‘মহাসেন’ মোকাবেলায় বরিশালে ব্যাপক প্রস্তুতি ॥ সর্বত্র সতর্ক

বিশেষ প্রতিনিধি ॥  ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ মোকাবেলায় বরিশাল জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এ দুর্যোগ মোকাবেলায় গতকাল সোমবার দুপুরে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় চারটি দুর্যোগ মোকাবেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি জেলার সকল সরকারি, আধা-সরকারি ও সরকার নিয়ন্ত্রিত সব প্রতিষ্ঠানের ছুটি বাতিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বরিশালের জেলা প্রশাসক মোঃ শহীদুল আলমের সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি ও বে-সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ‘মহাসেন’ মোকাবেলার প্রস্তুতি সম্পর্কে জেলা প্রশাসক মোঃ শহীদুল আলম জানান, চারটি কমিটি করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্য, আইনশৃঙ্খলা ও কৃষি ব্যবস্থাপনা কমিটি।

ঘূর্ণিঝড় বরিশালে আঘাত হানলে এসব কমিটি সম্মিলিতভাবে দুর্যোগ মোকাবেলায় কাজ করবে। তিনি (জেলা প্রশাসক) নিজেই কমিটিগুলো মনিটরিং করবেন। জেলা প্রশাসক আরো জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় জেলার ১০টি উপজেলার উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কর্মকর্তাদের সার্বিক প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক, মেডিকেল টিম, আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার জন্যও বলা হয়েছে। সতর্ক সংকেত বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে উপকূলীয় এলাকার লোকজনদের নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে আনার জন্য উপজেলা, পুলিশ প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা কাজ শুরু করবেন।

এছাড়াও প্রচার-প্রচারণার জন্য মাইকিং এবং স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুর্যোগ মোকাবেলা সংক্রান্ত বিভিন্ন পরামর্শ দেয়ার জন্যও বলা হয়েছে। এজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে জিআর প্রকল্পের এক’শ মেট্রিকটন চাল বরাদ্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়াও দুর্যোগের খবর আদান প্রদানের জন্য ইউনিয়ন ও উপজেলা জেলা পর্যায়ের তথ্য সেল গঠন করা হবে। ইতোমধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কট্রোলরুম খুলেছে।

অপরদিকে, ‘মহাসেন’ মোকাবেলায় ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুত কর্মসূচী বরিশাল অঞ্চল। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুত কর্মসূচী বরিশাল অঞ্চলের উপ-পরিচালক মোঃ আব্দুর রশিদ জানান, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুত কর্মসূচী বরিশাল অঞ্চলের (সিপিপি)’র আওতায় ৫টি উপজেলায় (শরণখোলা, মঠবাড়িয়া, দশমিনা, গলাচিপা ও বাউফল)-এ ৫ হাজার ৩’শ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি-সম্পাদকদের কাছে ঘূর্ণিঝড়ের খবর সরবরাহ করা হচ্ছে। সব মাছ ধরার ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে। ১৫৩টি সিপিবি ইউনিটে সাংকেতিক পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় জরুরি সভা করা হয়েছে। ওয়ারলেচের মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড়ের শেষ খবর মুহুর্তের মধ্যে উপকূলীয় এলাকায় পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।

এদিকে, বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগের সবার ছুটি বাতিল ও কর্মস্থল ত্যাগ না করার নির্দেশ দিয়েছে সিভিল সার্জন। সিভিল সার্জন ডাঃ মিজানুর রহমান জানান, ইতোমধ্যে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ঔষধও মজুদ রাখা হয়েছে। খোলা হয়েছে কন্টোল রুম। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও আলাদা মেডিকেল টিম কাজ করবে। তাদের ইতোমধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সবোর্চ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।