক জহুরুল ইসলাম জহির বলেন, পাঠাগারের শুরু থেকে অদ্যবর্ধি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উদ্যোগে ভাষা সৈনিকের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জানিয়ে কোন ভূমিকাই রাখা হয়নি। এমনকি স্থানীয় পৌরসভাসহ উপজেলা প্রসাশনের কাছে ভাষা সৈনিকের জন্মভূমি, সমাধীস্থল ও পাঠাগারের সম্মুখে শহীদ মিনার নির্মানের জন্য একাধিকবার ধর্ণা দিয়েও কোন সুফল মেলেনি।

এলাকাবাসি জানান, বায়ান্নর ভাষা শহীদদের স্মরনে সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় গ্রন্থাগার নির্মিত হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ভাষা সৈনিকের জন্মভূমি ও সমাধীস্থলে সরকারি উদ্যোগে কোন গ্রন্থাগার কিংবা স্মৃতি জাদুঘর এমনকি একটি শহীদ মিনার পর্যন্ত নির্মিত হয়নি। এলাকাবাসি সরকারি উদ্যোগে ভাষা সৈনিকের স্মরনে স্মৃতি গ্রন্থাগার ও জাদুঘর নির্মানের জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।