কাঁদলেন মাশরাফি

আর ধরে রাখতে পারলেন না। কেঁদেই দিলেন। কান্নাভেজা কণ্ঠেই বললেন, “আজ আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের দিন”

এমন দিন কোন ক্রিকেটারই দেখতে চান না। বিশ্বকাপে খেলা যে কোন ক্রিকেটারের জন্যই স্বপ্নের মতো। সেই স্বপ্ন এর আগেও সফল হয়েছে বাংলাদেশ পেসার মাশরাফির। কিন্তু গতকাল দুপুরে যখন নির্বাচক কমিটির প্রধান রফিকুল আলম ১৫ সদস্যের বাংলাদেশ দল ঘোষনা করলেন তখনই নিশ্চিত হওয়া গেল এবার আর সেই স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না “নড়াইল এক্সপ্রেসের”। বিশ্বকাপ খেলা হচ্ছে না মাশরাফির। আর বোঝার অপেক্ষা রইল না। বিশ্বকাপ দলে থাকছেন অধিনায়ক শাকিব আল হাসান, ওপেনার তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, জুনায়েদ সিদ্দিকী, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, আবদুর রাজ্জাক, রুবেল হোসেন ও শফিউল ইসলাম। তা আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। বাকিদের নিয়েই ছিল দ্বিধা। শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত দলে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফীস, মোহাম্মদ আশরাফুল, নাঈম ইসলাম, সোহরাওয়ার্দী শুভ ও পেসার নাজমুল হোসেনও যুক্ত হয়ে গেলেন। কিন্তু সেই দলে নেই দেশবাসীর চাহিদার একটি নাম মাশরাফি বিন মর্তুজা। তাকে না নেয়ার পেছনে কারন ব্যাখ্যা দিলেন নির্বাচক কমিটির প্রধান রফিকুল আলম, ফেব্র“য়ারির প্রথম সপ্তাহেও মাশরাফি পুরো রানআপ নিয়ে বল করতে পারবে না। আর তাই তাকে বিবেচনায় রাখা হয়নি। এর সঙ্গে কিছুটা কিন্তুও যোগ করে দিলেন রফিকুল, তবে সুযোগ আছে। যদি ফিট হতে পারে। তার মানে মাশরাফি বিশ্বকাপ দলে থাকতে পারেন ? নির্বাচক কমিটি প্রধানের কথায় এমনই মনে হচ্ছে।

দল ঘোষণা করে এক মুহূর্তও সংবাদ মাধ্যমের সামনে থাকতে চাননি বিশ্বকাপ দল ঘোষনার সংবাদ সম্মেলনে আসা বিসিবি প্রেসিডেন্ট আহম মোস্তফা কামাল, ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন সিরাজ, রফিকুল নিজে এবং তার কমিটির সদস্য জাহিদ রাজ্জাক মাসুম। অনেক দেনদরবার করেই যেন তাদের দল নিয়ে বিশ্লেষণ দিতে বাধ্য করা হলো। এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু হয়েছে। আর যখন ব্যাখ্যা দিলেন তখন যেন এলোমেলোই হয়ে গেলেন নির্বাচক কমিটির প্রধান। অলক কাপালীকে দলে কেন রাখা হয়নি? রফিকুল বললেন, গত কয়েক বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরেই ছিল এই ক্রিকেটার, তাই। তা ছাড়া ঘরোয়া লীগে সে রকম নৈপুণ্যও নেই। তাহলে শুভর কী সে রকম নৈপুণ্য আছে? রফিকুল সামনে তুলে আনলেন তার আন্তর্জাতিক খেলাকে, শুভ গত কয়েকটি সিরিজ খেলেছে এবং ভাল খেলেছে। একের পর এক প্রশ্ন ছুড়ে গেছে। আর উত্তর দিয়ে গেছেন রফিকুল আলম। তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা বিকেল পর্যন্ত ছিল। অথচ দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত অনুশীলন শেষে মাশরাফি যখন তার বাদ পড়া নিয়ে কথা বলতে শুরু করলেন তখন সব আলোচনা-সমালোচনা উধাও হয়ে কোথায় যেন উড়ে গেল। আর যখন কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন, তখন সবার বাক যেন রুদ্ধ হয়ে পড়ল। আবেগঘন মুহুর্তের পরিবেশই তৈরি হলো।

মাশরাফি কথা বলার শুরুতে অনেক আত্মবিশ্বাসীই ছিলেন। যখন একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে সরাসরি তার বাদ পড়ার বিষয়ে মন্তব্য দিলেন, তখন কিন্তু ধীরে ধীরে তার কথার সুর ঝিমিয়ে আসতে শুরু করল। এক সময় কেঁদেই ফেললেন মাশরাফি। যখন জিজ্ঞেস করা হলো জীবনের সবচেয়ে কষ্টের দিন কি না ? মাশরাফি এর উত্তরে বললেন, হ্যাঁ, আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের দিন। বলতে বলতেই কান্না ঝরল তার চোখে। আর কোন কথা বলতে পারলেন না। কান্নার আগে অবশ্য অনেক স্বাচ্ছন্দ্যেই নিজের কথা বলতে থাকলেন নড়াইল এক্সপ্রেস, দলে সুযোগ পাইনি হতাশ হব এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিশ্বাস ছিল খেলতে পারব। নির্বাচকরা যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাতে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা আছে আমার। বিশ্বকাপে খেলতে পারব না। বিশ্বকাপের পরের সিরিজেই ফিরব আশা করছি। তখন ইনজুরি পড়ার পর তার বলা কথা মনে করিয়ে দেয়া হয়। মাশরাফি নিজেই বলেছিলেন আত্মবিশ্বাস আছে বিশ্বকাপ খেলব। এই পেসার বলেন, ‘যখন ২৬ দিন আগে ক্র্যাচে ভর করে হেঁটেছি তখনও বলেছিলাম বিশ্বকাপ খেলব। এখন নেটে ব্যাট করছি। কয়েক স্টেপ হেঁটে বলও করছি। আত্মবিশ্বাস ছিল খেলতে পারব। কিন্তু এখন দলে নেই। এটাই সত্য। কথাগুলো বলছেন বাংলাদেশ সাবেক অধিনায়ক। আর ধীরে ধীরে কথার সুর কমে আসছিল। এক সময় আর কান্না ধরে রাখতে পারলেন না। শেষ পর্যন্ত টিকতে না পেরে কাঁদতে কাঁদতে গাড়িতে চড়ে চলেই গেলেন বাংলাদেশের সেরা পেসার।

পিছনে রেখে গেলেন আবেগ। যেই আবেগের টানে মাশরাফির অনুশীলন দেখতে আসা প্রায় পাঁচ শর মতো ভক্ত কেবল ‘মাশরাফি, মাশরাফি’ বলেই রব উঠালেন। আর মনেপ্রাণে বারবার একটি কথাই বলে গেলেন মাশরাফিকে বিশ্বকাপ দলে চাই-ই চাই। মাশরাফি ছাড়া বিশ্বকাপ কল্পনাই করা যায় না। কিন্তু দল ঘোষণার পর তা সত্য, মাশরাফি বিশ্বকাপ দলে নেই। যে মাশরাফি কখনই কান্না করেননি। চোখ দিয়ে তার অশ্র“ ঝরেনি। বারবার ইনজুরিতে পড়েছেন। প্রতিবারই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই ফিরেছেন। বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ে সেই মাশরাফি এবার কাঁদলেন। জীবনের সবচেয়ে কষ্টের দিনের দেখাও পেলেন।-সূত্র: দৈনিক জনকন্ঠ