বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি)’র নির্বাচনে আজ রবিবার শেষদিনে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সদ্য পদত্যাগী মেয়র, ১৪ দলের মনোনীত প্রার্থী ও মহানগর আ’লীগের সভাপতি আলহাজ্ব শওকত হোসেন হিরন সহ ৫ জন মেয়র ও ১৯২ জন কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা।
নির্বাচন কমিশনার সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামীলীগ সমর্থিত ১৪ দলের মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে রবিবার দুপুরে বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশনার মোঃ মজিবুর রহমানের হাতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মহানগর আ’লীগের সভাপতি আলহাজ্ব শওকত হোসেন হিরন। এসময় তার সাথে জাতীয় সংসদের সাবেক চীফ হুইফ ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, আ’লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, জেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস-এমপি, জেলা পরিষদের প্রশাসক ডাঃ মোখলেসুর রহমানসহ ১৪ দলের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে গত ১০ মে নির্বাচন কমিশনারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মহানগর যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহমুদুল হক খান মামুন।
শেষদিনে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মহানগর বিএনপির সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহীন। বরিশাল জেলা দক্ষিন বিএনপির সভাপতি আহসান হাবীব কামালের পক্ষে তার সমর্থকেরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। জেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক এবায়দুল হক চাঁনের পক্ষে বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশনারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হয়েছে গত ১০ মে। এছাড়া বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টির বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি এ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ মনোনায়নপত্র ক্রয় করেও জমা দেননি।
বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশনার মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, গতকাল রবিবার মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষদিনে সকাল থেকেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে ভীড় করেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকেরা। সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে তারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার কার্যক্রম। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মনোয়নপত্র ক্রয় করেছিলেন ৬ জন মেয়রপ্রার্থী। এদের মধ্যে ৫ জন মেয়র পদপ্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডে সাধারন কাউন্সিলর পদে ১৬০টি ফরম বিক্রি হলেও জমা পরেছে ১৪৫ টি ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদপ্রার্থী হিসেবে ৪৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, প্রার্থীরা উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যদিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। উৎসুক হাজার-হাজার জনতার ভীড় সামলাতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়েছে। উপস্থিত একাধিক ব্যক্তিরা জানান, প্রথমে নির্বাচন হবে কিনা সন্দেহে উৎসাহ উদ্দীপনার ঘাটতি থাকলেও পরবর্তীতে সেই শংকা কেটে গেছে। প্রার্থী ও সমর্থকেরা মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর নির্বাচনী প্রচারনায় এখন পুরো ব্যস্ত হয়ে পরেছেন।
উল্লেখ্য, বরিশালের ৩০ টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ১০ হাজার ৪৮২ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৩ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৯ জন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৫ ও ১৬ মে মনোনয়নপত্র বাছাই এবং ২৬ মে পর্যন্ত প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষদিন। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৫ জুন।
দোয়া-মোনাজাত ॥ গতকাল রবিবার মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পূর্বে নগরীর ১১, ১২, ১৩ ও ১৪ নং ওয়ার্ডবাসীর উদ্যোগে শনিবার রাতে মেয়র প্রার্থী শওকত হোসেন হিরনের পক্ষে এক সমাবেশ ও দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেয়র প্রার্থী শওকত হোসেন হিরন ওই সমাবেশে তার বক্তব্যে বলেন, এ শহরের একটা পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছি। নগরীর কাউকে আমি কোন দলের কর্মী ভাবিনি। দলমত নির্বিশেষে নির্বিঘেœ বসবাসের পরিবেশ সৃষ্টি করেছি। সিটি কর্পোরেশনের দ্বার সবার জন্য উন্মুক্ত রেখেছি। আবার নির্বাচিত হলে সততার সাথে দ্বায়িত্ব পালন করব। নগরীর নুরিয়া স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব ওবায়দুর রহমান মোস্তফার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস-এমপি, সমাজ সেবক ও স্থানীয় বাসিন্দা আলহাজ্ব আঃ ওহাব, একেএম মাহবুব আলম, আলহাজ্ব আব্দুর রশিদ তালুকদার, হাবিবুর রহমান, চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু, সাবেক কমিশনার বজলুর রহমান, মহানগর আ’লীগের সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট আফজালুল করিম, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর হোসেন, ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি মেজবাউল ইসলাম দিপু, সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট সবুজ খান, মাসুদ খন্দকার, হুমায়ুন কবির, জিয়াউর রহমান, তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ। শেষে মেয়র প্রার্থী শওকত হোসেন হিরনের সাফল্য কামনা ও নির্বাচনে জয়ের জন্য দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
আচরণবিধি পর্যবেক্ষণে মনিটরিং কমিটি গঠন ॥ বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে প্রার্থীদের আচরণবিধি পর্যবেক্ষন করতে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। রিটানিং অফিসার ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ মুজিবুর রহমানকে আহবায়ক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট ওই মনিটরিং টিমের সদস্যরা মনোনয়নপত্র দাখিলের পর থেকে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণায় সময় আচরণবিধি লংঘনের বিষয়টি তদারকি করবেন। রিটানিং অফিস সূত্রে জানা গেছে, আচরণবিধি পর্যবেক্ষন মনিটরিং কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হচ্ছেন-সদস্য সচিব সহকারী রিটানিং অফিসার বিভোর কুমার বিশ্বাস, সদস্য বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, তথ্য বিভাগের উপ-পরিচালক জাকির হোসেন, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)’র বরিশালের সভাপতি আক্কাস হোসেন ও বরিশাল এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রুহুল আমিন খান।