বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জামায়াতের সাবেক আমীর ও র্শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়কে সামনে রেখে দেশব্যাপী ও বিশেষ করে চার সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনকে পূঁজি করে বড় ধরনের নাশকতামূলক কর্মকান্ডের প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী ও প্রশিক্ষিত ক্যাডাররা। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে নেতা-কর্মীদের একত্রিত করন এবং পরবর্তী দিক নির্দেশনামূলক বৈঠকের কাজ। জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সাথে আলাপকালে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র মতে, ওই নেতা-কর্মী ও ক্যাডাররা বেশকিছুদিন নীরবে থাকলেও পূর্ণরায় মাথাচাড়া দিতে উঠতে শুরু করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় গোপন বৈঠক চলাকালীন সময় শুক্রবার রাতে বরিশাল নগরীর কোতয়ালী থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারীসহ ১০ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। এরপূর্বে জেলার বানারীপাড়া ও গৌরনদীতে গোপন বৈঠকের সময় অসংখ্য জামায়াত-শিবিরের নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বরিশাল নগরীর কোতয়ালী মডেল থানার ওসি শাখাওয়াত হোসেন জানান, আজ রবিবারের হরতাল ও সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনকে সামনে রেখে নগরীতে নাশকতামূলক কর্মকান্ড ঘটানোর উদ্দেশ্যে জামায়াতের নেতারা শুক্রবার রাতে গোপন বৈঠকে বসে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এ খবর পেয়ে থানা পুলিশ নগরীর সাগরদী এলাকায় মজিদ মঞ্জিলে গোপন বৈঠকরত অবস্থায় অভিযান চালিয়ে জামায়াতের দশ নেতাকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারী মোঃ জহির উদ্দিন বাবর, প্রচার সম্পাদক মোঃ শাহআলম, জামায়াত নেতা মোঃ আকরাম হোসেন, আব্দুর জব্বার, আব্দুল মান্নান, আহম্মদ আলী, আবুল বাশার, আব্দুল ওহাব, অলিউল্লাহ ও আব্দুস ছাত্তার। ওসি আরো জানায়, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। আজ শনিবার গ্রেফতারকৃতদের ওইসব মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরন করা হয়।
সূত্রে আরো জানা গেছে, গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার যেকোন সময় রায় হতে পারে। এ রায়ের দিন জামায়াত-শিবির সারাদেশে হরতাল তো ডাকবেই, পাশাপাশি নতুন নতুন স্পটে সর্বশক্তি নিয়ে সহিংসতা চালাবে। জামায়াতের একাধিক সূত্র জানায়, দলের শীর্ষ নেতাদের কারাগার থেকে মুক্ত করা, সারাদেশে জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদ ও সাংগঠনিক অস্তিত্ব রক্ষা করতে এবং সর্বোপরি সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে সহিংসতার পথ বেঁছে নেওয়া হয়েছে। এ জন্য কেন্দ্রীয় নির্দেশে সারাদেশে নেতা-কর্মীদের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওই নির্দেশ পেয়ে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা বরিশাল নগরী, গৌরনদী ও বানাপারীপাড়া উপজেলায় গোপন বৈঠক করতে গিয়ে ইতোমধ্যে পুলিশের হাতে গ্রেফতারও হয়েছেন।
এ ব্যাপারে বরিশাল মহানগর জামায়াতের এক প্রভাবশালী নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকার বিরোধীদলগুলোকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে জামায়াত-শিবিরকে নিশ্চিহ্ন করতে পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করছে। ফলে মামলার পর মামলা দিয়ে নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে। এমনকি নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে চলাফেরা পর্যন্ত করতে পারছেন না। এ অবস্থায় আবারও রাজপথ দখল করা ছাড়া জামায়াতের সামনে অন্যকোনো পথ নেই। সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে তার পরই জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা ঘরে ফিরবে।
বিএনপির সমর্থন ॥ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জামায়াতের সকল কর্মকান্ডে নেপথ্যে ও প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে আসছে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি। ফলে গুটি কয়েক জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী ও ক্যাডাররা বিভিন্ন সময় দেশের মধ্যে সহিংস কর্মকান্ড করতে সাহস পেয়েছে।
প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ॥ বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার একেএম এহসান উল্লাহ বলেন, শুধু জামায়াত কিংবা শিবিরই নয়। যে দলের লোকই হোক না কেন, বরিশালে কেহই সহিংসতা কিংবা নাশকতামূলক কর্মকান্ডের পরিকল্পনা করে পার পেয়ে যেতে পারবেনা। সেজন্য সব সময় সকল থানার পুলিশ সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরো জানান, সহিংসতা কিংবা নাশকতামূলক কর্মকান্ড ঘটাতে পারে এমন ব্যক্তিরা পুলিশের নজরদারিতে রয়েছেন। সঠিক সময়েই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।