বিশেষ প্রতিনিধি ॥ মুই এ্যাহন পোলাপান লইয়া কি কইরা সংসার চালামু হেইয়া মুই নিজেও কইতে পারি না। ধার দেনা কইরা ও বাড়ির গাছ বেইচ্ছা ২৪০ করা (শতক) জমিতে ইরি ধান লাগাইছিলাম। এসব ক্ষেতের ধান আর চার দিনের মধ্যে কাঁটার কতা ছিল। কিন্তু গত তিন দিনের বৃষ্টিতে মোর স্বপ্ন তলাইয়া এ্যাহন পানির নিচে গেছে। কথাগুলো বলছিলেন, বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার কান্দিরপাড় চেঙ্গুটিয়া গ্রামের ক্ষুদ্র কৃষক সৈয়দ জয়নাল আবেদীন। এ কথা শুধু জয়নালের একারই নয়। একই ভাবে বলেছেন, গেরাকুল গ্রামের হেলাল মিয়া, হানিফ বেপারী, চেঙ্গুটিয়া গ্রামের কৃষক নুরু তালুকদার, ছোট বাশাইল গ্রামের বারেক মোল্লা, গোয়াইল গ্রামের হরিপদ গাইন, তাঁরাকুপি গ্রামের কুদ্দুছুর রহমান, মিজানুর রহমানসহ অনেকে।
ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের তান্ডবে গত তিন দিনের অবিরাম বর্ষণে কৃষকদের স্বপ্নের ইরি-বোরো ধান এখন পানির নিচে তলিয়ে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমান কৃষণা না পাওয়া পানির নিচ থেকে ধান কাটাতে পারছেন না ওইসব কৃষকেরা। মাত্র কয়েকদিন পূর্বেও জমির আধা পাকা ধান নিয়ে কৃষকের মনে জেগে ছিল আনন্দ। কিন্তু সে আনন্দে ছেদ পড়েছে হঠাৎকরে ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের প্রভাবে দমকা ও ঝরো হাওয়ার সাথে ভারি বর্ষন। কৃষকের সম্ভাবনার ধান ক্ষেত এখন লন্ডভন্ড। মহাসেনের প্রভাবে বুধবার রাত থেকে টানা দু’দিন ও গতকাল শুক্রবার সকালে ভারি বর্ষণে ধান ক্ষেত এখন পানিতে টই টুম্ভুর। পানিতে ডুবে থাকা আধা পাকা ধান এখন পচনের আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। জলাবদ্ধ এই ইরি-বোরো ক্ষেত কয়েকদিন গেলেই ধান চিটা হয়ে পড়বে। এতে কৃষক তার ফসল হারাবে।
একমাত্র ইরি-বোরো চাষের ওপর নির্ভরশীল বরিশাল সদর, উজিরপুর, বাবুগঞ্জ, মুলাদী, গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলা। এসব উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় প্রতিটি এলাকার ইরি বোরোর জমির ক্ষেত এখন পানির নিচে। এরমধ্যে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলায় ১২টি ইউনিয়নে মোট ১৪ হাজার ২’শ ২২ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো আবাদ করা হয়েছিলো। ঘুর্নিঝড় মহাসেনের প্রভাবে ১২টি ইউনিয়নে বুধবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার সকাল নয়টা পর্যন্ত ঝড়ো হাওয়ার পাশাপাশি প্রবল বর্ষনে জমির ইরি-বোরো ক্ষেত এখন অথৈ পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে।
রাজিহার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ ইলিয়াস তালুকদার বলেন, এ অঞ্চলের মানুষ একমাত্র ইরি-বোরো চাষ করে জীবিকা নিবাহ করেন। এব এলাকার কৃষকেরা এখন ফসল হারানোর আশঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
আগৈলঝাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারনে কৃষকরা পাকা ফসল ঘরে তুলতে পারছেনা। এ ছাড়া ধানের দাম কম হওয়ায় কৃষান পাচ্ছেনা। কৃষকেরা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে ধান কাটা শুরু করেছে।
গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ অধিকাংশ এলাকা পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সাহায্যের জন্য ইতোমধ্যে জিআর থেকে সাহায্যের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়েছে।