দুই প্রবাসীর ঢাকা সফর!

তিনি বলেন, অর্থাৎ ঢাকা শহরে কোন কাজে বের হলে দিনে একটির বেশী কাজ সম্পাদন করা সম্ভব হয়নি। এহেন অবস্খার জন্যে দায়ী ট্রাফিক অব্যবস্খাপনা। মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে ট্রাফিক ব্যবস্খাপনার সাথে জড়িত প্রায় সকলেরই অভিজ্ঞতা রয়েছে উন্নত বিশ্বের ট্রাফিক সম্পর্কে। এতদসত্বেও কেন তারা রাজধানী ঢাকা শহরকে যানজট মুক্ত করতে যুগোপযোগী পদক্ষেপ নিচ্ছেন না তা বুঝতে পারি না। এভাবে কি বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করা সম্ভব হবে-এ প্রশ্ন জনাব শওকতের। প্রতিটি মানুষের প্রতি কর্মদিবসের অর্ধেকই যদি ব্যয় হয় গাড়িতে বা রাþতায়, তাহলে জীবন এগুবে কীভাবে? তিনি বলেন, টুয়েন্টি টুয়েন্টি ওয়ান ভিশনকে বাþতবায়িত করতে হলে সবার আগে ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্খাকে ঢেলে সাজাতে হবে। প্রয়োজনে সেক্রেটারিয়েটসহ গুরুত্বপূর্ণ অফিস সরিয়ে রাজধানীর আশপাশে নিতে হবে। দিনে এবং রাতে দুশিফটে বানিজ্যিক অফিস পরিচালনার ব্যবস্খা করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্র ফেডারেল প্রশাসনে অর্থনীতিবিদদের সমন্বয়ে গঠিত এসোসিয়েশনের সেক্রেটারী ড. ফাইজুল ইসলাম ২২ ডিসেম্বর থেকে ৯ জানুয়ারি পর্যìত বাংলাদেশে ছিলেন। ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের পুনর্মিলনী উৎসবে যোগদানের পাশাপাশি নিজ জন্মস্খান নোয়াখালী এবং শৈশব-কৈশোর-যৌবনের স্মৃতিবাহি চট্টগ্রাম পরিভ্রমণ করেন। তিনি এনার কাছে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনাকালে উল্লেখ করেন, ৬ বছর পর দেশে গিয়েছিলাম। আমিরাত এয়ালাইন্সের ফ্লাইট যখন ঢাকার উপর দিয়ে জিয়ায় অবতরণ করছিল সে সময় আরো অনেকের মত আমার হৃদয়টাও দুলে উেঠে আনন্দে। প্রিয় জন্মভূমিতে পদার্পণের মত আনন্দ আর কোথায়ও আছে কি?

ড. ফাইজুল বলেন, কিন্তু সে আনন্দের পরিধি ততটা বিতৃত ছিল না। প্লেন থেকে নেমে ইমিগ্রেশন ডেস্কের সামনে গিয়ে মনটা খারাপ হয়। অনেক দীর্ঘ লাইনে ছিলাম আমি। এরপর ইমিগ্রেশন অফিসার কর্তৃক ফটো উঠানো এবং যাত্রীর যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণের জন্যে ব্যয় হলো ২০ মিনিট। অফিসারকে দেখলাম এক আঙ্গুলে টাইপ করতে। কম্প্যুটারের সাথে গতি বাড়াতে হবে অফিসারের কাজে। তাহলে কম সময়ে যাত্রীদের কাজ সম্পাদন করা সম্ভব। ড. ইসলাম বলেন, এরপর গেলাম লাগেজ নিতে। সেখানে গিয়ে দেখি ভিন্ন দুটি চ্যানেলে লাগেজ আসছে। মাঝখানে হাজীদের লাগেজ রাখা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি যাত্রীকেই দৌড়ে এদিক-সেদিক করতে হচ্ছে। এর পরিবর্তে যদি একটি চ্যানেল দিয়ে লাগেজ বের হতো তাহলে এমনভাবে অস্খিরতায় ভোগতে হবে না কাউকেই।

ড. ইসলাম বলেন, এয়ারপোর্ট থেকে গাড়িতে উঠে শহরে যাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিল যে, কোন ড্রাইভারই নিয়ম-শৃঙ্খলা মানছেন না। কোনটি ওয়ান ওয়ে এবং কোনটি টু ওয়ে-তা বিবেচনায় না রেখে ড্রাইভারেরা গাড়ি চালাচ্ছেন নিজ ইচ্ছায়। ঢাকা থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে ফেরার ১০ দিন পর অর্থাৎ ২০ জানুয়ারি সংবাদ পেলাম যে, আমার চাচাতো ভাই নিহত হয়েছেন স্ত্রী ও কন্যাসহ। যাত্রাবাড়িতে বিপরীত দিক থেকে আগত একটি ট্রাক তাদের গাড়িকে ধাক্কা দিলে এহেন দুর্ঘটনা ঘটে। মিডিয়ায় প্রচারিত ও প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, ট্রাক ড্রাইভার সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে ড্রাইভ করছিলেন।

ড. ইসলাম বলেছেন, ওয়েস্টিন হোটেল, শেরাটন হোটেল এবং রেডিসন হোটেলে বিভিন্ন পার্টিতে অংশ নেয়ার সময় মনে হয়েছে যে বাংলাদেশের অনেক উন্নতি ঘটেছে। মানুষের অভাব নেই। কিন্তু আমি যখন মসজিদ থেকে বের হয়েছি কিংবা গাড়ি থামিয়ে ট্রাফিক লাইটের অপেক্ষায় থেকেছি, তখন বুঝেছি যে বাংলাদেশে এখনও ভিক্ষুকের সংখ্যা অনেক বেশী। ধনী এবং গরিবের মধ্যেকার ব্যবধান অনেক বেড়েছে। ঢাকায় একটি বিবাহ অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখানে দেখেছি পুরো বাড়ি এবং বাড়িতে প্রবেশের রাþতাকে আলোকিত করা হয়েছে। অথচ ঐ রাþতার জরাজীর্ণ অবস্খা আমাকে পীড়া দিয়েছে। রাþতাটির আশপাশের মানুষগুলো বিত্তবান হলেও তাদের চলার পথকে সুন্দর করা হচ্ছে না কেন এটি আমার বিবেচনায় আসছে না। শুধু তাই নয়, ঐসব বাড়ির পাশ দিয়ে প্রবাহিত ময়লা নিষ্কাষনের ড্রেনগুলোও আবর্জনায় পরিপূর্ণ এবং দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল।

ড. ইসলাম বিব্রত হয়েছেন উত্তরা এবং গুলশানে অভিজাত শ্রেণীর ক্লাবে। সেখানে ধুমপান করা হচ্ছে অবলিলায় সকলের মাঝে। অথচ ঐসব ক্লাবে যারা আসছেন তারা ইউরোপ-আমেরিকা ভ্রমণ করছেন এবং এসব দেশে সিগারেট পানের জন্যে পৃথক এলাকা থাকে সেটিও তারা জানেন। এমনকি দুবাই এয়ারপোর্টেও প্রকাশ্যে সিগারেট পানের সুযোগ নেই-সেটি ঐ ক্লাবের কারো অজানা নয়। তাহলে তারা তাদের ক্লাবকে সিগারেট পানের জন্যে উম্মুক্ত রেখেছেন কেন?

জন্মভূমি নোয়াখালীতে গিয়েছিলেন ড. ইসলাম। ষাটের দশকে তার বাবা, চাচাদের প্রতিষ্ঠিত স্কুল, মাদ্রাসা এবং মসজিদ পরিদর্শন করেন। এখন স্কুল এবং মাদ্রাসা পরিচালিত হচ্ছে সরকারী ব্যবস্খাপনায়। তিনি বলেন, আমি মুগ্ধ হয়েছি যে, আমার বাবার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় এখন ছেলে-মেয়েরা একত্রে পড়তে পারে। স্কুল এবং মাদ্রাসা সরকারী ব্যবস্খাপনায় গেলেও প্রাতিষ্ঠানিক কোন উন্নতি চোখে পড়েনি। ভবনগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এ বিষয়টি আমাকে ব্যথিত করেছে। শিক্ষকেরা মাস শেষে বেতন গুণছেন কিন্তু লেখাপড়ার পরিবেশ নেই ভবনের। শুধু তাই নয়, মাদ্রাসায় ছাত্রীদের জন্যে কোন বাথরুম নেই।

ড. ইসলাম উল্লেখ করেছেন, আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি মাদ্রাসায় বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি দেখে। মাদ্রাসা পিন্সিপালের কক্ষে টানানো হয়েছে ছবিগুলো। ধর্মীয় কোন শিক্ষালয়ে অথবা নামাজ পড়ার কোন স্খানে কারো ছবি টানানোর অনুমতি ইসলাম ধর্মে রয়েছে কিনা আমার জানা নেই। আমি এটাও জানি না যে, মাদ্রাসায় বঙ্গবন্ধুর ছবি টাঙ্গালে তার আতা অধিক শাìিত পাবে কিনা। আমার মনে হচ্ছে, রাজনীতিকে ধর্মের মধ্যে ঠেলে দেয়া উচিত নয়। দয়া করে মাদ্রাসা থেকে ছবি প্রত্যাহার করম্নন। ড. ইসলামের আশংকা, এ ধারা অব্যাহত থাকলে শীঘ্রই হয়তো সরকারী অনুদানে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত মসজিদেও বঙ্গবন্ধুর ছবি দেখতে হবে। রাজধানী ঢাকার ট্রাফিক সমস্যা প্রসঙ্গে ড. ইসলামও একমত পোষণ করেছেন, বাসা থেকে বের হওয়ার পরই দিনের অধিকাংশ সময় ব্যয় হয় গাড়িতে যানজটের কারণে।

Source : Khabor.com