বিসিসি নির্বাচন : বড় দু’দলেই বিদ্রোহী প্রার্থী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥  বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি)’র তৃতীয় নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে ক্ষমতাসীন দল আ’লীগের দু’জন ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির তিনজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল ও পরবর্তীতে নির্বাচনী প্রচার প্রচারনার মধ্যদিয়ে এখানে স্পষ্ট হয়ে গেছে এখনো উভয়দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন হয়নি।

 
সূত্রমতে, মনোনয়নপত্র দাখিলের পর নির্বাচনী প্রচার প্রচারনায় এখন নড়ে চড়ে বসেছে বরিশাল। যে যার অবস্থান থেকে প্রকাশ্যে ও কৌশলে প্রচারণায় নেমেছেন। এরমধ্যে সদ্যবিদায়ী মেয়র, মহানগর আ’লীগের সভাপতি ও সম্মিলিত নাগরিক কমিটির মনোনীত প্রার্থী আলহাজ শওকত হোসেন হিরন ও তার সমর্থকেরা জোরে শোরেই নির্বাচনী মাঠ গরম করে রেখেছেন।

কোন অংশেই পিছিয়ে নেই আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও মহানগর যুবলীগ যুগ্ন আহবায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন। তিনি কৌশলে নির্বাচনী প্রচার প্রচারনার পাশাপাশি ভোট ব্যাংকগুলোকে আয়ত্বে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ শওকত হোসেন হিরন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে মনোনয়ন পাওয়ার পরেই নগরীর সম্মিলিত নাগরিক কমিটিও তাকে সমর্থন করেন। এরমধ্যেই বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে উঠেছেন যুবলীগ নেতা মাহমুদুল হক খান মামুন।

সূত্রে আরো জানা গেছে, আ’লীগের একাধিক নেতারা ইতোমধ্যে খান মামুনের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর প্রচারণা চালালেও তা নাকচ করে দিয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী খান মামুন। বিদ্রোহী প্রার্থী মাহমুদুল হক খান মামুন বলেন, আমি বরিশালের সন্তান, দীর্ঘদিন থেকেই এ মহানগরীর মানুষের সুখে, দুঃখে পাশে ছিলাম ও আছি, সেই হিসেবেই নগরবাসীর দোয়া ও আর্শীবাদ নিয়ে মেয়র প্রার্থী হয়েছি। তিনি আরো বলেন, আমি দলের ব্যানারে নই; দলের লোক আমাকে কথা দিয়ে কথা রাখেনি, প্রয়োজন হলে দলত্যাগ করবো তবু মেয়র পদে লড়াই চালিয়ে যাবো।

অপরদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির তিনজন প্রভাবশালী নেতা মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করার পর থেকে এখানে বিএনপির অতীতের দলীয় অভ্যন্তরীন কোন্দল তৃণমূল পর্যায়ে আরো চরম আকার ধারন করে। বরিশাল জেলা দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামাল, মহানগর বিএনপির সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহীন ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক এবায়েদুল হক চাঁন ও তাদের সমর্থকেরা প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনায় না নামলেও কৌশলে তারা তাদের সমর্থকদের মাঠে রেখেছেন।

এরইমধ্যে আহসান হাবিব কামাল নিজে উদ্যোগী হয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে মহানগর বিএনপির সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার-এমপির বাসায় গিয়ে বৈঠক করেও কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি। তবে বিএনপির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন, গোপনীয়তার সাথে এখনো সমঝোতার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি মেয়র প্রার্থী হিসেবে ক্ষমতাসীন দলের সাথে বিএনপির প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতায় মাঠে থাকছেন বলেও সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।

এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সভাপতি আহসান হাবিব কামাল বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে আমি কোন নির্বাচন করবো না।

জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবায়েদুল হক চাঁন বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণে দলের সরাসরি কোন সিদ্ধান্ত না থাকায় আমি দলের ব্যানারে কোন মনোনয়ন জমা দেইনি। আমি নাগরিক কমিটির প্রার্থী। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এখন আমি দলের কোন পদে নেই। তবুও মানুষের পাশে ছিলাম। সেই ভরসায়ই মেয়র প্রার্থী হয়েছি।

অপর প্রার্থী এ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহীনের মতে, দল যে সিদ্ধান্ত নিবে সেই সিদ্ধান্তই পালন করা হবে।

একক প্রার্থী দিতে বিএনপির কমিটি গঠন ॥ বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিসিসি’র নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় একক প্রার্থীকে সমর্থন দিতে বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপির জেষ্ঠ্য নেতাদের নিয়ে দশ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটির নেতৃবৃন্দরা মনোনয়নপত্র দাখিল করা দলের তিন প্রার্থীর সাথেই আলোচনা করে আগামীকাল বুধবারের মধ্যে একক প্রার্থী নির্ধারণ করবেন। দশ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটির আহবায়ক করা হয়েছে বরিশাল বিএনপির জেষ্ঠ্য নেতা এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান নান্টুকে। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন-বিএনপি নেতা এ্যাডভোকেট সাইয়েদ আহমেদ মধূ, এ্যাডভোকেট মহসীন মন্টু, আলতাফ মাহামুদ সিকদার, মনিরুজ্জামান ফারুক, জিয়াউদ্দিন সিকদার, বশির আহমেদ, মীর জাহিদুল কবির খন্দকার, ছাত্রদল নেতা আবুল হাসান লিমন ও মাসুদ হাসান মামুন।

কমিটির আহবায়ক এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান নান্টু জানান, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে দলীয় একক প্রার্থীকে সমর্থন দেয়ার জন্য মহানগর বিএনপির সভাপতি এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার-এমপি’র বাসায় গত ১২ মে রাতে তিন প্রার্থীকে নিয়েই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে কোন সিদ্ধান্ত বা সমঝোতা না হওয়ায় একক মেয়র প্রার্থী নির্ধারণে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রার্থীদের সাথে আলোচনা করেই আগামীকাল বুধবার দলীয় ভাবে একজন প্রার্থীকে সমর্থন দেয়ার কথা রয়েছে। তিনি আরো জানান, একক মেয়র প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর অপর দু’প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে আনবেন বলে আমরা আশাবাদি।

১০১ সদস্য বিশিষ্ট সম্মিলিত নাগরিক কমিটি ॥ বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি)’র নির্বাচনে ১৪ দল মনোনীত মেয়র প্রার্থী আলহাজ্ব শওকত হোসেন হিরনের সমর্থনে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট ‘সম্মলিত নাগরিক কমিটি’ গঠন করা হয়েছে।

ওই কমিটিতে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর মো হানিফকে সভাপতি ও মাহাবুব উদ্দিন-বীর বিক্রমকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। সম্মলিত নাগরিক কমিটিতে স্বাধীনতার স্বপেক্ষ শক্তি মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, চিকিৎসক, আইনজীবী, নারী নেত্রী, এনজিও কর্মকর্তা, ধর্মীয় নেতা, গণজাগরন মঞ্চের সংগঠক, ব্যবসায়ী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ এবং ১৪ দলের নেতৃবৃন্দদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে।

দেশে ক্রান্তিলগ্ন চলছে ॥ স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে, জাতীয় সংসদের সাবেক চীফ হুইপ ও জেলা আ’লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, দেশে এখন একটি ক্রান্তিলগ্ন চলছে। স্বাধীনতা বিরোধী গোষ্ঠী নৈরাজ্য সৃষ্টি করে যখন দেশের ক্ষমতা দখল করতে চাচ্ছে। ঠিক সেই মুহুর্তে আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির পরাজয় ঘটলে গোটা জাতির পরাজয় হবে। বেপরোয়া হয়ে উঠবে স্বাধীনতা বিরোধীরা। তাই সকল মতভেদ ভুলে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থী আলহাজ শওকত হোসেন হিরনকে বিজয়ী করার জন্য তিনি সকলের কাছে আহবান করেন।

সোমবার রাতে বরিশাল নগরীর অমৃত লাল দে মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জেলা ও মহানগর শ্রমিকলীগের বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মেয়রপ্রার্থী শওকত হোসেন হিরন বলেন, গত ৪ বছর ৭ মাস মেয়র পদে দায়িত্ব পালনকালে সকলের চাহিদা পুরন করতে পারিনি। এজন্য অনেকের মনে কষ্ট থাকতে পারে। পুনরায় নির্বাচিত হতে পারলে অতীতের ভুল ত্র“টিগুলো সংশোধন করব।

মহানগর শ্রমিকলীগের আহ্বায়ক আফতাব হোসেনের সভপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, জেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস-এমপি, আ’লীগ নেতা মাহবুবউদ্দিন আহম্মেদ (বীর বিক্রম), মহানগর আ’লীগের সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট আফজালুল করীম, বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু, শ্রমিকলীগ নেতা শাহজাহান হাওলাদার, পরিমল চন্দ্র রায় প্রমুখ।