শেষ মুহুর্তের প্রচারণায় টাকা উড়ছে কালকিনিতে!

পারবো না এখন সত্যি কইরা কন আমাকে ভোট দিবেন কি-না। আপনার ঘরে কইটি ভোট আছে, এইডা রাখেন (হাতের মধ্যে ৫শ’ টাকার নোট দিয়ে) আর আল্লাহর দিক চাইয়া কথা দেন, আমাকে ভোট দিবেনই, বেঈমানী করবেন না, তাইলে আল্লাহ ক্ষমা করবে না’ এমন শপদ পড়িয়ে শুক্রবার রাতে মিনাজদী এলাকায় এক মেয়র প্রার্থী দু’জন সমর্থক নিয়ে একটি বাড়িতে শেষ বারের মত ভোট প্রার্থনা করে আবার পাশের ঘরে ঢুকলেন। একই ভাবে ভোট চাইলেন প্রত্যেকটি ঘরে। ঐ ঘরে ৫টি ভোটের জন্য দিয়ে গেছেন ২হাজার ৫শ’ টাকা। টাকা বিষয় নয় প্রার্থীদের প্রয়োজন ভোট। যে ঘরে বেশী ভোট আছে সেই ঘরকে টার্গেট করে প্রার্থীরা শপদ পড়িয়ে ভোট কিনছেন। শেষ মুহুর্তের প্রচারণায় মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীরা টাকা উড়াচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। অনেক বাড়ির অভিবাবক টাকা পেয়েছেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বীকার করেছেন। সোমবার ভোট গ্রহনের দিন হিসেবে এখন নির্বাচনী প্রচারণা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকলেও প্রার্থীরা বসে নেই। শেষবারের মত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, উঠতি বয়সের ভোটাররা মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর বা সংরক্ষিত মহিলা আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থক হয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এদেরকে আর টাকা দেয়া লাগে না শুধুমাত্র খরচ বাবদ দিলেই হয়। আর যারা প্রচারণা চালাচ্ছেন না তাদের ভোট টাকা দিয়ে কিনলেও তারা শপদে রাজী হন না। এদের প্রতি প্রার্থীদের ভরসাও কম। শ্রমিক ও কৃষকসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত, মধ্য ও নিম্নবিত্ত পরিবার, বেকার যুবক ও সুবিধাভোগী এক শ্রেণীর নেতা-কর্মীদেরকে টাকা দিয়ে শপদ পড়িয়ে প্রার্থীরা ভোট কিনছেন। কেউ বা আবার টাকা নিলেও শপদ পড়তে রাজী হচ্ছেন না। কোনো ভোটার ভোটের বিনিময়ে টাকা নিতে রাজী না হলে ভোটের দিন ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার ভাড়া বাবদ টাকা দিচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘ভোটের বাকী দু দিন। অনেক ভোটার এখনো স্থীর করতে পারেন নি কাকে ভোট দিবেন। ঐ সমস্ত ভোটারদের চিহ্নিত করে কোনো কিছুর বিনিময়ে শেষ বারের মত ভোট আমার প্রতিকের জন্য চেয়েছি। এটা সবাই চায় তাহলে তো আর আমার একার দোস না’।

পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের এক সাধারণ কাউন্সিলর পদপ্রার্থী বলেন, ‘সত্যি কথ্যা বলতে আমার বুক কাপেনা। নির্বাচন গেলে আর প্রার্থীদের খবর থাকেনা। সরকারী সাহায্য-সহযোগীতা নিলেও ওদের (নির্বাচিতদের) টাকা দিতে হয়। তাইলে কি ভোটের সময় এইসব মানুষ ছাইড়া দিবে। তাই যে যেমনে থেকে পারে টাকা পকেটে নিয়ে রাখে। ঐ সমস্ত নির্বাচিত প্রার্থীদের আচারণের কারনে এখন প্রার্থী হিসেবে আমারও টাকা দিতে হচ্ছে। এছাড়া তো আর কোনো উপায় নেই’।

শুক্রবার রাতে পৌর এলাকার কয়েকটি গ্রাম ঘরে ভোটাদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, মেয়র প্রার্থীরা ভোট প্রতি কমপক্ষে ৫শ’ টাকা (শপদ পড়ালে যতদুর সম্ভব) সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীরা ২শ’ থেকে ৫শ’ টাকা এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীরা ১শ’ থেকে ২শ’ টাকা ভোটার দিচ্ছেন। টাকা দিয়ে ভোট কেনা ঠেকাতে নির্বাচন কমিশন বা উপজেলা প্রশাসনের চোখে পরার মত কোনো পদক্ষেপ না থাকায় এমন ঘটনা ঘটছে। ভোট গ্রহনের আগের দিন রাত্রে বিশেষ কোনো বাহিনী পৌর এলাকায় টহলরত থাকার দাবী জানিয়েছে সচেতন মহলের দাবী।