মণীষ চন্দ্র বিশ্বাস ॥ “বিয়ের পর পপিকে কতোবার কইলাম তোমার আর চাকুরি করন লাগবোনা। পপি মোরে কইছিলো আর তিন মাস চাকুরি করেই সে বাড়িতে চলে আসবে। কিন্তু সেই আসাতো আসলা পপি জীবিত নয়, লাশ হয়ে। মোর জন্য তুমি একটা ছবি ছাড়া আর কিছুই থুইয়া গ্যালানা পপি”। বিলাপ করে কথাগুলো বলেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন স্বামী রিয়াজ উদ্দিন।
সাভারের রানা প্লাজা ধ্বসের ঘটনার ১৪ দিন পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ধ্বংসস্তুপ থেকে নিখোঁজ গার্মেন্টকর্মী ও নববিবাহিতা পপি বেগমের লাশ উদ্ধার করা হয়। হতভাগ্য পপি বেগমের লাশ আজ বুধবার সকালে তার বাবার বাড়ি বরিশাল সদরের কাউয়ারচর গ্রামে পৌঁছলে পিতা-মাতা, স্বামী ও স্বজনদের আহাজারিতে ওই এলাকার আকাশ বাতাস ভাড়ি হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে লাশের জানাজা শেষে বাবার বাড়ির পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়।
জানা গেছে, ওই গ্রামের দিনমজুর আবুল কালামের কন্যা পপিকে গত চার মাস পূর্বে সামাজিক ভাবে বিয়ে দেয়া হয় পাশ্ববর্তী বানারীপাড়া উপজেলার চাখার ইউনিয়নের দড়িকর গ্রামের রিয়াজ উদ্দিনের কাছে। পপি ধ্বসে পরা রানা প্লাজার চতুর্থ তলায় গার্মেন্টেস্ েকর্মরত ছিলো। দুর্ঘটনার পর থেকে পপি নিখোঁজ ছিলো। প্রিয়তমা স্ত্রী পপির সন্ধ্যান পেতে দূর্ঘটনার পর থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত স্বামী রিয়াজ তার কাছে পপির রেখে যাওয়া স্মৃতি হিসেবে একমাত্র ছবি হাতে নিয়ে পাগলের মতো ঘুরে বেড়িয়েছেন রানা প্লাজাসহ মর্গ ও হাসপাতালে।
রানা প্লাজা ধ্বসের ১৪ দিন পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ধ্বংসস্তুপ থেকে হতভাগ্য পপি বেগমের লাশ উদ্ধার করা হয়। এসময় তার সাথে পাওয়া আইডি কার্ড ও পোশাক দেখে পপির লাশের সনাক্ত করা হয়। ওইদিন রাতেই সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পপির স্বামী রিয়াজ উদ্দিন ও অন্যান্য স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর হওয়ার পর স্বজনেরা ওই রাতেই লাশ নিয়ে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। গতকাল বুধবার সকালে পপির লাশ নিয়ে তার বাবার বাড়ি বরিশাল সদরের কাউয়ারচর গ্রামে পৌঁছলে সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা ঘটে।
রানা প্লাজা ধ্বসের ঘটনায় বানারীপাড়ার গৃহবধূ পপি বেগমের নিখোঁজের খবর পেয়ে গত ২ মে দড়িকর গ্রামের পপি বেগমের স্বামীর বাড়ির লোকজনদের শান্তনা দিতে ছুটে গিয়েছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সৈয়দ মোঃ মনিরুল ইসলাম মনি। ওইসময় নিখোঁজ পপির স্বজনদের আহাজারি দেখে এমপি মনি নিজেও কেঁদেছেন।