ডুবন্ত নৌযান উত্তোলনের এক সহজ পদ্ধতির আবিস্কার

তার নাম মোঃ তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী। বরিশাল নগরীর ২৬নং ওয়ার্ডের পূর্ব হরিনাফুলিয়া এলাকার বাসিন্দা সে। বাংলাদেশ ইউনিভারসিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজির (বুয়েট) এক সেমিনারে তার উদ্ভাবিত পদ্ধতি তুলে ধরেন। সেমিনারে উপস্থিত থাকা সকলেই উদ্ভাবিত পদ্ধতির বাস্তবায়ন সম্ভব এবং ডুবন্ত নৌযান উত্তোলনে এই পদ্ধতি একটি যুগান্তকারী আবিস্কার বলে অভিহিত করেছেন। এই পদ্ধতির মডেল বুয়েটের ওয়াটার রিসোর্স ডিপার্টমেন্টে প্রাথমিক পরীক্ষা সফল এবং কার্যক্রর বলে প্রমানিত হয়েছে। রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীতে উদ্ভাবিত পদ্ধতির আরো একবার পরীক্ষা করার জন্য বুয়েট কর্তৃপক্ষ একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বলে জানান মোঃ তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী। প্রকল্পে মোঃ তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর পদ এবং পারিবারিক সমস্যার কারনে পরীক্ষা আলোর মুখ দেখছে না। এ ব্যাপারে বুয়েটের নাভাল আর্কিটেকচার এন্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপারমেন্টের ডিন ড. সাদিকুল বারী’র এ প্রতিনিধিকে জানান, বুয়েটের গবেষনাগারে প্রাথমিক পরীক্ষায় সফল হয়েছে। এই পদ্ধতি নিয়ে বুয়েটের একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও চুড়ান্ত হয়নি। মোঃ তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী উদ্ভাবিত পদ্ধতির পরীক্ষা বুড়িগঙ্গা নদীতে করা হবে বলে জানান ডিন ড. সাদিকুল বারী। (ডিন ড. সাদিকুল বারী’র মোবাইল ফোন নং ০১৭১৫-২৪৫৫৪৯)। মোঃ তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী তার উদ্ভাবিত পদ্ধতি তিনটি ওজন শ্রেনীতে ভাগ করেছেন। ওজন শ্রেনী গুলো হলো- সাড়ে ১১শত টন, ৭ হাজার ৮শত ৫০ টন ও ৭৮ হাজার ৫শত টন ওজনের নৌযান।

Tofazzel Hossain Chowdhuryউদ্ভাবিত পদ্ধতিতে সাড়ে ১১শত টন ওজনের ডুবন্ত নৌযান উত্তোলনের জন্য উপকরন তৈরিতে ব্যয় হবে ৭৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা, ৭ হাজার ৮শত ৫০ টনের নৌযানের জন্য ২ কোটি ৫০ লাখ এবং ৭৮ হাজার ৫শত টন ওজনের নৌযানের জন্য ৭৩ কোটি টাকা ব্যয় হবে। বাংলাদেশে প্রাপ্য কাচামাল দিয়ে তৈরি করা যাবে তার উদ্ভাবিত পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে সপ্তাহখানেক এর মধ্যে ডুবন্ত নৌযানকে উঠানো যাবে বলে জানান মোঃ তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী। তিনি তার উদ্ভাবিত পদ্ধতি বাস্তবে রুপদান করার জন্য ব্যাকুলতা প্রকাশ করেছেন। কারন হিসেবে তিনি জানান, বৃদ্ধ হয়ে পড়েছে। যে কোন সময়ে মারা গেলে তার উদ্ভাবিত পদ্ধতি অজানাই থেকে যাবে বলে শংকা প্রকাশ করেন। আর্ন্তজাতিক যে কোন সেমিনারে তার উদ্ভাবিত পদ্ধতি প্রকাশ করতে রাজি আছেন। গবেষনা লদ্ধ পদ্ধতি যে কোন কোম্পানীকে দিতে আগ্রহী  মোঃ তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী। এ জন্য তাকে রয়েলটি দিলেই চলবে বলে জানান তিনি। তার উদ্ভাবিত তৈরিতে ব্যবহৃত হবে- সিলিন্ডার (যা এমনভাবে তৈরি করা হবে যাতে পানি প্রবেশ এবং বের করা যাবে ও বায়ু সংরক্ষন হবে, এই সিলিন্ডার ষ্টীলের পাত দিয়ে তৈরি করা হবে। আরো প্রয়োজন হবে কম্প্রেসার মেশিন এবং ডুবন্ত নৌযান পর্যন্ত নেয়া যাবে এই পরিমান পাইপ। এই পাইপ দিয়ে কম্প্রেসারের মাধ্যমে বায়ু প্রবেশের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়াও লোহার এঙ্গেল ও প্রশিক্ষিত ডুবুরির। এই পদ্ধতি ব্যবহার সম্পর্কে তোফাজ্জল চৌধুরী জানান, ডুবন্ত নৌযানের দুপাশে সিলিন্ডার শক্ত করে বেদে দেয়া হবে। এরপর সিলিন্ডারে বায়ু ভরে পানি বের করা হবে। এতে সিলিন্ডার গুলো ভেসে উঠবে সাথে সাথে ডুবন্ত নৌযান উঠে আসবে। এতে নৌযানটি সম্পূর্ন ভেসে উঠবে না। সম্পূর্ন ভাসানোর জন্য চারটি এ্যাঙ্গেল দিয়ে চৌকাকার ফ্রেম তৈরী করা হবে। তার সাথে সিলিন্ডার বাধা থাকবে। চৌকাকার ফেম নৌযানের তলে নিয়ে বসাতে হবে। এরপর সিলিন্ডার থেকে পানি বের করে ফেলতে হবে। এতে নৌযানটি পানির উপরিভাগে ভেসে উঠবে। চৌকাকার ফ্রেমটি ভাসমান ডক ইয়ার্ডের কাজ করবে। এছাড়াও আরো অনেক পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে যা কৌশলগত কারনে প্রকাশ করতে রাজি হননি তিনি।

ডুবন্ড নৌযান উত্তোলণের পদ্ধতি আবিস্কারের কারন হিসেবে তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী জানান, ১৯৯১ সালে ঢাকা-বরিশাল রুটের এমভি সামাদ নামে একটি লঞ্চ ডুবে যায়। যার ওজন ছিল ১৭০ টন। কিন্তু বাংলাদেশে তা উত্তোলণের কোন ব্যবস্থা না থাকায় সেটি তোলা সম্ভব হয়নি। তখন থেকে ডুবন্ড নৌযান কিভাবে তোলা যায় তার চিন্তা শুরু করেন। Jerking Force   হিসেবে Capacity কমে যায়। সেই হিসেব করে আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যাওয়া টাইটানিক জাহাজের ডাটা সংগ্রহ করে বুয়েটের ওয়াটার রিসোর্স ডিপামেন্টের প্রফেসর ড. মোঃ খোরশেদ এর সাথে স্বাক্ষাৎ করেন। তিনি পরিকল্পনা মোতাবেক একটি মডেল তৈরীর নির্দেশ দেন। পরে তাকে নাভাল আর্কিটেকচার ডিপারমেন্টের প্রফেসর ড. সাদিকুল বারীর কাছে পাঠান। তিনি যাচাই করে মডেল তৈরী করতে  বলেন। অর্থ সংকটের কারণে তখন মডেল তৈরী করতে পারেননি। পরে এ বিষয়ে আরো জানার জন্য আমেরিকার মিশৌরীও ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটির প্রফেসর এসপি লেইলি’র সাথে যোগাযোগ করেন। কিন্তু দুভাগ্য ক্রমে ব্যর্থ হন। পরে তিনি বিভিন্ন ডক ইয়ার্ডে ঘুরে গুরে একটি মডেল তৈরী করে বুয়েটে জমা দেন। ওই পরীক্ষা সফল হয়েছে বলে জানান তিনি। এরপর তার আবিস্কৃত পদ্ধতি সম্পর্কে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারী বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিল্ডিয়ের ৬ তলায় পোস্ট গ্রাজুয়েট লেকচার কক্ষে সেমিনারে তুলে ধরেন। সেমিনারের আয়োজন করে বুয়েটের ওয়াটার রিসোর্স ডিপার্টমেন্ট। কর্তৃপক্ষ সেমিনার শেষে পদ্ধতি বাস্তবায়ন করার জন্য প্রকল্প নেয়ার কথা জানায়। বুড়িগঙ্গা নদীতে পরীক্ষা করার জন্য একটি মডেল তৈরীর ব্যয় কত হবে সে হিসেব জমা দিতে বলে ড. সিদ্দিকুর বারী। সম্ভাব্য ২ লাখ টাকার বাজেট জমা দিয়েছেন বলে জানান তোফাজ্জল চৌধুরী। প্রকল্পে তাকে কোন পদ দেয়া হবে এ নিয়ে একটু সমস্যা হয়েছে।

এছাড়া পারিবারিক সমস্যার কারণে বুয়েটে যেতে পারেননি। এ কারণে বাস্তবায়িত হচ্ছে না উদ্ভাবিত পদ্ধতির পরীক্ষা। তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী জানান, তার উদ্ভাবিত পদ্ধতি সরকারী কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন করেছেন। যার নং-১১৭২৩।