ভারতে স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনাঃ একটি পূর্ণাঙ্গ বিবরণ

শুভজিৎ ভৌমিক ॥ ভারতে একটি সংগঠন আছে, নাম International Council For Cultural Relations, সংক্ষেপে ICCR । এই সংগঠনটির কাজ হলো, যেসব দেশের সাথে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক ভালো, সেসব দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের বিনামূল্যে পড়ালেখার সুযোগ করে দেয়া, অর্থাৎ শিক্ষাবৃত্তি বা স্কলারশিপ দেয়া। বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রীরা এই স্কলারশিপ স্কিমের আন্ডারে বছরে একবার স্কলারশিপ পায়। স্কলারশিপ দেয়া হয় আন্ডারগ্র্যাজুয়েট, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট, গবেষণা অর্থাৎ Ph.D এবং বিভিন্ন পারফর্মিং আর্ট যেমনঃ নাচ, গান ইত্যাদির জন্য। 

আন্ডারগ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ দেয়া হয় ৬০ টি

পোস্টগ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ দেয়া হয় ২০ টি

গবেষণার জন্য স্কলারশিপ দেয়া হয় ১০ টি

পারফর্মিং আর্টের জন্য স্কলারশিপ দেয়া হয় ১০ টি

 

অর্থাৎ, মোট ১০০ টি স্কলারশিপ। এমবিবিএস এবং বিডিএস কোর্সের জন্য স্কলারশিপ দেয়া হয়না। এই লেখাতে আমরা আন্ডারগ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ নিয়ে আলোচনা করবো। 

 

দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা সীমিত হওয়ার জন্য, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচুর খরচের জন্য এবং পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দের বিষয়টি পড়তে না পারার জন্য উচ্চ মাধ্যমিক পাস বহু শিক্ষার্থী এক বছর নষ্ট করে, তাও অনেকের ঠাঁই হয়না কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাদের জন্য এই স্কলারশিপটি হতে পারে চমৎকার একটা সুযোগ। এই স্কলারশিপ স্কিমের আন্ডারে আপনি যা যা পাবেনঃ

 

১। যে কোনও ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যে কোনও নামকরা কলেজে গ্র্যাজুয়েশনের সুযোগ। সম্পূর্ণ টিউশন ফি দেবে এবং ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দেবে ICCR।

২। বাসা ভাড়া, খাবার, যাতায়াত ইত্যাদির জন্য প্রতি মাসে সাড়ে দশ হাজার রুপি হাতখরচ।

 

এই স্কলারশিপটির সম্পর্কে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা বেশির ভাগই জানেন না, সেজন্য অনেকেই আবেদন করতে পারেন না। এছাড়াও, ভারতীয় সেমিস্টার সিস্টেমে বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলের ক্লাস শুরু হয় আমাদের দেশের চেয়ে কিছুটা পরে। ততদিনে বেশির ভাগ ছাত্র-ছাত্রী কোথাও না কোথাও ভর্তি হয়ে যায়, অথবা দ্বিতীয়বারের মতো পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে। বিরাট সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী হতাশায় ভোগে। ফলে কিছুদিন আগে পর্যন্তও এই স্কলারশিপগুলোর সংখ্যার সমান সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীই আবেদন করতো না। ফলে যারা আবেদন করতো, তারাই কোনও রকম প্রতিযোগিতা ছাড়া নির্ঝঞ্ঝাটে ভারতে পড়তে চলে যেতো। 

 

 এখন কিছুটা প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়েছে এই স্কলারশিপটি, তবুও আবেদকের সংখ্যা খুবই নগণ্য। সুতরাং, আবেদনটা করে দিলেই খুব বড় ধরনের সুযোগ থাকে চান্স পেয়ে যাওয়ার। জেনে অবাক হবেন আপনারা, টিউশন ফি এবং মাসিক হাতখরচ সহ স্কলারশিপটির অর্থমূল্য বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ টাকার কাছাকাছি। আর এর পুরোটাই ICCR দেয় বিনামূল্যে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, স্কলারশিপটা কীভাবে পাওয়া যায়, কী কী লাগে এবং আবেদন কীভাবে করতে হয়। 

 

যা যা লাগবেঃ

 

১। মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের সার্টিফিকেট এবং মার্কশিটের সত্যায়িত ফটোকপি।

২। মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের সিলেবাসের সত্যায়িত ইংরেজি ভার্শন (নীলক্ষেতে কিনতে পাওয়া যায়, কিনে সত্যায়িত করে নেবেন)।

৩। কিছু পাসপোর্ট সাইজ ছবি, ছবির পিছে নাম লেখা থাকতে হবে।

৪। পাসপোর্টের সত্যায়িত ফটোকপি (পাসপোর্ট না থাকলে বানিয়ে ফেলুন। খুব সোজা, এক মাস লাগে বানাতে। আগারগাঁওতে পাসপোর্ট অফিসে যান, বুঝে যাবেন)।

৫। দু’জন গুরুত্বপূর্ণ লোকের কাছ থেকে নেয়া ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট। (সাধারণত কলেজ থেকেই একটা দিয়ে দেয় প্রিন্সিপালের পক্ষ থেকে, যেটাকে বলে টেস্টিমোনিয়াল। সেটা পাওয়া গেলে আর একটা হলেই হবে।)

 

সাধারণ প্রশ্নঃ

 কাগজগুলো সত্যায়িত কার কাছ থেকে করা লাগবে ?

 

এমন কারও কাছ থেকে, যিনি বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে গেজেটেড ফার্স্ট ক্লাস সরকারি অফিসার হিসাবে চাকুরি করছেন।

 

 

এই চারটা জিনিস হয়ে গেলে এবার লাগবে একটা অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম। সেটা সরাসরি ইন্ডিয়ান অ্যাম্বেসিতে গিয়েও নিয়ে আসা যাবে, অথবা ডাউনলোড করে নেয়া যাবে এখান থেকেঃ www.iccrindia.net/education/applicationform-2013.docx

 

 এই ফর্মটা এবার খেয়াল করে দেখুন, যাবতীয় ডিটেইলস আপনি নিজেই লিখতে পারবেন। তবুও আমি একটু সহযোগিতা করিঃ

 

প্রথম দুটি পৃষ্ঠাঃ এই দুটি পেইজ ইন্ডিয়ান অ্যাম্বেসিই ফিলাপ করবে, আপনাকে কিছুই করতে হবে না। 

 

তৃতীয় পৃষ্ঠাঃ এখানে যে স্কলারশিপ স্কিমে আপনি অ্যাপ্লাই করছেন, সেটিতে টিক দেবেন। আমাদের জন্য প্রযোজ্য হলো “বাংলাদেশ স্কলারশিপ স্কিম”।

 

চতুর্থ পৃষ্ঠাঃ এখানে কিছু নির্দেশনা দেয়া আছে, পড়ে দেখতে পারেন।

 

পঞ্চম পৃষ্ঠাঃ এখানে থাকে নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, জন্মস্থান, যোগাযোগের ঠিকানা ইত্যাদি।

 

ষষ্ঠ পৃষ্ঠাঃ এখানে অন্যান্য পয়েন্ট তো ফিলাপ করবেনই, তবে খেয়াল রাখতে হবে, দশ নম্বর পয়েন্টটাতে “এনি আদার ল্যাংগুয়েজ” অপশনে লিখতে হবে বাংলা।

 

 মাঝামাঝিতে দেখতে পাবেন আপনার পছন্দের বিষয় এবং পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম।

 

পছন্দের বিষয়ঃ তিনটি পছন্দের বিষয় দিতে পারবেন আপনি। খুব খেয়াল করেঃ স্কলারশিপ দেয়ার সময় ICCR শুধু আপনার দেয়া প্রথম বিষয়টিই দেখে, পরের বিষয়গুলো দেখে না। এখনও পর্যন্ত একজনকেও পাইনি যিনি পছন্দের দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিষয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। অতএব, আপনি যে বিষয়ে পড়তে চান, সেটিই প্রথমে রাখুন। পরের দুটো পছন্দের জায়গায় একই ক্যাটাগরির দুটো বিষয় দিয়ে দিন। উদাহরণঃ

 

১। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

২। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

৩। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং

 

অথবাঃ

 

১। বিবিএ

২। ব্যাচেলর ইন ফিন্যান্স

৩। ব্যাচেলর ইন অ্যাকাউন্টিং

 

এভাবেই পূরণ করতে হয় জায়গাটা। এবারে আসা যাক পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে। আপনার পছন্দমতো যে কোনও তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম লিখে দিন। সতর্কতার কোনও প্রয়োজন নেই। এটি একেবারেই আপনার ওপর নির্ভর করবে না। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন খালি থাকে, ICCR সেই বিশ্ববিদ্যালয়েই স্কলারশিপ দেয়। অতএব, বিশ্ববিদ্যালয় আপনি যাই লিখুন না কেন, তারা যেখানে নিয়ে ফেলবে আপনাকে, সেখানেই ভর্তি হবেন আপনি। আপনার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি আসন খালি না-ও থাকে, তবে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন খালি আছে, সেখানে ভর্তি করিয়ে দেয় ICCR। তবে আশার কথা, বেশ মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েই আসন পড়ে। অতএব লিখে দিনঃ

 

১। দিল্লী ইউনিভার্সিটি

২। পুনে ইউনিভার্সিটি

৩। যাদবপুর ইউনিভার্সিটি

 

আমি এই তিনটা লিখেছিলাম। আমাকে ভর্তি করিয়েছে ব্যাঙালোর ইউনিভার্সিটিতে।

 

সাধারণ প্রশ্নঃ

 

কোন সাবজেক্টে দিলে চান্স পাওয়ার বেশি সম্ভাবনা থাকে ?

 

এটা বলা যায় না। সাইন্স, আর্টস, কমার্সের বিভিন্ন বিষয়ে ইন্ডিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পরিমাণ সিট খালি থাকে, সেই হিসাবে ষাটজনকে নেয়া হয়। প্রতি বছর সাইন্স, আর্টস, কমার্সের এই বিষয়গুলোতে সিটের পরিমাণ বিভিন্ন ধরনের হয়। প্রতি বছর একই সংখ্যক ছাত্র একই বিষয়ে অ্যাপ্লাইও করে না, সেটাতেও পার্থক্য থাকে।

 

সপ্তম পৃষ্ঠাঃ এখানে কোন বোর্ড থেকে কত সালে কী পাস করেছেন, সেগুলোর ডিটেইলস জানতে চেয়েছে। রেজাল্ট পার্সেন্টেজে জানতে চেয়েছে, সেখানে আপনি আপনার গ্রেড লিখে দিবেন, এ প্লাস বা যাই হোক। খেয়াল করেঃ গোল্ডেন দরকার নেই, তবে মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক দুটোতেই অলওভার এ প্লাস না থাকলে স্কলারশিপ পাওয়াটা একটু কঠিন হয়ে যায়।

 

সাধারণ প্রশ্নঃ

 

আমার এসএসসিতে জিপিএ এতো, এইচএসসিতে জিপিএ এতো। আমি কি চান্স পাবো ?উত্তরঃ চান্স পাওয়ার ব্যাপারটা আসলে কেউ বলতে পারে না, পেতেও পারেন, নাও পেতে পারেন। পুরো ব্যাপারটাই দাঁড়িয়ে আছে সম্ভাবনার ওপরে। আন্ডারগ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ রেজাল্টের ভিত্তিতে প্রথম ষাট জনকে দেয়া হয়। বাকী অ্যাপ্লিকেন্টদের রেজাল্ট আপনার তুলনায় খারাপ হলে অতোটা ভালো রেজাল্ট না নিয়েও আপনি চান্স পেয়ে যেতে পারেন।

 

অষ্টম পৃষ্ঠাঃ এখানে দুইজন পরিচিত দু’জন নামী লোকের রেফারেন্স দেবেন, যারা আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন এবং আপনার চরিত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে ভালো বলতে পারবে। খেয়াল করেঃ এই লোকেরা সচিব বা সেরকম সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হলে খুব ভালো হয়। এসব রেফারেন্স গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। 

 

সাধারণ প্রশ্নঃ

 

রেফারেন্সটা ঠিক কতখানি গুরুত্বপূর্ণ ?

 

উত্তরঃ রেফারেন্সের গুরুত্বটা আসে তখনই, যখন দুটো স্টুডেন্টের রেজাল্ট একই, কিন্তু সিট আছে একটা, তখন যার তুলনামূলক রেফারেন্স ভালো সে চান্স পেয়ে যায়। 

 

অমুকের (নেতা, প্রধানমন্ত্রী, সচিব, আমলা, সরকারি চাকুরিজীবী ইত্যাদির) রেফারেন্স কি দেয়া যাবে ?

 

উত্তরঃ আপনার পরিচিতদের মধ্যে যিনি গুরুত্বপূর্ণ, তারই রেফারেন্স দিন। অনেকেই শুধু রেফারেন্সকে খুব গুরুত্ব দিচ্ছেন, এটা অনুচিত। রেফারেন্সের ব্যাপারটা আসে সবার শেষে। এটা ইন্ডিভিজুয়ালি বলা যায় না যে কার রেফারেন্স গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যারটা পারেন তার রেফারেন্সই যোগাড় করুন।

 

আমি তো সেরকম গুরুত্বপূর্ণ কারও রেফারেন্স পেলাম না।

 

উত্তরঃ বাকী সবাই কি শেখ হাসিনার রেফারেন্স নিয়ে বসে আছে ? হতাশ হওয়ার কিছুই নেই।

 

ভাইয়া, আমি শেখ হাসিনার রেফারেন্স যোগাড় করে ফেলেছি !!

 

উত্তরঃ বাকীরা যে বারাক ওবামার রেফারেন্স যোগাড় করে ফেলেনি, সেটা আপনি কীভাবে জানলেন ?

 

মনে হয় বোঝাতে পারলাম রেফারেন্স ব্যাপারটা কীভাবে কাজ করে। অতএব, রেজাল্টটাকেই গুরুত্ব দিন বেশি। রেফারেন্সকে নয়।

 

নবম ও দশম পৃষ্ঠাঃ এই দুটো পেইজ আপনি নিজেই পূরণ করবেন। খেয়াল রাখবেন, ধূমপান ইত্যাদি বিষয় ভর্তির ক্ষেত্রে কতটুকু নেতিবাচক, সেটা বোঝার কোনও পদ্ধতি নেই। তবে ভারতে এগুলোকে নেতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখা হয়। স্কলারশিপটা যেহেতু আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার, সেহেতু এখানে মিথ্যা ইনফরমেশন দিলে ধরা হয়তো পড়বেন না, তবে সমস্যা যে হবেই না, এমন গ্যারান্টি কেউ দিতে পারে না। একটাই উপদেশ, নিজের কাছে সৎ থাকুন। 

 

একাদশ, দ্বাদশ, ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ পৃষ্ঠাঃ একজন সরকারী ডাক্তার, অর্থাৎ যিনি বিসিএস দিয়ে সরকারী হাসপাতালে কাজ করছেন, তাকে দিয়ে এই দুটো পাতা পূরণ করিয়ে নিতে হবে। তিনি এই মর্মে স্বাক্ষর করবেন যে, আপনার শরীরে ক্ষতিকর কোনও রোগ নেই। খেয়াল করেঃ যেখানে ডাক্তারের নাম আছে, সেখানে তার স্বাক্ষর, সিল এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিতে হবে। 

 

সাধারণ প্রশ্নঃ

 

চেকআপগুলো কি সবগুলো করাতে হবে ?

 

না। ডাক্তার যদি আপনার পরিচিত হন, তবে এমনিতেই লিখে দেয়ার কথা যে আপনি সুস্থ। চেকআপের কোনও কাগজও ফর্মের সাথে যোগ করতে হচ্ছে না। তবে আপনি যদি নিজেই আপনার শারীরিক সুস্থতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চান, কোনও ডাক্তারকে যদি রাজী করাতে না পারেন এবং টাকা যদি পর্যাপ্ত থাকে আপনার, সেক্ষেত্রে চেকআপ করিয়ে নিতে পারেন। 

 

পঞ্চদশ থেকে বিংশ পৃষ্ঠাঃ এখানে পাবেন ইন্ডিয়ান স্কলারশিপের ভেতরে আপনার জন্য কী কী ব্যবস্থা আছে, সেগুলর বিবরণ। এগুলো সময় করে পড়ে নিয়েন। এগুলো সবই স্কলারশিপ পাওয়ার পরের ব্যাপার। আপাতত স্কলারশিপটা নিয়েই মাথা ঘামান দরকার।  

 

এই হচ্ছে কাজ। এবার যে কাজগুলো বলবো, সেগুলোর নির্দেশনা ফর্মে দেয়া নেই, কিন্তু ভারতীয় হাই-কমিশনের লোকেরা এগুলো কোনও নোটিস ছাড়াই করতে বলবে। সুতরাং, সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে যাওয়াই ভালো। ধাপগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করুনঃ

 

১। পুরো আবেদন ফর্মটির ছয় সেট ফটোকপি করুন (নির্দেশনায় পাঁচ সেট লেখা আছে, আপনি এক কপি অতিরিক্ত করবেন)।

২। ডাক্তারকে দিয়ে তার জন্য বরাদ্দ চারটি পাতার ছয়টি সেট, অর্থাৎ চব্বিশ পাতা পূরণ করিয়ে নিন। (পরিশ্রমের মনে হচ্ছে, কিন্তু কাজটা সোজা। করেই দেখুন)।

৩। যেসব কাগজপত্র লাগবে, সেগুলোর বারো সেট ফটোকপি করে সত্যায়িত করে নিন।

৪। এরপর আবেদন ফর্মের দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় দেয়া ক্রমানুসারে ফটোকপিগুলো ছয়টি কপিতে দুই সেট-দুই সেট করে যোগ করে দিন।

৫। এবার ছবিগুলো যেখানে যেখানে দরকার, সেখানে সেখানে লাগিয়ে দিন। ফর্মের একদম ওপরের পৃষ্ঠায়, অর্থাৎ কাভার পৃষ্ঠায় একটা ছবি ডানে-বাঁয়ে স্ট্যাপলার করে লাগাতে হয়। 

৬। খুব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টঃ ফর্ম যখন ওরা বুঝে নেয়, তখন একটা ফোন নম্বর চায়। এমন কোনও ফোন বা মোবাইল নম্বর দেবেন, যেটা দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা খোলা থাকে। যে কোনও মুহুর্তে ফোন করে ডাকতে পারে আপনাকে সুসংবাদ দেয়ার জন্য।

 

 

সাধারণ প্রশ্নঃ

 

ফর্ম একটা ফিলাপ করে বাকী সেটগুলো ফটোকপি করে দিলে হবে না ?

না। ব্ল্যাংক ফর্ম ফটোকপি করবেন, তারপর সবগুলো হাতে লিখবেন।

 

এটুকু করতে পারলেই কাজ শেষ।

 

জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই আবেদন চাওয়ার কথা থাকলেও ২০১৩-২০১৪ সেশনে চেয়েছে বেশ দেরি করে, জানুয়ারির নয় তারিখে। আবেদন চাওয়ার পর আগে এক মাস সময় থাকতো আবেদন জমা দেয়ার জন্য, এবার সেটা কমিয়ে করা হয়েছে ১৪ দিন। ২০১৩-১৪ সেশনে অ্যাপ্লিকেন্টদের ফর্ম জমা দেয়ার লাস্ট ডেট ২৪ জানুয়ারি, ২০১৩।

 

গুলশান দুই নাম্বারে KFC‘র কাছে ইন্ডিয়ান অ্যাম্বেসিতে গিয়ে জমা দিয়ে আসুন আপনার ছয় সেট অ্যাপ্লিকেশন। জানুয়ারিতে জমা নেয়, এরপর প্রাথমিকভাবে নির্বাচিতদের ফোন করে একটা লিখিত ইংরেজি গ্রামার পরীক্ষা দেয়ার জন্য ডাকে। একেবারেই বেসিক লেভেলের ৫০ মার্কের একটা গ্রামার পরীক্ষা হয়। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, অনেকেই ফেল করে ! আপনি ইংরেজিতে একটু ভালো হলেই উৎরে যেতে পারবেন এই পরীক্ষা।

 

যাই হোক, এই পরীক্ষা উৎরে গেলে আর কিছু করার দরকার নেই। মে-জুন মাসের দিকে কোনও এক শুভদিনে আপনাকে ফোন করে জানাবে যে আপনার স্কলারশিপ হয়ে গেছে। সাথে একজন গার্জিয়ান, বাবা-মা অথবা কোনও আত্মীয় যিনি ইংরেজিতে মোটামুটি কথাবার্তা চালাতে পারেন, তাকে নিয়ে যাবেন ভারতীয় হাই-কমিশনে। ভারতীয় এডুকেশন অ্যাটাচে, নাম সন্তোষ কুমার মিশ্র কথা বলবেন আপনাদের সাথে। দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের চয়েজ দেবে আপনাকে, আপনি যেটাতে চাইবেন, সেটাতেই পড়তে পারবেন। আমার ক্ষেত্রে চয়েজ ছিলো বর্ধমান ইউনিভার্সিটি আর ব্যাঙালোর ইউনিভার্সিটি। আমি ব্যাঙালোর ইউনিভার্সিটি চয়েজ করেছিলাম। এখানে সামান্য কিছু কথাবার্তা বলতে পারেন ভদ্রলোক আপনার সাথেঃ

১। তুমি ভারতে পড়াশোনার জন্য মানসিকভাবে তৈরি তো ?

২। পড়াশোনা মাঝখানে ছেড়ে দেবে না তো ?

৩। খুব ভালো করে পড়ালেখা করতে হবে কিন্তু।

৪। কেমন লাগছে স্কলারশিপ পেয়ে ?

 

এরকম সাধারণ কিছু কথাবার্তা হয়। এরপর ভদ্রলোক আপনার পাসপোর্ট নেবেন এবং তারাই কীভাবে দ্রুত ভিসা পেতে হয়, সেটা বলে দেবেন। স্কলারশিপ পাওয়া ছাত্রদের ভিসা পাওয়া এক ঘন্টার ব্যাপার, বা তার চেয়েও কম। এরপর আপনাকে তিনটি কাগজ দেবে তারা, ভারতে গিয়ে এসব কাগজ সেই ইউনিভার্সিটির অফিসে দেখালেই আপনাকে ছাত্র হিসাবে সেই ইউনিভার্সিটি ভর্তি করে নেবে। আনুষঙ্গিক আরও যা যা ছোটখাটো ব্যাপার আছে, সেগুলো সময়ের সাথে সাথেই বুঝতে পেরে যাবেন। আপনার পরিস্থিতিই আপনাকে সেদিকে টেনে নিয়ে যাবে এবং প্রতিটি স্তরে একজন লোক আছেন যিনি পরের স্তরে কী করতে হবে সেই নির্দেশনা দিয়ে দেবেন। সুতরাং, কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

 

ভারতে বাংলাদেশি ছাত্রদের বিভিন্ন সংগঠন আছে। এদের সাথে যোগাযোগ করুন। খুব আন্তরিকতা নিয়ে সাহায্য করবে তারা। ফেসবুকে ভারতে পড়াশোনা করছে এমন বাংলাদেশি ছাত্র রয়েছে অনেকে, আমিও তাদের একজন। এদের সাথে অন্যান্য সমস্যার ব্যাপারে কথা বলুন। সকল ধরনের সাহায্য পাবেন। আমরা চাই, ভারতে আমাদের দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখুক।

 

একটা সাধারণ ভদ্রতাঃ ভারতীয় দেখে ভারতীয় হাই-কমিশনের লোকেদের সাথে বাংলাদেশি অনেকেই ভুলভাল হিন্দি বলার চেষ্টা করেন এবং দেখাতে চেষ্টা করেন যে “আমি আপনাদেরই লোক, আমিও হিন্দি ছবি দেখি এবং শাহরুখ খানকে আমিও চিনি”। অত্যন্ত বাজে প্র্যাকটিস এটা। যতটুকু পারেন ইংরেজিতে কথা বলুন, ওরা সেটাই চায়। এমনকি দেখবেন আপনি হিন্দিতে কথা বললেও ওরা ইংরেজিতে জবাব দিচ্ছে। এটাই সাধারণ ভদ্রতা। হিন্দি বলার চেষ্টা করে অপমানিত হওয়ার দরকার নেই। ভারতে যান আগে, গিয়ে কত হিন্দি বলবেন বলুন।

 

যাই হোক, স্কলারশিপ পাওয়ার পর দিন সাতেকের মতো সময় থাকে হাতে। আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দেখা করুন, জামা-কাপড় কিনে নিন। যেদিন ভর্তি হওয়ার তারিখ থাকবে, তার অন্তত তিন-চারদিন আগে বাংলাদেশ থেকে রওনা দিন। কলকাতা পর্যন্ত শ্যামলী, গ্রিন লাইন বাসগুলো যায়। কলকাতায় গিয়ে সেখান থেকে ট্রেন বা প্লেন ধরে যে শহরে আপনার ইউনিভার্সিটি, সেই শহরে চলে যান। 

 

শুরু হলো ভারতে পড়ালেখা। সেশন জট নেই, ছাত্র রাজনীতির কারণে পড়ালেখার ক্ষতি হয়না। সব মিলিয়ে ভারতে থাকাটাও উপভোগ করবেন বলেই মনে হয় ! আমি গত তিন বছর হলো আছি, এখনও কোনও সমস্যা হয়নি।

 

এই তো ! আর কী ! আরও কোনও সমস্যা হলে মন্তব্যের ঘরে রেখে যেতে পারেন বা ইনবক্সে জানাতে পারেন, আমি উত্তর দিয়ে দেবো। শেয়ার করে আপনার যেসব বন্ধু ভারতে পড়তে আগ্রহী বা এবার কোথাও চান্স পায়নি তাদের জানিয়ে দিন। আপনাদের উপকার হলেই আমার লেখাটা সার্থক !


ভালো থাকবেন সবাই 🙂 

 

আপডেটঃ একেবারেই হঠাৎ করে ইন্ডিয়ান অ্যাম্বেসি এই বছর, অর্থাৎ ২০১৩-২০১৪ সেশনে আবেদন ফর্মটা পালটে ফেলেছে, সেগুলো আপডেট করে দেয়া হয়েছে নোটে। এটা সাধারণত করতো না অ্যাম্বেসি, বিগত বছরগুলোতে ফর্ম একই ছিলো। এবার হঠাৎ করে যে কেনো পালটে ফেললো, বঝা গেলো না।

 

যাই হোক, নতুন ফর্মের ডাউনলোড লিংকও যোগ করা হয়েছে। আপডেটকৃত অংশ খুবই সামান্য, শুধু পৃষ্ঠাগুলো এদিক-ওদিক হয়েছে, আর হেলথ চেকাপের পাতাটা বদলে গেছে একেবারেই। সবাইকে এই বিষয়ে কড়া নজর রাখার জন্য বলা হলো। সাথে যোগ করা হলো কিছু সাধারণ প্রশ্নোত্তর, যেগুলো প্রায়ই ছাত্র-ছাত্রীরা ইনবক্স করে।

// লেখক : আমি শুভজিৎ ভৌমিক, “শুভ” এবং “দাদা” নামে অনেকের কাছে পরিচিত। জন্ম ১৯৯০ তে, সেই হিসাবে বাইশের একটু বেশি বয়স। উচ্চতা পাঁচ ফিট নয় ইঞ্চি, ওজন আশি কেজি, রক্তের গ্রুপ বি পজেটিভ।

পারফর্মিং আর্ট সম্পর্কে আগ্রহ অত্যন্ত বেশি। গান, মিউজিক, রিমিক্সিং, ছবি আঁকা, ছবি তোলা, মুভি বানানো ইত্যাদি অনেকগুলো কাজ একসাথে করার চেষ্টা করেছি জীবনে। সাথে চলছে অনলাইনে লেখালেখি।

ফেসবুকে আমি : http://www.facebook.com/bhowmik.da

//