বিসিসি নির্বাচন : নাগরিক সমাজের ব্যানারে বিএনপির একক প্রার্থী ঘোষণা

বিশেল প্রতিনিধি ॥  বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) নির্বাচনে শেষপর্যন্ত নাগরিক সমাজের ব্যানারে বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্য বিষয়ক সম্পাদক আহসান হাবীব কামালকেই বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি দুই প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিবেন বলে লিখিত দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে বারোটার দিকে ঢাকার গুলশান কার্যালয়ে তিন প্রার্থীর উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। এরআগে একক প্রার্থী নির্ধারণে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া তিন নেতাকে নিয়ে গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন কয়েক দফা বৈঠক করেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিসিসি’র নির্বাচনে কৌশলগত কারনে নাগরিক সমাজের ব্যানারে বিএনপির একক প্রার্থী নির্ধারণে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ঢাকার গুলশান কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় নেতা ড. খন্দকার মোশারফ হোসেনের উপস্থিতিতে ওই সভায় মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্য বিষয়ক সম্পাদক ও বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি আহসান হাবীব কামাল, সাবেক সাধারন সম্পাদক এবায়েদুল হক চাঁন এবং মহানগর বিএনপির সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহীন অংশগ্রহন করেন।

সূত্রে আরো জানা গেছে, টানা দু’ঘন্টা বৈঠকেও কোন সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে রাত সাড়ে দশটার দিকে খন্দকার মোশারফ হোসেন দলীয় চেয়ারপার্সনের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার শর্তে সাদা কাগজে তিন প্রার্থীর সাক্ষর গ্রহন করেন। পরবর্তীতে তিনি (মোশারফ হোসেন) স্বাক্ষর করা ওই কাগজ নিয়ে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার কক্ষে যান। সেখানে খালেদা জিয়ার সাথে আলোচনা করে তিনি রাত সোয়া ১১টার দিকে এবায়েদুল হক চাঁনকে নিয়ে একান্ত বৈঠকে বসেন। চাঁন সমর্থন না পেলে যাতে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন এবং দলের সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালান সে ব্যাপারে সমঝোতা করতে এ বৈঠক করা হয়েছে বলেও সূত্রটি জানিয়েছেন। পরবর্তীতে রাত সাড়ে ১১ টার দিকে আবারো তিন নেতাকে নিয়ে বৈঠকে বসেন খন্দকার মোশারফ। এরপর তিন প্রার্থীকে নিয়ে খালেদা জিয়ার অফিস কক্ষে যান খন্দকার মোশারফ। এর কিছুক্ষন পরই আহসান হাবীব কামালকে বিএনপি সমর্থিত একক প্রার্থী ঘোষণা করা হয়।

বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার-এমপি সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খান রাজন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান আকতার শিরিন, সাবেক এমপি আবুল হোসেন খান, জেলা বিএনপি নেতা মনিরুজ্জামান ফারুক উপস্থিত ছিলেন। গভীর রাতে বৈঠক শেষে মেয়র প্রার্থী ও মহানগর বিএনপির সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহিন উল্লেখিত সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, ২০০৩ সনে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিসিসি’র নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী ও তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার-এমপির বিরুদ্ধে নির্বাচন করায় আহসান হাবীব কামালকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছিলো। ২০০৯ সনে পূর্ণরায় তাকে দলে ফিরিয়ে নেয়া হয়।

                                                    ১২ কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল

মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দ্বিতীয় দিনে সাধারন কাউন্সিলর পদে ১১ জন এবং সংরক্ষিত আসনের একজন মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল বলে ঘোষনা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বাছাই শেষে সন্ধ্যায় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার মোঃ মজিবুর রহমান জানান, মানোনয়নপত্র বাছাইয়ে বুধবার ঋনখেলাপীর জন্য সংরক্ষিত ১জন এবং সাধারন কাউন্সিলর ৩ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। শেষদিনে বৃহস্পতিবারও সাধারন কাউন্সিলর পদে আটজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। দু’দিনে ১১ জন সাধারন ও একজন সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীরা হলেন- ৪,৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী আলমতাজ বেগম, ১নং ওয়ার্ডের সাধারন কাউন্সিলর প্রার্থী সৈয়দ সাইদুল হাসান, ২ নং ওয়ার্ডের সাইদুল ইসলাম হিরু ও আহছান উল্লাহ, ১৪নং ওয়ার্ডেন শাকিল হোসেন পলাশ, ১৫নং ওয়ার্ডের সাদিকুল কবীর, ১৭নং ওয়ার্ডের আব্দুল আজিজ সরদার, ২০নং ওয়ার্ডের জিয়াউর রহমান বিপ্লব, জাবেদ হোসেন লিপন, ২৩নং ওয়ার্ডের রেজাউল কবীর রেজবী চৌধুরী, ২৪নং ওয়ার্ডের সোহেল বিশ্বাস ও ২৯নং ওয়ার্ডের কবীর হোসেন হাওলাদার।

আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, ঋণখেলাপীসহ হলফনামায় ভুল তথ্য দেয়ার অভিযোগে উল্লেখিত প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। গত ১২ মে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষদিন পর্যন্ত সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহনের লক্ষ্যে মেয়র পদে ৫ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৪৯ ও সাধারন কাউন্সিলর পদে ১৪৫ জন মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছিলেন। এরমধ্যে সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৪৮ জনের ও সাধারন কাউন্সিলর পদে ১৩৪ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে। অপরদিকে বুধবার বাছাইয়ের প্রথম দিনেই ৫ মেয়র প্রার্থীর সকলের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষনা করা হয়। আগামী ২৬ মে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষদিন ও ১৫ জুন ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে।