আদম ব্যাপারির খপ্পরে পড়ে সর্বস্ত্র খুঁইয়েছেন ৬ জন বেকার যুবক

ধারদেনা ও জমাজামি বিক্রি করে আদম ব্যাপারির মাধ্যমে ব্র“নাই শহরে গিয়ে প্রতারিক হয়ে দেশে ফিরে এখন পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ৫ জন বেকার-যুবক। অপরদিকে একই আদম ব্যাপারির খপ্পরে পরে এখন অর্থাভাবে দেশে ফেরত আসতে পারছেন না সোহরাব হাওলাদার নামের আরেক যুবক। টাকা চাইতে গেলে আদম ব্যাপারি ও তার লোকজনে এখন নানাধরনের ভয়ভীতিসহ মামলায় জড়ানোর হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বিদেশ ফেরত ৫ যুবক গৌরনদী প্রেসক্লাবে হাজির হয়ে অভিযোগ করেন, উজিরপুর উপজেলার কাংশি গ্রামের মৃত আমজেদ আলী সরদারের পুত্র জামাল সরদার দীর্ঘদিন থেকে ব্র“নাই শহরে চাকুরী করছেন। সে সুবাধে জামাল তার স্ত্রী খাদিজা বেগম, শশুড় মুনসুর আলী খান ও জামালের পার্টনার দত্তেশ্বর গ্রামের বেল্লাল হোসেনের মাধ্যমে ভালো বেতনে বিদেশে চাকুরির দেয়ার জন্য লোক নেয়ার কথা বলেন। সেমতে ব্র“নাইর নূর সাইদা কোম্পানীতে রংয়ের কাজের জন্য দুই বছরের মেয়াদে প্রতিমাসে ৩০ হাজার টাকা বেতনে তাদের (জামাল, মুনসুর, খাদিজা ও বেল্লালের) মনভোলানো নানা প্রলোভনে পরেন ৬জন বেকার যুবক।

এক পর্যায়ে জামালের শশ্বর, স্ত্রী ও পার্টনার দত্তেশ্বর গ্রামের মৃত কাসেম সরদারের বেকার পুত্র আলাউদ্দিন সরদারের (২২) কাছ থেকে ৩ লক্ষ, পূর্ব বরাকোঠা গ্রামের গোপাল চন্দ্র হালদারের পুত্র দিপু হালদারের (২৩) কাছ থেকে ৩ লক্ষ ২০ হাজার, বিমল বিশ্বাসের পুত্র রাজিব বিশ্বাসের কাছ থেকে ৩ লক্ষ ১৫ হাজার, মধ্য বরাকোঠা গ্রামের মৃত ওহাব আলী হাওলাদারের পুত্র সোহরাব হাওলাদারের কাছ থেকে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার, মৃদ মোকলেছ আকনের পুত্র বাবুল আকনের কাছ থেকে ৩ লক্ষ ও বানারীপাড়ার বাশার গ্রামের আলী আহম্মেদের পুত্র ইব্রাহিমের কাছ থেকে ৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকা নেয়া হয়। অভিযোগে আরো জানা গেছে, টাকা নেয়ার পর তাদের গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে একেকজনকে একেক সময় ব্র“নাইতে পাঠনো হয়।

প্রতারক আদম ব্যাপারীর খপ্পরে পরে প্রতারিত দিপু হালদার জানান, তিনি গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর ব্র“নাইতে গিয়ে দেখতে পান নূর সাইদা কোম্পানীর কোন কাজ নেই। তখন জামাল ওই দেশেই অবস্থান করছিলো। গোপনে প্রতারক জামাল তাদের একেকজনকে একেক জায়গায় ২/১ দিন করে কাজ দিয়ে প্রতারনার মাধ্যমে তাদের পাসর্পোট হাতিয়ে নিয়ে একমাস পরেই সে (জামাল) আত্মগোপন করে। পাসর্পোট না থাকায় তারা আরো অসহায় হয়ে পরেন। একপর্যায়ে ব্র“নাই শহরের পুলিশের ভয়ে পালিয়ে পালিয়ে তারা দীর্ঘ ৯ মাস ব্র“নাইতে কাজ করেন। এতে প্রতিমাসে তারা ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় করেন। তিনি আরো বলেন, একপর্যায়ে আমরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানতে পারি জামাল দেশে এসেছেন। উপায়অন্তুর না পেয়ে আমরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জামাল তার স্ত্রী খাদিজা ও শশুড় মুনসুর আলী খানের সাথে যোগাযোগ করি। ওই সময় তারা আমাদের আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, যেভাবেই হোক তোমরা দেশে ফিরে আসো। তোমাদের ক্ষতিপূরন দিয়ে দেয়া হবে। তাদের দেয়া আশ্বাসের ভিত্তিতে দীর্ঘ নয়মাস পর আমরা ৫ জনেই ওই দেশের পুলিশের হাতে ধরা পরি। একপর্যায়ে আমাদের টাকা দিয়েই ওই দেশের পুলিশ প্রশাসন একেক জনকে একেক সময় দেশে পাঠিয়ে দেয়। এখনো অর্থ যোগাড় করতে না পেরে ওই দেশে পালিয়ে পালিয়ে কাজ করছেন সোহরাব হাওলাদার। সর্বশেষ চলতি মাসের ২ অক্টোবর দেশে ফিরে আসেন আলাউদ্দিন সরদার।   

প্রতারিক আলাউদ্দিন সরদার, রাজিব বিশ্বাস, ইব্রাহিম ও বাবুল আকন অভিযোগ করে বলেন, দেশে ফিরে জামাল সরদার ও তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করলে তারা প্রথমে বিভিন্ন রকম তালবাহানা শুরু করে। বর্তমানে তারা আমাদের নানাধরনের ভয়ভীতিসহ মিথ্যে মামলায় জড়ানোর হুমকি প্রদর্শন করছেন। এতে অসহায় পরিবারগুলো আরো অসহায় হয়ে পরেছেন। এছাড়াও আদম ব্যাপারি জামাল সরদারের বিরুদ্ধে প্রলোভনের মাধ্যমে বিদেশে লোক নেয়ার নামে প্রতারনার আরো অভিযোগ রয়েছে।

আদমব্যাপারি জামাল সরদার ও তার সহযোগীদের প্রতারনার স্বীকার অসহায় পরিবারগুলো তাদের প্রদত্ত টাকা ফেরত পেতে ব্র্যাকের নিরাপদ বিদেশ গমন সহায়তা প্রকল্পের কর্মকর্তা, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ ব্যাপারে জামাল সরদারের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।