ভেজাল সার ব্যবহারের ধংশ হয় কৃষকের স্বপ্ন – বরিশালে কৃষক শুনানীতে বক্তারা

হাসিবুল ইসলাম, বরিশাল ॥ ভেজাল সার ব্যবহারের ৭২ ঘন্টার মধ্যে জমির ফসল নস্ট হয়ে যায়, বীজ লালচে হয়ে মরে যায়। কৃষক প্রয়োজনমত সার দিয়েও জমিতে আশানুরূপ ফলন পাচ্ছেন না, তাতে লোকসান যেমন হচ্ছে, পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে জমির স্বাস্থ্যও নষ্ট হচ্ছে। এ কারনে ভেজাল সার উৎপাদন, আমদানি, বিপণন বন্ধ করা দরকার। গতকাল  বুধবার সকাল ১০টায় বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার বাংলাবাজার কাফিলায় কৃষিজমি রক্ষা ও ভেজাল সার উৎপাদন, আমদানি, বিপণন বন্ধের দাবীতে” অনুষ্ঠিত কৃষক শুনানী এসব কথা বলেন বক্তারা। শুনানীতে প্রান্তজন’র নির্বাহী পরিচালক এস এম শাহাজাদার সভাপতিত্বে স্বাক্ষ্যদান করেন কৃষক মো: হাসান শরীফ, নূর মোহাম্মদ প্যাদা, কৃষক শাজাহান সিকদার, সেকান্দার মৃধা, শাজাহান শরীফ, আ: রব, আ: লতিফ, মো: রমজান হোসেন, মো: সোহরাব ব্যাপারী। শুনানী প্যানেলে ছিলেন নিয়ামতি ইউপি সদস্য মো: ফোরকান মৃধা, ডা: সুশীল কুমার দাস, কাফিলা পাবসস লি: এর সভাপতি শাহ আলম মৃধা, সাধারন সম্পাদক এস এস তরিকুল ইসলাম। সঞ্চালনা করেন প্রান্তজন’র ম্যানেজার ইব্রাহিম হামিদ মাসুম। এসময় তারা আরো বলেন ভেজাল সার চিহ্নিত করনের উপকরন না থাকায় তারা দিন দিন প্রতারিত হচ্ছে। কৃষক শুনানীতে বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিদেশ থেকে আমদানিকৃত সারে ভেজাল পাওয়া যাচ্ছে সবচেয়ে বেশি। সার সংক্রান্ত আইন ‘সার (নিয়ন্ত্রণ) আদেশ ২০০৯’ ছাড়াও সার্বিক সমন্বয়ের জন্য  অনেকগুলো কমিটি রয়েছে। মাননীয় কৃষিমন্ত্রীকে প্রধান করে একটি ‘সার বিষয়ক জাতীয় সমন্বয় ও পরামর্শক কমিটি’, কৃষি মন্ত্রনালয়েরর সচিবকে প্রধান করে জাতীয় সার প্রমিতকরণ কমিটি, সমুদ্র-স্থল-বিমান বন্দরে আমদানিকৃত সার বা সার জাতীয় কাঁচামাল ছাড়করণের সময় তার নমুনা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ ত্বরান্বিত এবং ত্রুটিমুক্ত করার উদ্দেশ্যে সার (ব্যবস্থাপনা) বিধিমালা ২০০৭ এর অধীনে একটি কমিটি গঠন রয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সার-বীজ মনিটরিং কমিটি রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ সেবা বিভাগের উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে সারে ভেজাল চিহ্নিত করতে একটি তহবিল রয়েছে। এতকিছুর পরেও কীভাবে ভেজাল সার উৎপাদন ও বিপণন হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১০ সালের মে পর্যন্ত বাংলাদেশ মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট সারাদেশের ১৭ রকমের সারের ৩৫০২টি নমুনা সংগ্রহ করে দেখেছে, ডিলারদের মাধ্যমে বিক্রি হওয়া ৪২ থেকে ৫০ শতাংশ সারেই ভেজাল রয়েছে। এই পরীক্ষায় দস্তা সার ও মিশ্র সারে প্রায় ৮০ শতাংশ, সিঙ্গেল সুপার ফসফেট সারে ৬৭ শতাংশ ভেজাল পাওয়া গেছে। তবে ইউরিয়া সারের মাত্র দুই শতাংশে ভেজাল পাওয়া গেছে। পরীক্ষায় দেখা যায়, দোকানে বিক্রি হওয়া ৪২ শতাংশ সারে প্রয়োজনীয় উপাদান নেই। ২০১০ সালে করা একই পরীক্ষায় ৪০ শতাংশ সারে ভেজাল পাওয়া গিয়েছিল। আরো বলেন , ইটের গুঁড়া, মাটি, বালু, কাচের টুকরো, মুরগির বিষ্ঠা, কারখানার বর্জ্য প্রভৃতি মিশিয়ে ডিলার ও ক্ষুদ্র উৎপাদকরা সার বিক্রি করছেন, যার বেশিরভাগই ভেজাল সার। সারে মিশ্রিত ধাতব পদার্থ ফসলের জন্য ভয়াবহ হুমকি। এটি মাটি ও পানি দূষণ করে ফসলিগাছে রোগ-বালাইয়ের জন্ম দেয়, গাছের খাবার গ্রহণক্ষমতা কমে যায়। সারে মিশ্রিত ধাতবের দূষণক্ষমতা কখনো নষ্ট হয় না; ফলে ভেজাল সার ব্যবহার করে উৎপাদিত খাদ্য গ্রহণ করলে ক্যান্সার, ব্রেইন টিউমার, কিডনি সমস্যাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।