আগৈলঝাড়ার বন্যা মোকাবেলায় প্রশাসনের নিকট আট দফা সুপারিশ আজও আলোর মুখ দেখেনি

আলোর মুখ দেখেনি।
ভুক্তভোগি এলাকাবাসি ও জনপ্রতিনিধিদের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, আগৈলঝাড়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ১৫৫.৪ বর্গ কিলোমিটার নিন্মাঞ্চলে একটু বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এছাড়াও উজান থেকে নেমে আসা বানের পানি প্রবেশ করে এসব এলাকায় প্রায়ই কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি হয়। গত একযুগ ধরে ওইসব এলাকার প্রায় ২৬ হাজার কৃষক পরিবার বন্যা এবং বন্যা পূর্ববর্তী সময় আতংকের মাঝে দিনাতিপাত করে আসছে। বর্ষা মৌসুমে একটু বৃষ্টিতেই কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি হওয়ায় প্রতিবছরই উঠতি ফসল, মৎস্য সম্পদ, পানের বরজসহ বিভিন্ন প্রকার সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। ফলে সামান্যর চেয়ে একটু বেশি পানি হলেই এ উপজেলায় বন্যার আকার ধারন করে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ বেষ্ঠিত এলাকাও কৃত্রিম বন্যার কবল থেকে রেহাই পায়না। বাঁধের বাহিরে পানির চাপ বেশি হলেই ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিরা রাতের আঁধারে বাঁধ কেটে দেয়।  ফলে হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল নিমেশেই তলিয়ে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার জন্য হাজার হাজার কৃষক পরিবারসহ সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা উপজেলার বিভিন্নস্থান ঘুরে আগৈলঝাড়া উপজেলাকে বন্যার কবল থেকে বাঁচাতে আটদফা সুপারিশ এনে সংশ্লি¬ষ্ট মন্ত্রনালয়সহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলীর নিকট পেশ করেন।
সুপারিশগুলো ছিলো বাকাল থেকে রাজিহার-মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে ১নং ব্রিজ সংলগ্ন খালের মুখ উন্মুক্ত করে নৌ-চলাচলের সুবিধাসহ ব্রিজ নির্মাণ। বাকাল-রাজিহার-মাগুরা বেড়িবাঁধের রাজিহার ব্রিজ সংলগ্ন রাজিহার খালের মুখ উন্মুক্ত করে নৌ-চলাচলের সুবিধাসহ একটি ব্রিজ নির্মাণ। বাশাইল-মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের মাঝামাঝি স্থানে একটি বড় কালভার্ট নির্মাণ করা। পয়সারহাট-ত্রিমূখী বাজারের সুবিধাজনক স্থানে ৮ থেকে ১০ দরজা বিশিষ্ট স্লইজগেট নির্মাণ। পয়সারহাট-কালুরপাড়-রতœপুর বেড়িবাঁধে রামেরবাজার খালের মুখে স্লুইজগেট অথবা ব্রিজ নির্মাণ। পয়সারহাট-কালুরপাড়-রতপুর বেড়িবাঁধে কাঠিরা খালের মুখে কালভার্ট নির্মাণ করা। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক গোপালগঞ্জের রামশীল স্লইজগেট, ছয়গ্রাম (মিশ্রীপাড়া) স্লুইজগেটসহ ইনলেট-আউটলেটগুলো জরুরী ভিত্তিতে সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করা। আগৈলঝাড়া উপজেলার বিভিন্ন খাল বিশেষত যে সকল খালের মুখে বাঁধ রয়েছে এবং ব্রিজ নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে সে খালগুলো পুণঃখনন করা।
উপরোক্ত আটদফা সুপারিশ ২০০৮ সালের ১৩ আগষ্ট জেলা পরিষদ ডাকবাংলো সম্মেলন কক্ষে তৎকালীন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক, গৃহায়ন গণপুর্ত, ভূমি এবং তথ্য মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা ব্যারিষ্টার মাইনুল হোসেনের নিকট জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রদান করা হয়েছিল। ওইসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী বরাবরেও অনুরুপ সুপারিশ প্রেরণ করেন। সাবেক জেলা প্রশাসক মঞ্জুর-ই-এলাহী ও তৎকালীন জেলা যৌথবাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ আলী উপজেলার বিভিন্নস্থান পরিদর্শন শেষে বেড়িবাঁধের উপর ব্রিজ ও স্লুইজগেট নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যার প্রেক্ষিতে উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশল বিভাগ জেলা প্রকৌশল বিভাগকে বিভিন্নস্থানের কালভার্ট ও স্লুইজগেট নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করাসহ বিভিন্ন প্রজেক্ট প্রপোজালের নকশা প্রেরণ করেছিলেন।
এলাকাবাসির দেয়া তথ্যে আরো জানা গেছে, উত্তরে মাদারীপুর ও ফরিদপুর থেকে নেমে আসা উজানের পানি দ্রুত অপসারণ না হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও শুস্ক মৌসুমে চাষাবাদে সেচের জন্য পানির অভাব দেখা দিচ্ছে।
ভুক্তভোগী এলাকাবাসি উল্লেখিত আট দফা সুপারিশ সমূহ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।